প্রতিবছর বঙ্গপসাগরে বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।এর মধ্যে কিছু ঝড় নিম্নচাপ হয়ে আশপাশের দেশ যেমন ভারত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভূখণ্ডে আঘাত এনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, কিছু ঝড় আবার লঘুচাপ হয়ে সামান্য বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে কেটে যায়।যে নিম্নচাপ গুলো ভূখন্ডে আঘাত আনার সম্ভবনা থাকে তাদেরকে বিভিন্ন নাম দেয়া হয়।এই নাম গুলোর দেখে আমাদের মনে কৌতুহল জাগে কে কিভাবে এই নামগুলো দেয়। আমাদের আজকের এই পর্বে জানবো বঙ্গপসাগরে তৈরি হওয়া ঝড়ের নাম কিভাবে দেয়া হয়।
ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) ঘূর্ণিঝড় হলো গ্রীষ্মমন্ডলী ঝড় বা বায়ুমন্ডলীয় একটি উত্তাল অবস্থা যা বাতাসের প্রচন্ড ঘূর্ণায়মান গতির ফলে সংঘটিত হয়। এটি সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের একটি। পৃথিবীর ৩০º উত্তর এবং ৩০º দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত।
দক্ষিণ আটলান্টিক এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর ব্যতীত পৃথিবীর বাদবাকি গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাগরাঞ্চল যে মারাত্মক বায়ুমন্ডলীয় দুর্যোগসমূহ জন্ম দেয় তা সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে গড়ে ৮০টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকা আবশ্যক এবং কমপক্ষে ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত এ তাপমাত্রা থাকতে হয়।এজন্য আমরা দেখি সাধারণত কর্কট ও মকর ক্রান্তিরেখার কাছাকাছি সমুদ্র গুলিতে গ্রীষ্মকালে বা গ্রীষ্মের শেষে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। অন্য কোথাও হয় না।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটিই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডকে নিয়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্যানেল বা কমেটি আছে যার নাম হচ্ছে 'স্কেপে'।উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করা হয় এই ৮ টি দেশের আগে থেকেই প্রস্তাব করা নামগুলো থেকে।
২০০০ সালে স্কেপের প্রস্তাবানুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা নেওয়া হয়, এবং এখান থেকেই পরবর্তীতে সব ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা শুরু হয়।উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের সকল তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষন এবং পূর্বাভাসের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগকে।তারাই ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওই ৮টি দেশের প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে সবার সাথে সম্বন্বয় করে ঘূর্ণিঝড়ের একটি নাম বেছে নেয়।
একের পর এক সৃষ্ট ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের পাঠানো নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয়। বেশ কিছুদিন আগের ঘূর্ণিঝড় 'তিতলি' নামটি পাকিস্তানের প্রস্তাব করা ছিল।ঘূর্ণিঝড় তিতলির একই সময়ে আরেকটি ঘূণিঝড় হয়েছে ওমানের দিকে, যার নাম লুবান। এই নামটি ওমান নিজেই প্রস্তাব করেছিল। এরপূর্বে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং আইলার নাম রেখেছিল যথাক্রমে ওমান এবং মালদ্বীপ।
অনেক সময় আমাদের মনে হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন মেয়েদের নামে করা হয়। আসলে সব সময় যে মেয়েদের নামে ঝড়ের নাম রাখা হয় তা কিন্তু না। নারী.পুরুষ এবং বস্তুগত নাম মিলিয়েই ঝড়ের নাম রাখা হয়।যেমন-সিডর,মহাসেন,কোমেন, মুরা,রুয়ানো, হুদহুদ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব করা নামগুলো হলো - অনিল, অগ্নি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, ফণী। মেয়েদের নামের সাথে মিলাতে গেলে এখানে ৩ টি নাম আছে মেয়েদের।পাকিস্তানের প্রস্তাব করা ৮টি নামের মধ্যে ৭টিই মেয়েদের নাম। যেমন নিলুফার, তিতলী, নার্গিস, লায়লা, কেইলা, ভারদা, নিলাম।এখন বুঝেন মেয়েদের নামে কেন ঝড়ের নাম বেশি হয়।
ঝড় বা ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে তিনটি তিনটি তথ্য!
⛔সাইক্লোন:মূলত দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর হতে উৎপন্ন ঝড়কে সাইক্লোন বলা হয়।
⛔হ্যারিকেন: উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর এবং অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড় সমূহকে বলা হয় হ্যারিকেন।
⛔টাইফুন: চীন ও জাপান সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপন্ন ঝড়কে টাইফুন বলা হয়। চীনা টাই-ফেং শব্দের অর্থ হলো ‘প্রচণ্ড বাতাস’।
No comments:
Post a Comment