তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার এর পরিচয়

তালেবানের কাবুলে প্রবেশের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে তাজিকিস্তানে চলে গেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর মধ্য দিয়ে অবশেষে পতন হলো আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। বিনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। মাত্র ৪৫ মিনিটের বৈঠক, তার পরেই ক্ষমতার হস্তান্তর হল।


আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই তালেবানের পক্ষ থেকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নাম শোনা যাচ্ছে। অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি সংগঠনটি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, মোল্লা আবদুল গনিই তালেবান সরকারের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক জীবন এবং তালেবান ক্যারিয়ার:

মোল্লা আবদুল গনি বা মোল্লা ভাই ১৯৬৮ সালে আফগানিস্তানের ওরুজগান প্রদেশের উইটমাক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ এবং সোভিয়েত সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদিনে কাজ করা এই নেতা কান্দাহার প্রদেশের একটি মাদ্রাসাও পরিচালনা করতেন। যেখানে তার সাথে ছিল সাবেক কমান্ডার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকারী মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যমের মতে, ওমর এবং বড়দার মূলত ভায়রা-ভাই।পরবর্তিতে তালেবান প্রতিস্ঠা করতে   মোল্লা মোহাম্মদ ওমর সহোযোগিতা করেছিল মোল্লা আবদুল গনি।

বারাদারকে ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবান শাসনের সময় বিভিন্ন পদে দেখা যায়।যার মধ্যে- হেরাত এবং নিমরুজ প্রদেশের গভর্নর, এবং পশ্চিম আফগানিস্তানের কর্পস কমান্ডার উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি নথিতে তাকে সাবেক সেনাপ্রধান এবং কাবুলের সেন্ট্রাল আর্মি কোরের কমান্ডার হিসেবে তালিকাভুক্ত দেখায়, যদিও ইন্টারপোলের ভাষ্যমতে তিনি হলেন তালেবানদের ডেপুটি মন্ত্রী।

আবদুল গনি বারাদার ১৯৯৪ সাল থেকে তালেবান আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন, তবে তার কয়েক বছর পরেই ২০০১ সালে আমেরিকা আফগানিস্তান দখল নেয় । তারপর থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই শুরু করে তালেবানরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন এই মোল্লা আবদুল গনি। তিনি একইসাথে ছিলেন আফগানিস্তানে তালেবানের সামরিক কর্মকাণ্ডের অধিনায়ক।

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন তালেবান সরকার পতনের পর তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের করাচী শহরের কাছে একটি অভিযানে পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও যুক্তরাষ্ট্রের (সিএআই) এর একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেফতার করে। সে সময় গ্রেপ্তারের পর শিকল পরিয়ে তাকে কারাগারে নেয়ার ছবিটি নানান আলোচনা- সমালোচনার জম্ম দেয়।

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রই তার মুক্তির জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ জানায় এবং তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে পাকিস্তান তাকে মুক্তি দেয়।

তথ্যমতে, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল গনি এ সময় ইসলামাবাদ সফর করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরবর্তীতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেন যে সত্যিকার অর্থে আবদুল গনি বরাদারকে এই "উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পর" মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এমনকি ২০১৮ সালের ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কাতার সরকারের অনুরোধে আবদুল গনি বরাদারকে মুক্তি দেয়।

পাকিস্তান ভিত্তিক বিশ্লেষক জাহিন হুসেইন আল জাজিরাকে বলেন, "এই মুক্তি এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সাথে সরাসরি কথা বলা শুরু করেছে, মনে হচ্ছে এই মুক্তির জন্য সময়টা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।"

মূলত, এই কারামুক্তির পরপরই আবদুল গনিকে তালেবানের রাজনৈতিক বিষয়ক নেতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসাথে তাকে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের কূটনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালেবানের যে চুক্তি হয় তাতেও স্বাক্ষর করেন আবদুল গনি বারাদার। 


YouTube Video Link:

তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার এর পরিচয়

No comments:

Post a Comment

পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...