পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও রহস্যময় বন হচ্ছে আমাজন বন। ব্রাজিলে অবস্থিত এ বন অত্যন্ত দুর্গম। এত দুর্গম যে, এ বনের অনেক জায়গায় আজও মানুষ পৌঁছাতে পারেনি। এখানে ঘন লতাপাতা ও গাছপালা থাকায় দিনের বেলায়ও অনেক স্থান অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। নাম না জানা অসংখ্য গাছপালাসহ বিচিত্র প্রাণী রয়েছে এখানে। এসব প্রাণী দেখতে যেমন বিস্ময়কর, তেমনি ভয়ংকরও বটে। আজকে আপনাদের জানাবো এই গহিন জঙ্গলে বসবাসকারী কিছু ভয়ংকর প্রানী সম্পর্কে
পয়জন ডার্ট ফগ
ছোট সাইজ এবং রঙ-বেরঙের চমকানো শরীর দেখে অনেকেই নিরীহ বলে মনে করেন ব্যঙকে। এইগুলো দেখতে এতো সুন্দর যে ইচ্ছে হবে হাতে নিয়ে একটু এর শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে। যদি আপনি এমনটা করেন তাহলে যেনে নিন আপনার মৃত্যু অবধারিত।কারণ আমাজনে বসবাসকারী এ ক্ষুদ্র ব্যাঙগুলো পৃথিবীর বিষাক্ত প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম।এর বিষ রয়েছে শরীরের চামড়ার উপরে।এই ক্ষুদ্রাকৃতির উজ্জ্বল রঙের ব্যাঙকে শিকারিদের দূরে রাখার এক সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত।পয়জন ডার্ট ফগ মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, কিন্তু এর বিষ দশজন শক্ত-সমর্থ মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম।
গ্রিন অ্যানাকোন্ডা
আমাজন বলতেই অ্যানাকোন্ডা সাপের কথা চোখে ভাসে। এই অ্যানাকোন্ডারই অরেক জাত হচ্ছে গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। একে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ। আমাজন নদীতেই এদের দেখা মেলে। এদের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়। আর ওজন ২৫০ কেজিরও বেশি।
পিরারুকু
বিশ্বের সুস্বাদু জলের বৃহত্তম মাছ এটি। পিরারুকু নামেও পরিচিত এরা। এদের দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ ফুট হয়। এরা মাংসাশী হয়।
ক্যান্ডিরু
এটি একটি ছোট প্রজাতির রক্তপিপাসু মাছ। এদের ভ্যাম্পায়ার ফিশ-ও বলা হয়ে থাকে। বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরুতে এদের পাওয়া যায়।
পিরানহা
এই মাছের মধ্যে রেড বেলি পিরানহা খুবই ভয়ানক। আমাজন নদীর ত্রাস বলা হয় এই মাছকে। এরা ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। শিকার করে দলবদ্ধ ভাবে। এদের দাঁতে এত ধার যে নিমেষে বড় কোনো পশুকে সাবড়ে দিতে পারে।এদের কামড় ভীষণ শক্তিশালী। এতটাই শক্তিশালী যে মানুষের মাংস পর্যন্ত ছিঁড়ে খেতে ফেলতে পারবে। এদের নরখাদকও বলা হয়। তবে সাধারণত এরা মরা প্রাণীর মাংসই বেশি খেয়ে থাকে। খুব ক্ষুধার্ত থাকলে এরা একক বা দলবদ্ধভাবে মানুষকে আক্রমণ করে। এজন্যই এরা এত ভয়ংকর।
বুল শার্ক
সাধারণত হাঙরদের দেখা মেলে সমুদ্রে। কিন্তু আমাজন নদীতেও এক ধরনের হাঙ্গর দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম বুল শার্ক। বিশাল দেহী এই প্রাণিটি লম্বায় ১১ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।আর ওজন ৩০০ কেজিও হতে পারে।
ইলেকট্রিক ইল
এরা ক্যাটফিশ প্রজাতির। দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে আট ফুটের মত হয়। এদের শরীরে ৬০০ ভোল্টের মত বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়।
ব্ল্যাক কেমান
আমাজনে এক ধরনের বিশালদেহী কুমির দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম ব্ল্যাক কেমান। এদের আমাজন নদীর রাজা বলা হয়। এই প্রাণিটি প্রায় ২০ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে।কুমিরের বড় প্রজাতির মধ্যে অন্যতম হলো ব্ল্যাক কেইমেন।
এদের আমাজনের হ্রদ এবং ধীরে প্রবাহিত হয় এমন নদী ও ঋতুভিত্তিক বন্যায় ভেসে থাকতে দেখা যায়। এদের গায়ে ছোপ ছোপ কালো রং থাকায় খুব সহজে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে।
জাগুয়ার
জাগুয়ার বিরল প্রজাতির মধ্যে অন্যতম একটি প্রানি। সিংহ ও বাঘের পরে সবচেয়ে বড় প্রাণী হলো এই প্রাণী। আমাজনের বন্য প্রাণীদের মধ্যে জাগুয়ার সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক ও হিংস্র
মাংসাশি প্রাণী। এদের খাদ্যতালিকা বেশ বিস্তৃত। এরা বনের নানা প্রাণী খেয়ে থাকে। যদিও এরা মানুষ খায় না, কিন্তু সহজেই মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। জাগুয়ার পানি থেকে শুরু করে গাছের মগডাল পর্যন্ত উঠে শিকার করতে পারে। এরা ব্ল্যাক কেইমেন থেকে শুরু করে হরিণ, কুমিরসহ আমাজনে প্রাপ্ত প্রায় সব প্রাণীই খায়।
ফুটন্ত পানি নদী,
আমাজনের এক বিষ্ময়কর জায়গা হচ্ছে এই ফুটন্ত গরম পানির নদী। অবিশ্বাস্য হলেও এমন নদী আমাজনে রয়েছে। নদীটির পানির তাপমাত্রা ২৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দৈনন্দিন উদাহারণ দিয়ে বোঝাতে গেলে বলতে হয়, কফি তৈরির গড় তাপমাত্রা ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তাই এই নদীর পানি কতটা গরম তা শারীরিকভাবে কল্পনা করাটাও কঠিন।এই নদীটি পেরুর ৮২ ফুট (২৫ মিটার) লম্বা এবং প্রায় ২০ ফুট (ছয় মিটার) গভীর।
YouTube Video Link
আমাজনের ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণী,যা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন!!The Most Dangerous Animals in the Amazon