আল্লাহতায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠানোর পর তিনি ফেরেশতাদের সাহায্যে বর্তমান শ্রীলঙ্কার ‘সেরেনদ্বীপে’ আসেন। বঙ্গোপসাগর ও ভারত সাগরের মাঝামাঝি স্থানে দ্বীপটি অবস্থিত। ২৫/৩০ মাইল দূর থেকে পাহাড়টি দেখা যায়। এ পাহাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর সবচেয়ে উঁচু স্থানটিকে অবস্থিত পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) এর পদচিহ্ন।পাহাড়টি এ্যাডামস পিক নামে এখন পরিচিত।
এই জায়গাটি খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম এই চার ধর্মের অনুসারীদের কাছে অতি পবিত্র স্থান। এই পায়ের ছাপ এর দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি গৌতম বুদ্ধের, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি তাদের দেবতা শিবের, এবং মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন এটি পৃথিবীর প্রথম মানব আদম -এর।
মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাস পৃথিবীর প্রথম মানুষ মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের কারণে আল্লাহ কর্তৃক স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন এবং এখানে প্রথম পৃথিবীতে নামেন। মুসলমানদের মতে আদম ৯০ ফুট লম্বা ছিলেন। আদম পৃথিবীতে এসে চরম অণুতপ্ত হয়ে পড়েন এবং তার ভুলের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থণা করতে থাকেন। তখন তিনি ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ এক পায়ে হাজার বৎসর দাড়িয়ে থাকেন এবং কান্না-কাটি করতে থাকেন। তার ফলস্বরূপ এখানে তার পবিত্র পায়ের পদচিহ্ন এর দাগ পড়ে যায়।থিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর নাম জানো, তাঁর নামেই নামকরণ হয়েছিল এই পাহাড়ের। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, হজরত আদম (আ.)-এর ডান পায়ের চিহ্নটা কেবলামুখী অর্থাৎ পবিত্র কাবার দিকে ফেরানো।
বৌদ্ধ ধর্মমতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পায়ের ছাপটি আবিষ্কার হয়। আবিষ্কৃত হবার পর পদচিহ্নের চারপাশে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এই চূড়ার উচ্চতা ৭৩৫৯ ফুট বা ২২৪৩ মিটার। চূড়াটির চারপাশে সবুজের বিপুল সমারোহ ও আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট নদী ও ঝরণা।
এই স্থানে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো পড়ে না আবার মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টিও সেখানে পড়ে না।এই পায়ের চিহ্নটি সংরক্ষণের জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার একটি চার কোণা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছে। সেখানে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি শক্ত লোহার গেট।
পাহাড়টি সুউচ্চ হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছানো খুবই কষ্ট সাধ্য। সেখানে পৌছাতে হলে প্রথমে নৌকায় চড়ে কিছু পথ যেতে হয়, তারপর পায়ে হেঁটে উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য পাহাড়ের গা বেয়ে তিনটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়টির অনেকাংশ সবুজ গাছে ঢাকা থাকার কারণে এই পাহাড়ে রয়েছে অনেক বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়।এ পাহাড়ে আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছার পথ গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪ হাজার ধাপ। এখানে পৌঁছতে সময় লাগে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা।
বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব। কারণ, এ পাহাড় তখন লুকিয়ে যায় মেঘের ভেতর। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে অদৃশ করে ফেলে পাহাড়টাকে।
বিশ্বের যেসব নামকরা পর্যটক এই চূড়াটি ভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলো। ১৫০৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। সেই থেকে এই পাহাড়ের নাম আদম পাহাড়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই পায়ের ছাপটি অবিকল রয়ে গেছে।
YouTube Link: দম আঃ এর পায়ের চিহ্ন। আদম পাহাড় শ্রীলঙ্কা । আদম পাহাড়ের ইতিহাস।