আমাজনের ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণী

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও রহস্যময় বন হচ্ছে আমাজন বন। ব্রাজিলে অবস্থিত এ বন অত্যন্ত দুর্গম। এত দুর্গম যে, এ বনের অনেক জায়গায় আজও মানুষ পৌঁছাতে পারেনি। এখানে ঘন লতাপাতা ও গাছপালা থাকায় দিনের বেলায়ও অনেক স্থান অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। নাম না জানা অসংখ্য গাছপালাসহ বিচিত্র প্রাণী রয়েছে এখানে। এসব প্রাণী দেখতে যেমন বিস্ময়কর, তেমনি ভয়ংকরও বটে। আজকে আপনাদের জানাবো এই গহিন জঙ্গলে বসবাসকারী কিছু ভয়ংকর প্রানী সম্পর্কে 



পয়জন ডার্ট ফগ

ছোট সাইজ এবং রঙ-বেরঙের চমকানো শরীর দেখে অনেকেই নিরীহ বলে মনে করেন ব্যঙকে। এইগুলো দেখতে এতো সুন্দর যে ইচ্ছে হবে হাতে নিয়ে একটু এর শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে। যদি আপনি এমনটা করেন তাহলে যেনে নিন আপনার মৃত্যু অবধারিত।কারণ আমাজনে বসবাসকারী এ ক্ষুদ্র ব্যাঙগুলো পৃথিবীর বিষাক্ত প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম।এর বিষ রয়েছে শরীরের চামড়ার উপরে।এই ক্ষুদ্রাকৃতির উজ্জ্বল রঙের ব্যাঙকে শিকারিদের দূরে রাখার এক সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত।পয়জন ডার্ট ফগ মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, কিন্তু এর বিষ দশজন শক্ত-সমর্থ মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম।


গ্রিন অ্যানাকোন্ডা

আমাজন বলতেই অ্যানাকোন্ডা সাপের কথা চোখে ভাসে। এই অ্যানাকোন্ডারই অরেক জাত হচ্ছে গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। একে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ। আমাজন নদীতেই এদের দেখা মেলে। এদের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়। আর ওজন ২৫০ কেজিরও বেশি।


পিরারুকু

বিশ্বের সুস্বাদু জলের বৃহত্তম মাছ এটি। পিরারুকু নামেও পরিচিত এরা। এদের দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ ফুট হয়। এরা মাংসাশী হয়।


ক্যান্ডিরু 

এটি একটি ছোট প্রজাতির রক্তপিপাসু মাছ। এদের ভ্যাম্পায়ার ফিশ-ও বলা হয়ে থাকে। বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরুতে এদের পাওয়া যায়।


পিরানহা

এই মাছের মধ্যে রেড বেলি পিরানহা খুবই ভয়ানক। আমাজন নদীর ত্রাস বলা হয় এই মাছকে। এরা ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। শিকার করে দলবদ্ধ ভাবে। এদের দাঁতে এত ধার যে নিমেষে বড় কোনো পশুকে সাবড়ে দিতে পারে।এদের কামড় ভীষণ শক্তিশালী। এতটাই শক্তিশালী যে মানুষের মাংস পর্যন্ত ছিঁড়ে খেতে ফেলতে পারবে। এদের নরখাদকও বলা হয়। তবে সাধারণত এরা মরা প্রাণীর মাংসই বেশি খেয়ে থাকে। খুব ক্ষুধার্ত থাকলে এরা একক বা দলবদ্ধভাবে মানুষকে আক্রমণ করে। এজন্যই এরা এত ভয়ংকর।


বুল শার্ক

সাধারণত হাঙরদের দেখা মেলে সমুদ্রে। কিন্তু আমাজন নদীতেও এক ধরনের হাঙ্গর দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম বুল শার্ক। বিশাল দেহী এই প্রাণিটি লম্বায় ১১ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।আর ওজন ৩০০ কেজিও হতে পারে।


ইলেকট্রিক ইল

এরা ক্যাটফিশ প্রজাতির। দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে আট ফুটের মত হয়। এদের শরীরে ৬০০ ভোল্টের মত বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়। 


ব্ল্যাক কেমান

আমাজনে এক ধরনের বিশালদেহী কুমির দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম ব্ল্যাক কেমান। এদের আমাজন নদীর রাজা বলা হয়। এই প্রাণিটি প্রায় ২০ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে।কুমিরের বড় প্রজাতির মধ্যে অন্যতম হলো ব্ল্যাক কেইমেন। 

এদের আমাজনের হ্রদ এবং ধীরে প্রবাহিত হয় এমন নদী ও ঋতুভিত্তিক বন্যায় ভেসে থাকতে দেখা যায়। এদের গায়ে ছোপ ছোপ কালো রং থাকায় খুব সহজে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। 


জাগুয়ার

জাগুয়ার বিরল প্রজাতির মধ্যে অন্যতম একটি প্রানি। সিংহ ও বাঘের পরে সবচেয়ে বড় প্রাণী হলো এই প্রাণী। আমাজনের বন্য প্রাণীদের মধ্যে জাগুয়ার সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক ও হিংস্র

মাংসাশি প্রাণী। এদের খাদ্যতালিকা বেশ বিস্তৃত। এরা বনের নানা প্রাণী খেয়ে থাকে। যদিও এরা মানুষ খায় না, কিন্তু সহজেই মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। জাগুয়ার পানি থেকে শুরু করে গাছের মগডাল পর্যন্ত উঠে শিকার করতে পারে। এরা ব্ল্যাক কেইমেন থেকে শুরু করে হরিণ, কুমিরসহ আমাজনে প্রাপ্ত প্রায় সব প্রাণীই খায়।


ফুটন্ত পানি নদী,

আমাজনের এক বিষ্ময়কর জায়গা হচ্ছে এই ফুটন্ত গরম পানির নদী। অবিশ্বাস্য হলেও এমন নদী আমাজনে রয়েছে। নদীটির পানির তাপমাত্রা  ২৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দৈনন্দিন উদাহারণ দিয়ে বোঝাতে গেলে বলতে হয়, কফি তৈরির গড় তাপমাত্রা ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তাই এই নদীর পানি কতটা গরম তা শারীরিকভাবে কল্পনা করাটাও কঠিন।এই নদীটি পেরুর  ৮২ ফুট (২৫ মিটার) লম্বা এবং প্রায় ২০ ফুট (ছয় মিটার) গভীর।


YouTube Video Link

আমাজনের ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণী,যা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন!!The Most Dangerous Animals in the Amazon

আমাজন বন

আমরা যতই চাঁদ, মহাকাশ জয় করিনা কেন, পৃথিবীর অনেক রহস্যই আজো আমাদের অজানা রয়ে গেছে। আমাজন জঙ্গল এমনই একটি রহস্য। আমাজন জঙ্গল নিয়ে আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর আগ্রহ থাকবেই বা না কেন! এই পুরো জঙ্গলটাই তো একটা রহস্য আর বিষ্ময়ে ভরপুর।

আমাজনকে রেইনফরেস্ট  বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই না যে এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়। বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারনে। প্রচন্ড গরমের কারনে এখানে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি যা আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার অন্যতম কারন।

আমাজান বন আমাজন নদীর অববাহিকায় পৃথিবীর সবচে বড় নিরক্ষীয় বন,যার আয়তন সাড়ে ৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার বা ৩.৪ মিলিয়ন বর্গ মাইল,পৃথিবী জুড়ে যে রেইনফরেস্ট রয়েছে তার অর্ধেকটাই হচ্ছে এই আমাজন বন

যদি এই রেইন ফরেস্টটি একটি দেশ হতো, তাহলে বিশালতার দিক থেকে এটি হতো বিশ্বের নবম বৃহত্তর দেশ। এই বন বাংলাদেশর তুলনায় ৩৮ গুন বড়। বৃটেন ও আয়ারল্যান্ডকে ১৭ বার এই ফরেস্টে রাখা যাবে।দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মোট আয়তনের ৪০% এই বনের দখলে। 

আমাজন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগের ৯টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। এর ৬০ ভাগ ব্রাজিলে, ১৩ ভাগ পেরুতে এবং বাকি অংশ কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গুয়ানা, সুরিনাম এবং এবং ফরাসি গায়ানাতে অবস্থিত।

এ বনে রয়েছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট–পতঙ্গ, ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ,আমাজনে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড় ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব–অণুজীব।

পাশাপাশি আমাজন নদীতে ৩০০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী আছে।আমাজন জঙ্গলের পেরুর অংশে একটি মাত্র গাছে ৪৩ হাজার প্রজাতির পিপড়া পাওয়া গিয়েছে।বিশ্বে খাবারের যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তার  ৮০ শতাংশই আসে আমাজন জঙ্গল থেকে। এছাড়া বর্তমানে যেসব ওষুধ তৈরি হয়, তার প্রায় ২৫ শতাংশ উপাদান আসে আমাজন থেকে।নানা রকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ এই আমাজন।এই বনে প্রায় ১৬০০০ হাজার প্রজাতির ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে।

পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করত, বিশাল এ বনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে এলডোরাডো নামের এক গুপ্ত শহর। ধারণা করা হতো এই শহরটি পুরোটা স্বর্ণের। এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক গল্প থেকে।

সে গল্পে বলা হয়েছে, ‘এলডোরাডো’ নামক সোনায় মোড়ানো শহরটি পাহারা দেয় এক শ্রেণির বিশেষ নারী যোদ্ধারা। যাদের গল্পে ‘আমাজন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে এই ‘এলডোরাডো’ শহর আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু কেউ এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ পায়নি। শহরের সন্ধান না পেলেও স্থায়ী হয়ে যায় সেই নারী যোদ্ধাদের নাম। তাদের নামানুসারেই এই জঙ্গলের নাম হয় আমাজন জঙ্গল।


সম্প্র্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন  অ্যামাজনের গাছের প্রজাতির সংখ্যার তালিকা তৈরি করতে তিনশ বছর লেগে যাবে। এরই মধ্যে জাদুঘরে রাখা ৫ লাখেরও বেশি উদ্ভিদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির গাছের সংখ্যা আবিষ্কৃত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও প্রায় চার হাজার বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মিলতে পারে পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত বনে। ।

অ্যামাজনে আছে মাংসখেকো গাছ। এই গাছের আঠায় প্রজাপতি, ফড়িংয়ের  মতো ছোট প্রাণীরা আটকে যায়। তখন গাছের পাতা ঢেকে গিলে নিতে শুরু করে।আমাজনে আছে ‘লবস্টার ফ্লাওয়ার’। এই ফুলটি লম্বায় দেড় থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।এর একেকটি পাতা ৬ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এ ছাড়া অ্যামাজনে ৩ হাজারেরও বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। আছে রাবার গাছ। অ্যামাজন জঙ্গলের রাবার গাছগুলো একেকটা ১০ তলা বিল্ডিং এর সমান উঁচু হয়ে থাকে। চকো-বীন বা চকলেট উৎপাদনকারী গাছেরও ঠিকানা বনে।

 অ্যামাজনের গভীরে আছে কফি গাছ। দৈত্যাকার পদ্মফুলের দেখা মিলবে এখানে। ভিক্টোরিয়া অ্যামাজোনিকা অ্যামাজনের আরেক বিস্ময়। প্রায় ৩ ডায়ামিটারের এই পদ্মফুল শুধু এই বনেই গহিনেই দেখা মেলে।আছে ফুটন্ত গরম পানির নদী, বিষাক্ত ব্যাগ যার বিষ ১০ জন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে।আছে ভয়ংকর মানুষখেকো পিরানহা,

এই আমাজন বনের ভেতরেই আছে আয়তনে পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম আমাজন নদী। এর প্রায় ১,১০০টি উপনদী আছে যার মধ্যে ১৭টির দৈর্ঘ্য ১০০০ মাইলের বেশি। এ নদ আমাজন অঞ্চলের প্রাণিবৈচিত্র্যের প্রধান উৎস 

বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ মিঠাপানির যোগান দেয় এই নদী। যা মোট পরিমানের ২৫ শতাংশ প্রায়। দীর্ঘতম নদীর দিক থেকে দ্বিতীয় হলেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশী পানি বহন করে এই নদী। বলা হয়ে থাকে, যেখানে আমাজন নদীর পানি সাগরে মিলিত হয় সেখানে সাগরের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরের লবনাক্ত পানিও মিঠা পানি হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে এ নদের মুখ  প্রায় ৩০০ মাইল চওড়া থাকে।

এই বনে ৩০০শ এর বেশি উপজাতি বাস করে। মোট ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০লাখেরও বেশি। তারা বেশির ভাগ ব্রাজিলীয়। এছাড়া তারা পর্তুগীজ, স্প্যানিস ভাষায়ও কথা বলে। এছাড়াও এদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু যাযাবর। এদের বহিঃবিশ্বের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই।

গবেষকদের মতে, এই বন প্রতি বছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। সে কারণে একে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে ডাকা হয়। তবে স্থানীয় অনেক সংস্থার অভিযোগ, সরকারি আইন অমান্য করে ব্রাজিলে  বন উজাড়ের হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির স্পেস এজেন্সির তথ্য মতে, ২০১৯ সালের এপ্রিলের তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে বন উজাড়ের হার ৬৪ ভাগ বেশি। 

ফলাফল স্বরূপ এ বছরের প্রথমার্ধে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে অ্যামাজনের বন উজাড়ের হার ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এদিকে ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট স্পেস রিসার্চের তথ্য মতে, গেল এপ্রিল মাসে প্রায় ৪০৫ বর্গকিলোমিটার বন নিঃশেষ হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে যার পরিমাণ ছিল ২৪৮ বর্গকিলোমিটার। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে উজাড় হয়েছে ১ হাজার ২০২ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল।


YouTube Video Link 

রহস্যময় আমাজন বন | কি আছে এই আমাজনের গহীনে? Amazon: Largest Rainforest In The World |

রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

পৃথিবীতে যতগুলো রহস্যময় স্থান আছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল।সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কথা। আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কোন জাহাজ বা প্লেন গেলে নাকি আর ফিরে আসেনা, এখানে গেলে সবকিছু উধাও হয়ে যায় অথবা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।


বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কোথায়;

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বা শয়তানের ত্রিভুজ একদম ঠিকঠাক আটলান্টিক মহাসাগরের কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। একদল মানুষের মতে, এই ত্রিভুজ এলাকাটির এক প্রান্ত হলো পুয়ের্তো রিকোয়, আরেক প্রান্তে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বাহমা ও ফ্লোরিডার দক্ষিণাংশে, আর অন্য প্রান্তে হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ। কেউ কেউ আবার এসব জায়গার সাথে মেক্সিকো উপসাগরকেও যুক্ত করেন।তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডার দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা।


কেমন করে আবিষ্কৃত হলো এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ? :

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম ১৪৯২ সালে এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন তার জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন।

১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ই. ভি. ডব্লিউ. জোন্স সর্বপ্রথম এ ত্রিভুজ নিয়ে খবরের কাগজে লিখেন। এর দু বছর পর ফেইট ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড “সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর” শিরোনামে একটি ছোট প্রবন্ধ লিখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভূজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন।

১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যগাজিনে লিখা হয়। বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলপতি কে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে- "আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই"। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস The Deadly Bermuda Triangle নামে আর এক কাহিনী লিখেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে।এই কাহিনীতে তিনিই প্রথম বারমুডা-ট্রায়াঙ্গেল শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লিখেন "ইনভিজিবল হরাইজন" (Invisible Horizons) নামের বই। এছাড়া আরও অনেকেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে এই এলাকায় যে অতি প্রাকৃতিক কোন কিছু অস্তিত্ব রয়েছে সেটাই উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।


কেন এত রহস্যে মোরা এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ? :

যখনই কোন বিমান বা জাহাজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এ গিয়েছে , তখনই সে গুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যায় কিংবা সেখান থেকে যদি ফিরেও আসে, তবুও মুখোমুখি হয় অদ্ভুত সব ঘটনার। কিছু ঘটনার কারনে এই রহস্য যেন আরো গভীর হয়ে উঠেছে।

মারি সেলেস্ত নামের একটি মালবাহী জাহাজ, ১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর, নিউইয়র্ক বন্দর থেকে রওনা হয়। অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরও জাহাজটি যখন গন্তব্যে পৌঁছায়নি, তখন শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অনেক চেষ্টার পর জাহাজটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় খুঁজে পাওয়া গেল ভাসমান অবস্থায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো জাহাজে সব মালপত্র, খাবার দাবার সবকিছু একদম অক্ষত ছিল, শুধুমাত্র ১১ জন কর্মী উধাও!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, মার্কিন সরকার ব্রিটিশদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএস সাইক্লোপস নামক একটি জাহাজ পাঠায়। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জাহাজটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছে এসে কোন চিহ্ন না রেখেই উধাও হয়ে যায় এর সাথে থাকা ৩০৬ জন ক্রু নিয়ে।ঠিক একই ভাবে একই জায়গা থেকে ১৯৪১ সালে গায়েব হয়ে যায় ইউএসএস প্রটিয়াস ও ইউএসএস নিরিয়াস নামের দুটি জাহাজ।

তবে জাহাজের ঘটনা গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো, মেরিন সালফার কুইন নামক জাহাজটির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি। ১৫ হাজার টন গলিত সালফার আর ৩৯ জন ক্রু নিয়ে ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে রওনা হয় জাহাজটি। ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখে জাহাজটি যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থান করছিল তখন হঠাৎ রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হয়ে যায়, অথচ অফ হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেও কমান্ডার বলছিলেন “কত সুন্দর আবহাওয়া ! কী চমৎকারভাবে নেভিগেশন চলছে !” এর পরপরই হঠাৎ করেই ৬০০ ফুটের বিশাল আকৃতির জাহাজটি একেবারে গায়েব হয়ে যায়।

এ তো গেল জাহাজের কথা, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে আজ পর্যন্ত যা কিছু হারিয়ে গিয়েছে তার মাঝে সবচেয়ে বিস্ময়কর ও আলোচিত হল “ফ্লাইট নাইনটিন” নামক পাঁচটি বিমানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে, ইউএস নেভির সেরা ৫ জন অ্যাভেঞ্জার বম্বার একটি প্রশিক্ষণ মিশনের জন্য রওনা হয়। রেডিওতে পাইলট বেজের সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলছিলেন লেফটেন্যান্ট চার্লস টেলর। কিন্তু বিমান গুলো যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলএ অবস্থান করছিল তখন কথা বলার একপর্যায়ে, পুরো বাক্য শেষ করার আগেই হঠাৎ চুপ হয়ে যায় সবকিছু, হঠাৎ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সব! সেই ৫ বিমানের সন্ধান আজও মেলেনি।


অবশেষে সমাধান হলো রহস্যের :

বারমুডা রহস্য উদঘাটন করার জন্য বিজ্ঞানীরা কম চেষ্টা করেননি বরং এখনও চলছে গবেষণা। প্রচুর গবেষণার পর ২০১৬ সালের ৪ মার্চ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে, যার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩০০ টির মত জাহাজ আর ৭৫ টির মত বিমান নিখোঁজ হয়েছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে।

তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, এই সব ঘটনার পেছনে অতিপ্রাকৃতিক কোন কারণ নেই। বরং বৈরী আবহাওয়া, মানবঘটিত ভুল আর দুর্ভাগ্যের কারণে আসলে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। তারা যুক্তি দেখান যে, এই অঞ্চল আর দশটা সাধারণ দুর্ঘটনা প্রবণ অঞ্চলের থেকে আলাদা কিছু না।

সত্যি বলতে ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চলাচলের জন্য, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পথেই পড়ে। তাই প্রতিদিনই অনেক জাহাজ আর বিমান কে ওই পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বেশি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার খবর গুলো একটু বেশিই শোনা যায়।

১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয় Larry kusche এর “The Bermuda Triangle Mystery : Solved “ বইটি। যুক্তিতে ভরপুর এই বইটিতে দেখানো হয়েছে যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বেশিরভাগ গল্পই ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত। প্রমাণ সহকারে ল্যারি দেখান যে, বারমুডার বেশিরভাগ প্রচলিত দুর্ঘটনাই আসলে সেখানে নয় বরং অন্য কোথাও ঘটেছে। আর ট্রপিক্যাল সাইক্লোন প্রবণ অঞ্চলে জাহাজডুবি তো স্বাভাবিক ঘটনা।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের অনেকখানি কিনারা করা গেলেও, একে নিয়ে এখনও নতুন নতুন গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়নি। হবেই বা কেন? সাহিত্য আর মিডিয়ার অর্থোপার্জনের অনেক বড় একটা পুঁজি এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। যেহেতু কিছু রহস্যের আজও সমাধান হয়নি, তাই এখনো একে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।


YouTube Video Link 

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের আসল রহস্য !! বাস্তবে কি আছে এখানে? Mystery Behind The Bermuda Triangle.

আমাজন নদী , বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট আমাজন বনের ভেতরেই আছে আয়তনে পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম আমাজন নদী। একটা নদীর দৈর্ঘ্য কতই বা হতে পারে, ১০০০ বা ২০০০ কিলোমিটার? কিন্তু নদীটির দৈর্ঘ্য তার চেয়েও অনেক বেশি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার।এই নদীর প্রস্থ ১৯০ কিলোমিটার বা ১২০ মাইল পর্যন্তও হয়ে যায় কখনও কখনও।এর প্রায় ১,১০০টি উপনদী রয়েছে, যার মধ্যে ১৭টির দৈর্ঘ্য ১০০০ মাইলের বেশি। এ নদী আমাজন অঞ্চলের প্রাণিবৈচিত্র্যের প্রধান উৎস।


 স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজরা নদীটিকে এখন রিও আমাজনাস নামে ডাকে আর ইংরেজি অর্থ হলো আমাজন। এ নদী এতোই দীর্ঘ যে এটি গায়ানা, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া এবং পেরুতেও প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীর মুল উৎস হলো পেরুর অ্যান্ডিস পর্বতমালা। এটি নীলনদের (এটি প্রায় ৬৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ) পরে  বিশ্বের ২য় বৃহত্তম নদী।



আমাজন নদী দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৩০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে তিনটি দেশ বি পাড়ি দিয়ে হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই নদী যে পরিমাণ জল ধারণ করে তা বিশ্বের যেকোন নদীর তুলনায় বেশি। আমাজন নদী যেখানে সাগরে গিয়ে মিশেছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘন ফুট পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে এই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭ মিলিয়ন ঘন ফুট।


এটি গড়ে প্রায় ২,০৯,০০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ড (৭৪,০০,০০০ ঘনফুট/সে) বহন করে সাগররে দিকে নিয়ে যায়, যা এর পরবর্তী সাতটি সম্পূর্ণ ভিন্ন নদীর পানির সমান। আমাজন নদী মোট বৈশ্বিক জলের প্রায় ২০ ভাগ জল সমুদ্রে বহন করে। আমাজনের অববাহিকা হল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পানি নিষ্কাষনকারী অববাহিকা।

বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ মিঠাপানির যোগান দেয় এই নদী। যা মোট পরিমানের ২৫ শতাংশ প্রায়। দীর্ঘতম নদীর দিক থেকে দ্বিতীয় হলেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশী পানি বহন করে এই নদী। বলা হয়ে থাকে, যেখানে আমাজন নদীর পানি সাগরে মিলিত হয় সেখানে সাগরের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরের লবনাক্ত পানিও মিঠা পানি হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে এ নদের মুখ  প্রায় ৩০০ মাইল চওড়া থাকে।

 এ নদের আয়তন আমেরিকার সবচেয়ে বড় নদী মিসিসিপির আয়তনের ১১ গুণ।বর্ষা মৌসুমে এ নদের মুখ আটলান্টিকের সঙ্গে যেখানে মিলিত হয় প্রায় ৩০০ মাইল চওড়া থাকে।এ নদের পানি প্রবাহের গতি এত বেশি যে, আটলান্টিকে প্রবেশের পর তা লোনা পানির সঙ্গে মেশার আগেই সমুদ্রের বুকে ১২৫ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে।৫। প্রতিদিন ১০৬ মিলিয়ন ঘনফুট পলিমাটি আমাজনের পানির সঙ্গে আটলান্টিকে গিয়ে পড়ছে।

নদী মানেই সেখানে মাছের বসবাস। সেই নদী যদি হয় পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম নদী, তাহলে তো মাছের রাজত্ব থাকার কথা। আমাজন নদীতে সত্যিকার অর্থেই মাছের রাজত্ব আছে। এই আমাজন নদীতেই আছে পৃথিবীর ২০ শতাংশ মাছ।

এখন পর্যন্ত এখানে প্রায় ৩০০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই আরও নতুন নতুন প্রজাতির মাছ আবিষ্কার করে চলেছে। আমাজনের অগভীর জলের মাঝে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ অ্যানাকোন্ডা।

শুধু অ্যানাকোন্ডাই নয়, আমাজনে লুকিয়ে থাকা আরেকটি মাংসাশী মাছের নাম পিরানহা। পিরানহা বেশ ভয়ঙ্কর। নদীতে নামা শিকারকে এরা একইসাথে দলবেঁধে আক্রমণ করে। বলা হয় কোনো জীবিত প্রাণী পিরানহার ঝাঁকের আক্রমণের শিকার হলে কিছুক্ষণ পরে সেখানে শুধু ঝকঝকে নতুন কংকাল পাওয়া যায়।

YouTube Video Link:




Dead Sea । মৃত সাগর কি? এখানে কেন মানুষ ভেসে থাকে ?


‘ডেড সি’ নাম শুনলেই গা কেমন ছমছম করে ওঠে! মনে হয়, মৃত লোকদের এক সাগর,যেখানে ভাস লাশ! আসলে বিষয়টি কিন্তু মোটেও ভয়ংকর নয়; বরং ‘ডেড সি’ ভীষণ সুন্দর, ভ্রমণে যাওয়ার জন্য চমৎকার এক জায়গা। এই ‘ডেড সি’র পানি এতটাই ঘন যে ওই পানিতে কেউ চাইলে শুয়েও থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, চাইলে  ওই পানি শুয়ে বইও পড়া যায়। কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে নেট ব্রাউজও করা যাবে।সব কিছু যদি নরমাল হয় তাহলে এর নাম  ‘ডেড সি’ হলো‌ খেন?"

বাংলায় ‘মৃত সাগর’কে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডেড সি’ ।ডেড সির পশ্চিমে পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েল, পূর্বে জর্ডান অবস্থিত।এই সাগরের পানির প্রধান উৎস জর্ডান নদী। মৃত সাগরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার আর গভীরতা ১.২৪০ ফুট। এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে নীচু স্থান বা স্থলভূমি। মৃত সাগর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার বা ১ হাজার ৩৭৮ ফুট নিচে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ২০ লাখ বছর আগে এ সাগরের উৎপত্তি। জর্দান নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হলেও ডেডসি মূলত একটি হ্রদ।


কেন এই সাগরে মানুষ ভেসে থাকে বা ডোবেনা?

জিবুতির আসাল হ্রদের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত হ্রদ।

এর লবণাক্ততা শতকরা ৩০% এবং এটি সমুদ্রের পানির চাইতে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত।উচ্চ লবনাক্ততার দরুন যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে । এই আচরণ যুক্তরাষ্ট্র-এর ইউটাতে অবস্থিত গ্রেট সল্ট লেক এর মত।


স্বাস্থ্যগত প্রভাব

উচ্চ বায়ুমন্ডলীয় চাপ , শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য বেশ উপকারী ডেড সির পরিবেশ।চর্মরোগ সোরিয়াসিস( psoriasis) এর জন্য দীর্ঘসময় সূর্যস্নান বেশ উপকারী । এই অঞ্চলের অতি বেগুনি রশ্মির স্বল্পতা সূর্যস্নানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে । এছাড়া রোগটি নিরাময়ে জন্য মৃত সাগরের লবণও বেশ উপকারী বলে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণায় দাবী করা হয়েছে।


জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহাসাগরের পানির তুলনায় ডেড সির পানিতে মিশে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর পার্থক্য রয়েছে। মৃত সাগরের পানিতে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে।মৃত সাগরের পানির ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। এই সকল উপাদানের কারণে ডেড সি’র পানির প্লবতা শক্তি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের পানির চেয়ে অনেক বেশি। 


প্লবতা শক্তির কারণে এই সাগরে কোনো কিছু ডুবে না। যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে এই হ্রদটি মিশরের মমি তৈরির জন্য, সার উৎপাদনের জন্য পটাশসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই হ্রদ থেকে প্রাপ্ত লবণ ও খনিজ পদার্থ বিভিন্ন প্রসাধনী ও সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


ডেড সি’তে কোনো মাছ নেই, কারণ এই সাগরের পানিতে কোনো মাছ বাস করতে পারে না। তেমনিভাবে এর পাশে জর্ডান নদীতেও কোনো মাছ নেই। এই সাগরের পানিতে কোন উদ্ভিদ বা মাছ বাচতে পারে না বলেই মূলত এই সাগরকে ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। এই সাগরের পানিতে শুধুমাত্র সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায়। ডেড সি তীরবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে উট, খরগোশ, খেঁকশিয়াল এমনকি চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। অতীতে জর্ডান নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে প্যাপিরাস এবং পাম গাছে সমৃদ্ধ বনভূমি ছিল।


মৃত সাগর দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং সত্যি সত্যিই মারা যাচ্ছে।

তিরিশ বছর আগে যখন ইজরায়েলের এনগেডি রিজর্টটি তৈরি হয়েছিল তখন ডেড সির পানি ছিল তার দেয়ালের গা ঘেঁষে.

কিন্তু এখন এই সমুদ্র এত দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে যে তার পানি দেখতে হলে পর্যটকদের জন্য তৈরি ট্রেনে করে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২ কিলোমিটার পথ।কিন্তু কেনো মৃত্যু ঘটছে ডেড সির?কারণটা হলো যে জর্ডান নদী থেকে এখানে পানি আসে, সেই নদীর পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


যদিও ডেডসির সমস্যা সমাধানের একটি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।সেটা হলো, লোহিত সাগর থেকে মরুভূমির ওপর দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করে ডেডসিতে পানি আনা।যেই প্রকল্পটি হবে অনেক ব্যয়বহুল। তবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ডেডসি হয়তো তার প্রান কিছুটা ফিরে পাবে।

YouTube Video Link :

Dead Sea । মৃত সাগর কি? এখানে কেন মানুষ ভেসে থাকে ? Why Does Everyone Float In Dead Sea?

ঘূর্ণিঝড়ের নাম কিভাবে রাখা হয়?

প্রতিবছর বঙ্গপসাগরে বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।এর মধ্যে কিছু ঝড় নিম্নচাপ হয়ে আশপাশের দেশ যেমন ভারত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভূখণ্ডে আঘাত এনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, কিছু ঝড় আবার লঘুচাপ হয়ে সামান্য বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে কেটে যায়।যে নিম্নচাপ গুলো ভূখন্ডে আঘাত আনার সম্ভবনা থাকে তাদেরকে বিভিন্ন নাম দেয়া হয়।এই নাম গুলোর দেখে আমাদের মনে কৌতুহল জাগে কে কিভাবে এই নামগুলো দেয়। আমাদের আজকের এই পর্বে জানবো বঙ্গপসাগরে তৈরি হওয়া ঝড়ের নাম কিভাবে দেয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড় (Cyclone)  ঘূর্ণিঝড় হলো গ্রীষ্মমন্ডলী ঝড় বা বায়ুমন্ডলীয় একটি উত্তাল অবস্থা যা বাতাসের প্রচন্ড ঘূর্ণায়মান গতির ফলে সংঘটিত হয়। এটি সাধারণ  প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের একটি। পৃথিবীর ৩০º উত্তর এবং ৩০º দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। 

দক্ষিণ আটলান্টিক এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর ব্যতীত পৃথিবীর বাদবাকি গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাগরাঞ্চল যে মারাত্মক বায়ুমন্ডলীয় দুর্যোগসমূহ জন্ম দেয় তা সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে গড়ে ৮০টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।   



ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকা আবশ্যক এবং কমপক্ষে ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত এ তাপমাত্রা থাকতে হয়।এজন্য আমরা দেখি সাধারণত কর্কট ও মকর ক্রান্তিরেখার কাছাকাছি সমুদ্র গুলিতে গ্রীষ্মকালে বা গ্রীষ্মের শেষে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। অন্য কোথাও হয় না। 

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটিই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডকে নিয়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্যানেল বা কমেটি আছে যার নাম হচ্ছে 'স্কেপে'।উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করা হয় এই ৮ টি দেশের আগে থেকেই প্রস্তাব করা নামগুলো থেকে।

২০০০ সালে স্কেপের প্রস্তাবানুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা নেওয়া হয়, এবং এখান থেকেই পরবর্তীতে সব ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা শুরু হয়।উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের সকল তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষন এবং পূর্বাভাসের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগকে।তারাই ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওই ৮টি দেশের প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে সবার সাথে সম্বন্বয় করে ঘূর্ণিঝড়ের একটি নাম বেছে নেয়।

একের পর এক সৃষ্ট ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের পাঠানো নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয়। বেশ কিছুদিন আগের ঘূর্ণিঝড় 'তিতলি' নামটি পাকিস্তানের প্রস্তাব করা ছিল।ঘূর্ণিঝড় তিতলির একই সময়ে আরেকটি ঘূণিঝড় হয়েছে ওমানের দিকে, যার নাম লুবান। এই নামটি ওমান নিজেই প্রস্তাব করেছিল। এরপূর্বে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং আইলার নাম রেখেছিল যথাক্রমে ওমান এবং মালদ্বীপ।

অনেক সময় আমাদের মনে হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন মেয়েদের নামে করা হয়। আসলে সব সময় যে মেয়েদের নামে ঝড়ের নাম রাখা হয় তা কিন্তু না। নারী.পুরুষ এবং বস্তুগত নাম মিলিয়েই ঝড়ের নাম রাখা হয়।যেমন-সিডর,মহাসেন,কোমেন, মুরা,রুয়ানো, হুদহুদ ইত্যাদি।

বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব করা নামগুলো হলো - অনিল, অগ্নি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, ফণী। মেয়েদের নামের সাথে মিলাতে গেলে এখানে ৩ টি নাম আছে মেয়েদের।পাকিস্তানের প্রস্তাব করা ৮টি নামের মধ্যে ৭টিই মেয়েদের নাম। যেমন নিলুফার, তিতলী, নার্গিস, লায়লা, কেইলা, ভারদা, নিলাম।এখন বুঝেন মেয়েদের নামে কেন ঝড়ের নাম বেশি হয়। 

ঝড় বা ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে তিনটি তিনটি তথ্য! 

⛔সাইক্লোন:মূলত দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর হতে উৎপন্ন ঝড়কে সাইক্লোন বলা হয়। 

⛔হ্যারিকেন: উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর এবং অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড় সমূহকে বলা হয় হ্যারিকেন।

⛔টাইফুন: চীন ও জাপান সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপন্ন ঝড়কে টাইফুন বলা হয়। চীনা টাই-ফেং শব্দের অর্থ হলো ‘প্রচণ্ড বাতাস’।


পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...