লালবাগ কেল্লা-একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ

ঢাকার নাম শুনলে যে কয়টি জায়গার নাম চোখে ভাসে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে লালবাগ কেল্লা। পুরান ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লালবাগ কেল্লা একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ।লালবাগ দূর্গ ১৯ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত।  পূর্বে কেল্লাটির পেছন দিক দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী বয়ে যেত। কিন্তু ১৮৯৭ সালের প্রবল ভুমিকম্পে বুড়িগঙ্গার গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়।



সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র, মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ বাংলার সুবাদার থাকাকালীন ১৬৭৮ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি বাংলায় ১৫ মাস ছিলেন। দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়। 


সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে সুবাদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন। ১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী বিবি মৃত্যু ঘটে। কন্যার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং ১৬৮৪ অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। শুরুতে এই এলাকার নাম ছিল আওরঙ্গবাদ, তবে ১৮৪৪ সালে এই নামটি বদলে হয়ে যায় "লালবাগ", এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে ।

১৯ একর আয়তনের নানা ধরনের ফুল দিয়ে ঘেরা বিশাল এই দূর্গে মোট পাঁচটি স্থাপনা রয়েছে: এগুলো হলো



শাহী মসজিদ

পরিবিবির সমাধি

দেওয়ান-ই-আম

সুবিশাল তোরণসহ আংশিক ধ্বংস প্রাপ্ত উঁচু দুর্গ প্রাচীর

দক্ষিন-পশ্চিমে জলাধার-ফোয়ারা বেষ্টিত ছাদ বাগান

দক্ষিন-পশ্চিম কোনের ৫ টি বুরুজ


দেওয়ান-ই-আম (বিচারালয়)  

লালবাগ কেল্লার এই দালান কে দুটি কাজে ব্যবহার করা হত এক. হাম্মাম খানা বা বাস ভবন ২. দেওয়ান ই আম  বা বিচারালয় হিসেবে। এই দালানের নিচ তালা ছিল বাস ভবন তথা হাম্মাম খানা আর উপরের তলা ছিল কোর্ট তথা দি ওয়ানে আম। শায়েস্তা খাঁ এই ভবনে বাস করতেন এবং এটাই ছিল তার কোর্ট। এখান থেকে তিনি সমস্ত বিচার কার্য পরিচালনা করতেন । সরকার এটিকে জাদুঘর হিসেবে রুপান্তরিত করেছে। এর মধ্যে সংরক্ষন করা হয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত জিনিসপত্র।


পরী বিবির সমাধি

লালবাগ কেল্লার স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম পরী বিবির সমাধি। শায়েস্তা খান তার কন্যার স্মরণে এই মনমুগ্ধকর মাজারটি নির্মাণ করেন। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত মাত্র একটি দরজা। এই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরী বিবির সমাধি। আসলে "লালবাগ কেল্লা" বলতে যেই ছবিটি বেশি পরিচিত সেটি মূলত পরী বিবির সমাধির ছবি।

 মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মুহাম্মদ আজমের সাথে ১৬৬৮ সালের ৩ মে পরী বিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ সালে পরী বিবির অকালমৃত্যুর পর তাকে নির্মাণাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। তার সমাধীস্থলকে চিহ্নিত করে পরী বিবির মাজার নির্মিত হয়। সৌধটির অন্যতম আকর্ষণ হল এর ছাদ ও গম্বুজ। এছাড়া চারপাশে অষ্টকোন বিশিষ্ট ৪টি মিনার এবং মাঝখানে একটি গম্বুজ রয়েছে। স্থাপনাটির অভ্যন্তর ভাগ শ্বেত পাথরে নির্মিত।



তিন গম্বুজওয়ালা দুর্গ মসজিদ (শাহী মসজিদ)

সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম বাংলার সুবাদার থাকাকালীন এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন ১৬৭৮-৭৯ সালে। আয়তাকারে নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি লালবাগ কেল্লার একটি দৃষ্টিনন্দন স্হাপনা। বর্তমানেও মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


বুরুজ

দুর্গ প্রাচীরের দক্ষিনে ৫ টি বুরুজ ছিল। এই বুরুজগুলো দোতলা সমান উচ্চতা-বিশিষ্ট। বুরুজগুলোর মধ্যে ছিল একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ যেটা নিয়ে লোকমুখে নানা ভৌতিক কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে এ গুহায় যে প্রবেশ করে সে আর কখনো ফিরে আসেনা।তবে  বর্তমানে সুড়ঙ্গমুখটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।


ছাদ বাগান

লালবাগের কেল্লাটির অন্যতম আকর্ষণ এই ছাদ বাগান। যদিও এখন এটির সেই আগের সৌন্দর্য নেই, তবুও এই ছাদে গেলে অনুভব করা যায় ছাঁদ-বাগানটি একসময় কতটা দৃষ্টিনন্দন ছিল। এই ছাদ বাগানে উঠে উত্তর দিকে তাকলে অপূর্ব সুন্দর এক লালবাগ কেল্লা দেখতে পাওয়া যায়।

লালবাগের কেল্লা খোলা থাকে সপ্তাহের ৬ দিন। প্রত্যেকদিন সকাল দশটা থেকে একটা এবং এক ঘন্টা বিরতির পর বেলা দুটা থেকে ছ’টা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থী দের জন্য উম্মুক্ত থাকে। শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। সরকারীর ছুটির দিনগুলোতেও জাদুঘর বন্ধ থাকে।

লালবাগ কেল্লা টিকেট মূল্যঃ

জাদুঘরে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্ক বিশ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক দশ টাকা।

পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...