মেসির ছোট থেকে বার্সেলোনা এবং পিএসজিতে আসার গল্প।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।যাকে আমরা মেসি নামে সবচেয়ে বেশি চিনি।

মেসি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে ২৪ জুন ১৯৮৭  সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া একজন খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন।তার পরিবারের আদি নিবাস ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৮৮৩ সালে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন।পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন, যার কোচ ছিলেন তার পিতা নিজেই। ১৯৯৫ সালে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন।


১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে।স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখায়, তবে সেসময় তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতিমাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার।বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন।আর বার্সেলোনা মেসির চিকিত্সার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় চলে আসেন। সেখানে মেসি বার্সেলোনার যুব একাডেমিতে খেলতে শুরু করেন।

বার্সেলোনার যুব প্রকল্পে তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেখাতে শুরু করেন এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার মূল দলে তাঁর অভিষেক হয়।২০০৮-০৯ মৌসুমে তিনি বার্সেলোনার মূল দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। সে মৌসুমেই তিনি বার্সেলোনাকে প্রথমবারের মত এবং প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন।

গত সপ্তাহে বার্সেলোনার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্কচ্ছেদ করে অনেকটা বধ্য হয়ে মেসি যোগ দেন পিএসজিতে।

বার্সেলোনার হয়ে এই ২১ বছরে মেসি ১০টি লা লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ এবং ৬টি কোপা দেল রেসহ মোট ৩৩টি শিরোপা জয় করেছেন, যা বার্সেলোনার ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ। একজন অসাধারণ গোলদাতা হিসেবে মেসির দখলে রয়েছে লা লিগায় সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল দেয়ার রেকর্ড। তিনি ৫২০টি ম্যাচ খেলে  ৪৭৪ গোল করেছেন ,লা লিগার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক গোলের মালিক ক্রিস্টিয়ানো  রোনালদো। তার গোলসংখ্যা ৩১১ টি।

লা লিগা ও ইউরোপের যেকোনো লীগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করেছেন মেসি ৫০টি,৭৩ টি গোল করে ইউরোপে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হচ্ছেন মেসি, এছাড়া ৯১টি গোল করে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটিও মেসির দখলে সর্বোচ্চ, এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল করেছেন মেসি, ২৬ টি।

লা লিগায় সর্বোচ্চ হ্যাট্রিক করেছেন মেসি, ৩৬। আর ৮টি হ্যাট্রিক করে চ্যাম্পিয়নস লীগের (৮) সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকের রেকর্ডটিও মেসির দখলে। পাশাপাশি মেসি একজন সৃষ্টিশীল প্লেমেকার হিসেবেও পরিচিত।

তিনি লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল সহায়তাকারীর কৃতিত্বেরও মালিক। তিনি ১৮৩টি গোল করতে সহায়তা করেছেন। ক্লাবের হয়ে তিনি ৭০০ এর অধিক পেশাদার গোল করেছেন।লিওনেল মেসি টানা চারবারসহ মোট ছয়বার ব্যালন ডি'অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। 

বার্সেলোনার হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও সর্বাধিক গোলের মালিক লিওনেল মেসি। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার জার্সিতে মেসির গোলসংখ্যা ১২০ টি। চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসি হয়তো আরও গোল করবেন। তবে তা আর বার্সেলোনার জার্সিতে করতে পারবেন না।.

গেল সপ্তাহে বছরে ৩৫ মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা বেতনে দুই বছরের চুক্তিতে পিএসজিতে যোগ দিয়েছেন মেসি।এর বাইরে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে চুক্তিপত্রে।পিএসজির সঙ্গে সব মিলিয়ে চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হবে।

পিএসজিরতে মেসি ৩০ নম্বর জার্সি পরে খেলবেন। কারণ বার্সেলোনায় প্রথম দুই মৌসুমে তিনি ঐ নম্বরের জার্সিই পরেই খেলেছেন। এরপর তিনি ১৯ নম্বরের জার্সি এবং পরে সম্মানজনক ১০ নম্বর জার্সি পরেন।

বর্তমানে অনেকেই মেসির সমালোচনা করে বলছেন, এতই যদি তিনি বার্সাকে ভালোবাসেন, তাহলে বিনা বেতনে বা আরও কম বেতনে কেন বার্সায় খেললেন না তিনি?

 ব্যাখ্যা খুঁজে বের করেছে স্প্যানিশ ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ফুটবল এসপানা। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, মেসি চাইলেই বিনা বেতনে বা অস্বাভাবিক কম বেতনে বার্সেলোনায় খেলতে পারতেন না!

‘বার্সেলোনায় মেসির বিনা বেতনে খেলা আইনত অবৈধ হতো। স্প্যানিশ আইন অনুসারে, যেকোনো নতুন চুক্তিতে খেলোয়াড়ের বেতন তাঁর আগের চুক্তির বেতনের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হয়"

বার্সার সঙ্গে মেসির আগের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে ৩০ জুন, ১ জুলাই থেকেই কাগজে–কলমে বার্সার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক ছিল না।

বার্সার ঋণের বোঝা গত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে, অন্যদিকে বার্সার বেতনের বিলও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, গত মৌসুম শেষেও বার্সার বেতনের বিল ছিল ক্লাবের আয়ের ১১০ শতাংশ! অর্থাৎ প্রতি মৌসুমে শুধু বেতন দিতেই আয়ের পুরোটা খরচ করতে হয়, এর পাশাপাশি ক্লাবের পরিচালন ব্যয় তো আছেই! অনেক কাটছাঁটের পরও মেসিকে ছাড়াই বার্সার বেতনের বিল তাদের আয়ের ৯৫ শতাংশ! যেখানে এই আয়ের ৭০ শতাংশের নিচে খরচ করার নিয়ম বেঁধে দিয়েছে স্প্যানিশ লিগ।

বিবিসি স্পোর্টসের মতে, মেসি যদি বিনা বেতনেও খেলতে চাইত, বার্সা তাঁকে নিবন্ধন করাতে পারত না।তাই দেখা যাচ্ছে অনেকটা নিয়মের বেড়াজালে কারণেই মেসিকে বার্সেলোনা ছাড়তে হয়েছে। এখানে মেসি বা বার্সেলোনা কতৃপক্ষ অপারগ ছিল।

৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলারের আগমনের খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পিএসজির অনুসারীর সংখ্যা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ছবি শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে।ইনস্টাগ্রামে পিএসজির অনুসারী এখন ৪ কোটি ৩৪ লাখ। অথচ এক সপ্তাহ আগেও সংখ্যাটি ছিল ৩ কোটি ৭৬ লাখ। এ কদিনেই ৫৮ লাখ বেড়েছে এবং সেটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মেও একই ধরনের অবস্থা।এদিকে ইনস্টাগ্রামে পিএসজিও পড়ে আছে মেসিকে নিয়ে। টানা ১৭টি পোস্টে মেসি ছাড়া আর কেউ ঠাঁই পাননি।অন্যদিকে মেসির ৩০ নম্বর জার্সিটি পিএসজির অনলাইন স্টোরে আসার ৩০ মিনিটের মধ্যে সব বিক্রি হয়ে গেছে। যেখানে একেকটি জার্সির মূল্য ছিল বাংলাদেশী টাকায় পনের হাজার টাকারও বেশি।

যাইহোক,আশা করি মেসির যে জাদুকরী ফুটবল নৈপুণ্য আমরা বার্সেলোনাতে দেখেছি, তার ধারাবাহিকতা পিএসজিতেও অখিন্না থাকবে।


YouTube Video Link

মেসির ছোট থেকে বার্সেলোনা এবং পিএসজিতে আসার গল্প।

পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...