আদম পাহাড়, শ্রীলঙ্কা

 আল্লাহতায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠানোর পর তিনি ফেরেশতাদের সাহায্যে বর্তমান শ্রীলঙ্কার ‘সেরেনদ্বীপে’ আসেন। বঙ্গোপসাগর ও ভারত সাগরের মাঝামাঝি স্থানে দ্বীপটি অবস্থিত। ২৫/৩০ মাইল দূর থেকে পাহাড়টি দেখা যায়। এ পাহাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর সবচেয়ে উঁচু স্থানটিকে অবস্থিত পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) এর পদচিহ্ন।পাহাড়টি এ্যাডামস পিক নামে এখন পরিচিত। 


এই জায়গাটি খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম এই চার ধর্মের অনুসারীদের কাছে অতি পবিত্র স্থান। এই পায়ের ছাপ  এর দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি গৌতম বুদ্ধের, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি তাদের দেবতা শিবের, এবং মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন এটি পৃথিবীর প্রথম মানব আদম -এর।

মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাস পৃথিবীর প্রথম মানুষ মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের কারণে আল্লাহ কর্তৃক স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন এবং এখানে প্রথম পৃথিবীতে নামেন। মুসলমানদের মতে আদম ৯০ ফুট লম্বা ছিলেন। আদম পৃথিবীতে এসে চরম অণুতপ্ত হয়ে পড়েন এবং তার ভুলের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থণা করতে থাকেন। তখন তিনি ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ এক পায়ে হাজার বৎসর দাড়িয়ে থাকেন এবং কান্না-কাটি করতে থাকেন। তার ফলস্বরূপ এখানে তার পবিত্র পায়ের পদচিহ্ন এর দাগ পড়ে যায়।থিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর নাম জানো, তাঁর নামেই নামকরণ হয়েছিল এই পাহাড়ের। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, হজরত আদম (আ.)-এর ডান পায়ের চিহ্নটা কেবলামুখী অর্থাৎ পবিত্র কাবার দিকে ফেরানো।  

বৌদ্ধ ধর্মমতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পায়ের ছাপটি আবিষ্কার হয়। আবিষ্কৃত হবার পর পদচিহ্নের চারপাশে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এই চূড়ার উচ্চতা ৭৩৫৯ ফুট বা ২২৪৩ মিটার। চূড়াটির চারপাশে সবুজের বিপুল সমারোহ ও আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট নদী ও ঝরণা।

এই স্থানে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো পড়ে না আবার মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টিও সেখানে পড়ে না।এই পায়ের চিহ্নটি সংরক্ষণের জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার একটি চার কোণা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছে। সেখানে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি শক্ত লোহার গেট।

পাহাড়টি সুউচ্চ হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছানো খুবই কষ্ট সাধ্য। সেখানে পৌছাতে হলে প্রথমে নৌকায় চড়ে কিছু পথ যেতে হয়, তারপর পায়ে হেঁটে উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য পাহাড়ের গা বেয়ে তিনটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়টির অনেকাংশ সবুজ গাছে ঢাকা থাকার কারণে এই পাহাড়ে রয়েছে অনেক বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়।এ পাহাড়ে আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছার পথ গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪ হাজার ধাপ। এখানে পৌঁছতে সময় লাগে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা।  

বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব। কারণ, এ পাহাড় তখন লুকিয়ে যায় মেঘের ভেতর। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে অদৃশ করে ফেলে পাহাড়টাকে।

বিশ্বের যেসব নামকরা পর্যটক এই চূড়াটি ভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলো। ১৫০৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। সেই থেকে এই পাহাড়ের নাম আদম পাহাড়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই পায়ের ছাপটি  অবিকল রয়ে গেছে।


YouTube Link: দম আঃ এর পায়ের চিহ্ন। আদম পাহাড় শ্রীলঙ্কা । আদম পাহাড়ের ইতিহাস।

পবিত্র কাবা শরিফের ইতিহাস

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান  মসজিদুল হারাম।এই মসজিদের কেন্দ্রেই রয়েছে পবিত্র কাবা শরিফ। কাবা শরিফ মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যেদিকে মুখ করে মুসলিমরা সালাত আদায় করে। হজ বা উমরা পালনের সময় মুসলমানরা কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ করে।

মসজিদুল হারাম, মক্কার হারাম এলাকায় কাবাঘরকে কেন্দ্র করে নির্মিত মসজিদ। এই এলাকাকে হারাম বলার কারণ হচ্ছে, ইসলাম আগমনের অনেক বছর আগে থেকেই এই এলাকায় হত্যাসহ যেকোন অপকর্ম নিষিদ্ধ ছিল।


হারাম এলাকার প্রাণকেন্দ্র হলো মসজিদুল হারাম, আর এই মসজিদের কেন্দ্রস্থলে কালো বর্ণের ঘরটিই হলো কাবা শরীফ শরিফ বা মহান আল্লাহর সম্মানিত কাবাঘর।


পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৬ নাম্বার আয়াতে বলেন, “নিশ্চই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত”।

এরপর হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার আদেশে কাবা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন।

হজরত নূহ (আ.)-এর সময় সংঘটিত মহাপ্লাবনের পর হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে পুনরায় কাবাঘর সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেন। ইবরাহিম (আ) কাবার পূর্ব কোণে হাজরে আসওয়াদ পাথর স্থাপন করেছিলেন, যা হাদিস অনুযায়ী বেহেশত থেকে আগত। এই পাথর একসময় দুধের মত সাদা ছিল কিন্তু মানুষের গুনাহ শোষণ করার কারণে এটি কালো হয়ে গিয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবিত অবস্থায় ৬ হিজরীতে আব্দুলাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। এরপর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন।

৪১৬ হিজরিতে বাদশাহ ফাহদ কাবার বাইরের দেয়াল সংস্কার করেন। ১৪১৭ হিজরিতে তিনি কাবাগৃহের ছাদ, খুঁটি, দেয়ালসহ সব কিছু সংস্কার করে নতুন ধাঁচে ঢেলে সাজান। 

এর পর থেকে নির্মাণের পরিবর্তে কাবা শরিফের সংস্কারকাজ অব্যাহত রয়েছে। ৯১ হিজরিতে উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক কাবাগৃহে ব্যাপক সংস্কার করেন।তাঁর এ নির্মাণকাজকে কাবার সর্বশেষ নির্মাণ বা সর্বশেষ সংস্কার হিসেবে অভিহিত করা হয়। এযাৎ কাবা শরিফ ১২ বার সংস্কার করা হয়েছে। 

সৌদি গেজেট মতে, কাবাগৃহের উচ্চতা পূর্ব দিক থেকে ১৪ মিটার।  পশ্চিম দিক থেকে ১২.১১ মিটার। উত্তর দিক থেকে ১১.২৮ মিটার। দক্ষিণ দিক থেকেও ১২.১১ মিটার।

ভূমি থেকে কাবার দরজার উচ্চতা ২.৫ মিটার। দরজার দৈর্ঘ্য ৩.০৬ ও প্রস্থ ১.৬৮ মিটার। বর্তমান দরজা বাদশা খালেদের উপহার, যা নির্মাণে প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। 

কাবা শরীফের সিলিংকে তিনটি কাঠের পিলার ধরে রেখেছে। প্রতিটি পিলারের ব্যাস ৪৪ সে.মি.। 

পিলারের কাঠগুলো এতই শক্ত প্রকৃতির যে, এর মতো বিকল্প কাঠ পাওয়া যায় না। এগুলো প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রা:) স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এ কাঠনির্মিত খুটির বয়স ১ হাজার ৩৫০ বছর।

কাবা শরিফের ভেতরের দেয়ালগুলো সবুজ ভেলভেটের পর্দা দিয়ে আবৃত। এই পর্দাগুলো প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা হয়।

কাবা ঘরের গিলাফের রঙ কখনোই কালো ছিল না। বর্তমানে কাবা ঘরের গিলাফের রঙ কালো ব্যবহার করা হয়। আব্বাসীয় খলিফাদের পরিবারের প্রিয় রঙ ছিল কালো। তাদের সময় থেকে কাবা ঘরে কালো গিলাফ পরানো হয়। এর আগে কাবা ঘরে সবুজ, লাল ও সাদা রঙের গিলাফ ব্যবহার করা হতো।

কাবা ঘরের ভেতরে যে কোনো দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করা যায়। তাতে কোনো বিধি-নিষেধ নেই।আবার কাবা ঘরের বাইরে যে কোনো পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যায়।

দেয়ালের ওপরের অংশে রয়েছে সাঁটানো সবুজ রেশমি কাপড়। তাতে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত স্বর্ণখচিত করে অঙ্কিত। বছরে দুইবার কাবাঘর পরিষ্কার করা হয়। পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয় জমজমের পানি, খাঁটি গোলাপ জল এবং উন্নত মানের সুগন্ধি উদ। কাবার গিলাফ তৈরি করা হয় ৬৭০ কেজি রেশম দিয়ে। গিলাফের ওপর দিকে সোনার প্রলেপকৃত রুপার চিকন তার দিয়ে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফিখচিত করা।

 মোট পাঁচ টুকরা গিলাফ বানানো হয়। চার টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি কাবার দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো মজবুতভাবে সেলাইযুক্ত। 

মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা ঘরের চাবি বনি শায়বাহ গোত্রের ওসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে হস্তান্তর করেন। বংশ পরম্পরায় এখনো তারাই কাবা ঘরের চাবির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

কাবাঘরের ৪টি কোণের আলাদা নাম আছে

(১) হাজরে আসওয়াদ (২) রুকনে ইরাকী (৩) রুকনে শামী ও (৪) রুকনে ইয়ামেনী।


১৯৪১ সালে সপ্তাহব্যাপী প্রবল বৃষ্টির কারণে কাবা চত্বরসহ মক্কার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। আর সে সময় কাবা ঘর জিয়ারতকারীদের কেউ কেউ সাঁতার কেটে কাবা ঘর তাওয়াফ করেন। সেসময় সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির কারণে কাবা চত্বরে প্রায় ৬ ফট পানি জমে যায়।

কাবা ঘরের পাশেই আছে মাকামে ইব্রাহিম নামের একটি অলৌকিক পাথর। কাবা শরিফের পূর্ব-উত্তর পাশে সোনালি বেষ্টনীতে পায়ের ছাপযুক্ত যে পাথরখণ্ডটি সংরক্ষিত রয়েছে তা হলো মাকামে ইব্রাহিম। মাকাম অর্থ স্থান বা দাঁড়ানোর জায়গা। এ পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘরের প্রাচীর গাঁথতেন

বেহেশতি একটি পাথর হলো হাজরে আসওয়াদ। আসওয়াদ মানে কালো, হাজর মানে পাথর। এই কালো পাথরটি হজরত আদম (আ.) জান্নাত থেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এই পবিত্র পাথরের দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি। বর্তমানে এটি ছোট ছোট ১২টি খণ্ডে বিভক্ত, এর ৮ টুকরা দৃশ্যমান। বর্ণিত আছে, এটি কিয়ামতের দিন তাকে স্পর্শকারী বা চুম্বনকারীর পক্ষে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। 

অনেকদিন ধরেই কাবা ঘরের বিভিন্ন ধরনের বিশেষ তালা ও চাবির ব্যবহার হয়ে আসছে। দীর্ঘ দিন পরপর পরিবর্তন করা এসব তালা কিংবা চাবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত কাবা শরিফে ৫৮টি তালা-চাবির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়।যার মধ্যে তুরস্কের সাবেক রাজধানী ও প্রাচীন শহর ইস্তাম্বুলে তোপকাপি জাদুঘরেই রয়েছে ৫৪টি চাবি।

প্রথমে কাবা শরিফ কিবলা ছিল না। বরং প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। মদীনায় হিজরতের ষোল মাস পর কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী কিবলা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের কিবলা অর্থাৎ কাবা শরীফ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়।

কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতায়াল্লির দায়িত্বে থাকেন


YouTube Video Link

পবিত্র কাবা : ইতিহাস ও অজানা তথ্য |

তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার এর পরিচয়

তালেবানের কাবুলে প্রবেশের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে তাজিকিস্তানে চলে গেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর মধ্য দিয়ে অবশেষে পতন হলো আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। বিনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। মাত্র ৪৫ মিনিটের বৈঠক, তার পরেই ক্ষমতার হস্তান্তর হল।


আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই তালেবানের পক্ষ থেকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নাম শোনা যাচ্ছে। অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি সংগঠনটি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, মোল্লা আবদুল গনিই তালেবান সরকারের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক জীবন এবং তালেবান ক্যারিয়ার:

মোল্লা আবদুল গনি বা মোল্লা ভাই ১৯৬৮ সালে আফগানিস্তানের ওরুজগান প্রদেশের উইটমাক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ এবং সোভিয়েত সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদিনে কাজ করা এই নেতা কান্দাহার প্রদেশের একটি মাদ্রাসাও পরিচালনা করতেন। যেখানে তার সাথে ছিল সাবেক কমান্ডার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকারী মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যমের মতে, ওমর এবং বড়দার মূলত ভায়রা-ভাই।পরবর্তিতে তালেবান প্রতিস্ঠা করতে   মোল্লা মোহাম্মদ ওমর সহোযোগিতা করেছিল মোল্লা আবদুল গনি।

বারাদারকে ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবান শাসনের সময় বিভিন্ন পদে দেখা যায়।যার মধ্যে- হেরাত এবং নিমরুজ প্রদেশের গভর্নর, এবং পশ্চিম আফগানিস্তানের কর্পস কমান্ডার উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি নথিতে তাকে সাবেক সেনাপ্রধান এবং কাবুলের সেন্ট্রাল আর্মি কোরের কমান্ডার হিসেবে তালিকাভুক্ত দেখায়, যদিও ইন্টারপোলের ভাষ্যমতে তিনি হলেন তালেবানদের ডেপুটি মন্ত্রী।

আবদুল গনি বারাদার ১৯৯৪ সাল থেকে তালেবান আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন, তবে তার কয়েক বছর পরেই ২০০১ সালে আমেরিকা আফগানিস্তান দখল নেয় । তারপর থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই শুরু করে তালেবানরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন এই মোল্লা আবদুল গনি। তিনি একইসাথে ছিলেন আফগানিস্তানে তালেবানের সামরিক কর্মকাণ্ডের অধিনায়ক।

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন তালেবান সরকার পতনের পর তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের করাচী শহরের কাছে একটি অভিযানে পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও যুক্তরাষ্ট্রের (সিএআই) এর একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেফতার করে। সে সময় গ্রেপ্তারের পর শিকল পরিয়ে তাকে কারাগারে নেয়ার ছবিটি নানান আলোচনা- সমালোচনার জম্ম দেয়।

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রই তার মুক্তির জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ জানায় এবং তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে পাকিস্তান তাকে মুক্তি দেয়।

তথ্যমতে, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল গনি এ সময় ইসলামাবাদ সফর করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরবর্তীতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেন যে সত্যিকার অর্থে আবদুল গনি বরাদারকে এই "উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পর" মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এমনকি ২০১৮ সালের ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কাতার সরকারের অনুরোধে আবদুল গনি বরাদারকে মুক্তি দেয়।

পাকিস্তান ভিত্তিক বিশ্লেষক জাহিন হুসেইন আল জাজিরাকে বলেন, "এই মুক্তি এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সাথে সরাসরি কথা বলা শুরু করেছে, মনে হচ্ছে এই মুক্তির জন্য সময়টা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।"

মূলত, এই কারামুক্তির পরপরই আবদুল গনিকে তালেবানের রাজনৈতিক বিষয়ক নেতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসাথে তাকে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের কূটনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালেবানের যে চুক্তি হয় তাতেও স্বাক্ষর করেন আবদুল গনি বারাদার। 


YouTube Video Link:

তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার এর পরিচয়

স্টাচু অব লিবার্টি

আমেরিকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শনগুলো একটি স্টাচু অব লিবার্টি। শত বছর ধরে আটলান্টিক সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। আমাদের আজকের এই পর্ব স্টাচু অব লিবার্টি নিয়ে।

যলিও আমরা এই স্থাপনাটিকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি জানি, কিন্তু এর আসল নাম কিন্তু স্ট্যাচু অব লিবার্টি না। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত একে 'লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে এর নাম হয়স্ট্যাচু অব লিবার্টি “


রোমান দেবী লিবার্টাসের আদলে এক নারীর অবয়ব মূর্তিটি হচ্ছে স্ট্যাচু অব লিবাটি। এই ভাষ্কর্যটির বাইরের নকশা করেছেন ফরাসি স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি এবং এর ভেতরের নকশা করেছেন আরেক ফরাসি স্থপতি গুস্তাভ আইফেল,যাকে আমরা আইফেল টাওয়ারের নকশাকারী হিসেবে জানি।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি আসলে ছিল ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে মার্কিনীদের জন্য একটি উপহার। ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলা আমেরিকান বিপ্লবের সময়ে ব্রিটেনের কাছ থেকে আমেরিকার স্বাধীনতার সংগ্রামে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। সেই সহযোগিতার স্মৃতি হিসেবে আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে ১৮৮৬  ফ্রান্স এই ভাস্কর্যটি আমেরিকাকে উহার দেয়।

আমেরিকার নিউইয়র্ক লিবার্টি দ্বীপে স্টাচু অব লিবার্টি স্থাপন করা হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বহু ইউরোপীয় অভিবাসী নিউইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রবেশ করছিল। এই ভাষ্কর্যটি সেইসব অভিবাসীদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাত।

বর্তমানে লিবার্টি আইল্যান্ড নামে পরিচিত এই দ্বিসটির পূর্ব নাম ছিল “বেডলে আইল্যান্ড”,১৯৫৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করা হয়।।প্রতিবছর প্রায় ৩০-৪০ লাখ মানুষ এই ভাস্কর্য দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসেন।

একহাতে একটি মশাল এবং অপরহাতে একটি বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে “স্ট্যাচু অব লিবার্টি” নামের এই স্থাপনাটি। স্ট্যাচু অব লিবার্টি একহাত দিয়ে যে বইটি ধরে রেখেছে সেই বইয়ের ওপরে লেখা আছে একটি তারিখ, আর তা হল “৪ জুলাই, ১৭৭৬”। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার তারিখ।এই তারিখেই ব্রিটিশ শাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছিল।তার পায়ের পায়ে একটি ভাঙ্গা শিকল দেখা যায়, যেটা তৎকালীন সময়ের দাসপ্রথা বিলুপ্তির প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

শুরু থেকেই স্ট্যাচু অব লিবাটি কে নিউইয়কের হাডসন নদীতে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। ভাষ্কর্যটির স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি মূর্তিটি নকশা করেছিল মিশরের সুয়েজ খালের পাড়ে স্থাপনের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মিশর এই ভাষ্কর্য নির্মানের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, পরবর্তীতে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় স্থাপন করা হয়।

স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রায় সম্পূর্ণ মূর্তিটিই তৈরী করা হয়েছে ফ্রান্সে। লোহাড় ফ্রেমের উপর তামার পাত দিয়ে, ৩০০ টি খন্ডে তৈরী হয়েছে ভাস্কর্যটি। ১৮৮৫ সালে ২১৪ টি বাক্সে ভরে জাহাজে করে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় পাঠানো হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর, তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ভাষ্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

 স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রথম দিকে দেখতে সবুজ রঙের ছিল না, এমনকি বর্তমানের এই সবুজ রংও করা হয়নি। ভাস্কর্যটি তামার তৈরী হওয়ায়, শুরুতে এর রং ছিল তামাটে। দীর্ঘকাল ধরে, এর চারদিকে থাকা সমুদ্রের জলীয়বাষ্পের সাথে তামার বিক্রিয়ার কারণে মূর্তিটি সবুজ রং ধারন করছে। এটি এক বিশেষ ধরনের মরিচা।

৯৩ মিটার লম্বা এই ভাস্কর্যটির ওজন হল প্রায় ২০৪ মেট্রিক টন।এই ভাস্কর্যের ভিতরে একটি সিঁড়ি রয়েছে, এই ৩৫৪টি সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে মাটি থেকে একদম ওপরের মশাল পর্যন্ত যাওয়া যায়। এই ভাস্কর্যের উচ্চতা বাইশ তলা উঁচু বিল্ডিং এর সমান, বেদি থেকে ভাস্কর্যের মশালের শিখর পর্যন্ত উচ্চতা ৯৩ মিটার বা ৩০৬ ফুট, এর মোট ওজন ২২৫ টন। ভাস্কর্যের মুকটের কাছে রয়েছে ২৫ টি জানালা, যা অনেকটা ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে কাজ করে।

এই ভাস্কর্যের গায়ে যখন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস আছড়ে পড়ে তখন ভাস্কর্য ্য্ ইঞ ও ভাস্কর্যটি ৩ইনঙি ও টর্চটি ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত নড়তে থাকে।

সেসময়ে এই ভাস্কর্যটি তৈরি করতে প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ খরচ হয়েছিল, যার বর্তমান মূল্য দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বানাতে ফ্রান্সের খরচ হয়েছিল আড়াই লাখ মার্কিন ডলার।

এই ভাস্কর্যটি যে স্থাপনার ওপর বসানো হয়েছে সেটা তৈরি করতে আমেরিকার খরচ হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ডলার

স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ঘিরে দু’টি দুঃখজনক ঘটনা রয়েছে, আর সেটা হল এপর্যন্ত দুইজন মানুষ স্ট্যাচু অফ লিবার্টি থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রথম ঘটনাটি ১৯২৯ সালে ও দ্বিতীয় আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৩২ সালে। বর্তমানে এই ভাস্কর্যের সিঁড়িটি জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বন্ধ রাখা হয়েছে।


YouTube Video Link

আইফেল টাওয়ার

  শিল্প সাহিত্য ও ঐতিহ্যের নগরী হিসেবে খ্যাত ফ্রান্স। ফ্রান্সের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হচ্ছে প্যারিস।

প্যারিসের কথা শুনলেই সবার আগে মাথায় আসে আইফেল টাওয়ারের নাম। বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা হচ্ছে বুর্জ খলিফা। আচ্ছা বলুন তো উনিশ শতকে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা কোনটি ছিল। উত্তর হচ্ছে আইফেল টাওয়ার।প্যারিসের ঐতিহ্যবাহী শেন নদীর পাড়ঘেষা চ্যাম্প ডি মার্সে তে অবস্থিত এই স্থাপনাটি।

আমাদের আজকের এই পর্ব আইফেল টাওয়ারকে নিয়ে। আজকে আপনাদের বলবো আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস ও এর অজানা তথ্য,হতে পারে যা আপনি আগে কখনো শুনেননি।


১৮৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার যখন ফরাসী বিপ্লবের স্মৃতিকে একটি নিদর্শনে ধরে রাখার জন্যই আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 

এই টাওয়ার নির্মাণ কাজের জন্য বিখ্যাত সেতু প্রকৌশলী আলেকজান্ডার গুস্তাভ আইফেলকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি পেটা লোহার দিয়ে ৩০০ মিটার বা ৯৮৪ ফুট উঁচু এই মিনারটি নির্মাণ করেন। তার নামানুসারেই এই মিনারটির নাম রাখা হয় ‘আইফেল টাওয়ার’।এটি বানানোর জন্য মোট ৭৮ লাখ ফ্রাঙ্ক খরচ হয়েছিল,যার বড় অংশটা তিনি নিজের পকেট থেকে দিয়েছিলেন৷ এমনকি সময়মত কাজ শেষ করার জন্য নিজের সম্পত্তি বন্ধকও রেখেছিলেন তিনি।

আইফেল টাওয়ার তৈরির কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি, আর সবমিলিয়ে কাজ শেষ হয় ১৮৮৯ সালের ৩১ মার্চ। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছে সর্বমোট ২ বছর ২ মাস ৫ দিন, এই টাওয়ার তৈরিতে করতে কাজ করেছেন ৩০০ জন শ্রমিক। তারা ১৮,০৩৮ টুকরো রড আয়রন ও ২৫ লাখ নাটবোল্ট সংযোজন করেন। নির্মাণ শেষে এর ওজন দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার টন এবং উচ্চতা ৯৮৪.২৫ ফুট। 

আইফেল টাওয়ার দু’একর জমি জুড়ে স্থাপিত। টাওয়ারটির চৃড়া থেকে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যায়। অন্যভাবে বলতে গেলে ৭৫ কিলোমিটার দূর থেকে আইফেল টাওয়ারের চূড়া দেখা যায়। অবশ্য এতো উচূতে উঠতে হলে আপনাকে ১৬৬৫টি সিঁড়ি পার করতে হবে।  উদ্বোধনের ২০ বছর পর্যন্ত এই আইফেল টাওয়ারই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা৷

শুরুতে আইফেল টাওয়ারকে মনে করা হতো শহরের সবচেয়ে খারাপ স্থাপনা। এবং এই টাউয়ার নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলনো হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে এই আইফেল টাওয়ারটাই শহরের প্রতীক হিসেবে জায়গা করে নেয়।

 মোট ২০ হাজারটি বাল্ব,৩৩৬টি প্রজেক্টর আলোকিত করে রাখে এই টাওয়ারকে। আইফেল টাওয়ার সবচাইতে সুন্দর দেখায় রাতের বেলায়। তবে সারাত আয়ফেল টাওয়ার  আলোকিত হয়ে থাকে না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রতি ঘণ্টায় ১ বার ৫ মিনিটের জন্য ঝলমল আইফেল টাওয়ার যা চলে রাত ১ টা পর্যন্ত।

 প্রতি ৭ বছর পর পর আইফেল টাওয়ারে রঙ করা হয়।এই রঙের কাজ চলে প্রায় আঠারো মাস ধরে, তবে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, এই ১৮ মাসে একদিনের জন্যও জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকে না আইফেল টাওয়ার।‌‌ ৬০ টন রং লাগে আইফেল টাওয়ারের জন্য। এ পর্যন্ত ১৮ বার আইফেল টাওয়ার রং করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আইফেল টাওয়ার রং করতে ব্যয় হয় প্রায় ৪ মিলিয়ন ইউরো। 

১৯০৯ সালে এর চুড়ায় বসানো হয় একটি বেতার এন্টেনা। এতে টাওয়ারের উচ্চতা আরও ২০.৭৫ মিটার বা ৬৬ ফুট বেড়ে যায়। সেই থেকে আইফেল টাওয়ারকে‌  Radio Transmision‌ জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। পরে আইফেল টাওয়ারে একটি টিভি এন্টেনাও বসানো হয়েছে। বর্তমানে এই টাওয়ারে ১২০টি আ্যন্টেনা রয়েছে।

রড আয়রন দিয়ে নির্মিত হওয়ার কারণে টাওয়ারটির ধাতব পদার্থ বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড়-ছোট হয়। উষ্ণতার কারণে গ্রীষ্মকালে এর দৈর্ঘ্য বৃ্দ্ধি পায়। গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়লে এর আকার বেড়ে যায় প্রায় ৬.৭৫ ইঞ্চি। ঝড়ো হাওয়ায় এটি সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাঁপতে পারে!

টাওয়ারটির ভেতরে অবস্থিত দুটি রেস্তোঁরা হলো লা 58 ট্যুর আইফেল এবং লা জুল ভার্ন।এখানে একটি সংবাদপত্র অফিস আছে। এছাড়াও এতে রয়েছে পোস্ট অফিস, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার ও একটা থিয়েটার।

প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ টাওয়ারটি বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্যারিসে নাৎসি বাহিনীর আগমনের আগে এর লিফটের তার কেটে দিয়েছিল মিত্র বাহিনী। নাৎসিরা যেন টাওয়ারটি ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

যে আইফেল টাওয়ার নির্মান করা হয়েছিল মাত্র ২০ বছরের জন্য,যে আইফেল টাওয়ার নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ আন্দোলন হয়েছিল,সেই আইফেল টাওয়ার আজকে বিশ্ব সেরা স্থানগুলোর একটি।প্রতিবছর এই টাওয়ার দেখতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ আসে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ১৮৮৯ সাল থেকে এখন অবধি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন পর্যটক আইফেল টাওয়ারে এসেছেন। ১৯৯১ইউনাস্কো আয়ফেল টাউয়ারকে  বিশ্ব ঐতৈহ্যের স্থান হিসেবে সিক্রৃতি দেয়।

বর্তমান বিশ্বে আইফেল টাওয়ারের থেকে উঁচু টাওয়ার বা স্থাপনা অনেক রয়েছে। তবে আইফেল টাওয়ার এখনো পৃথিবীর সেরা স্হাপনা হিসেবে ধরা হয় এর নিজস্ব ইতিহাস ও বৈচিত্র্যে কারণে। আর তাই বিশ্ব মানচিত্রে আইফেল টাওয়ার এখনও অনন্য।

YouTube Video Link: 

পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...