‘ডেড সি’ নাম শুনলেই গা কেমন ছমছম করে ওঠে! মনে হয়, মৃত লোকদের এক সাগর,যেখানে ভাস লাশ! আসলে বিষয়টি কিন্তু মোটেও ভয়ংকর নয়; বরং ‘ডেড সি’ ভীষণ সুন্দর, ভ্রমণে যাওয়ার জন্য চমৎকার এক জায়গা। এই ‘ডেড সি’র পানি এতটাই ঘন যে ওই পানিতে কেউ চাইলে শুয়েও থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, চাইলে ওই পানি শুয়ে বইও পড়া যায়। কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে নেট ব্রাউজও করা যাবে।সব কিছু যদি নরমাল হয় তাহলে এর নাম ‘ডেড সি’ হলো খেন?"
বাংলায় ‘মৃত সাগর’কে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডেড সি’ ।ডেড সির পশ্চিমে পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েল, পূর্বে জর্ডান অবস্থিত।এই সাগরের পানির প্রধান উৎস জর্ডান নদী। মৃত সাগরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার আর গভীরতা ১.২৪০ ফুট। এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে নীচু স্থান বা স্থলভূমি। মৃত সাগর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার বা ১ হাজার ৩৭৮ ফুট নিচে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ২০ লাখ বছর আগে এ সাগরের উৎপত্তি। জর্দান নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হলেও ডেডসি মূলত একটি হ্রদ।
কেন এই সাগরে মানুষ ভেসে থাকে বা ডোবেনা?
জিবুতির আসাল হ্রদের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত হ্রদ।
এর লবণাক্ততা শতকরা ৩০% এবং এটি সমুদ্রের পানির চাইতে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত।উচ্চ লবনাক্ততার দরুন যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে । এই আচরণ যুক্তরাষ্ট্র-এর ইউটাতে অবস্থিত গ্রেট সল্ট লেক এর মত।
স্বাস্থ্যগত প্রভাব
উচ্চ বায়ুমন্ডলীয় চাপ , শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য বেশ উপকারী ডেড সির পরিবেশ।চর্মরোগ সোরিয়াসিস( psoriasis) এর জন্য দীর্ঘসময় সূর্যস্নান বেশ উপকারী । এই অঞ্চলের অতি বেগুনি রশ্মির স্বল্পতা সূর্যস্নানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে । এছাড়া রোগটি নিরাময়ে জন্য মৃত সাগরের লবণও বেশ উপকারী বলে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণায় দাবী করা হয়েছে।
জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহাসাগরের পানির তুলনায় ডেড সির পানিতে মিশে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর পার্থক্য রয়েছে। মৃত সাগরের পানিতে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে।মৃত সাগরের পানির ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। এই সকল উপাদানের কারণে ডেড সি’র পানির প্লবতা শক্তি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের পানির চেয়ে অনেক বেশি।
প্লবতা শক্তির কারণে এই সাগরে কোনো কিছু ডুবে না। যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে এই হ্রদটি মিশরের মমি তৈরির জন্য, সার উৎপাদনের জন্য পটাশসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই হ্রদ থেকে প্রাপ্ত লবণ ও খনিজ পদার্থ বিভিন্ন প্রসাধনী ও সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ডেড সি’তে কোনো মাছ নেই, কারণ এই সাগরের পানিতে কোনো মাছ বাস করতে পারে না। তেমনিভাবে এর পাশে জর্ডান নদীতেও কোনো মাছ নেই। এই সাগরের পানিতে কোন উদ্ভিদ বা মাছ বাচতে পারে না বলেই মূলত এই সাগরকে ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। এই সাগরের পানিতে শুধুমাত্র সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায়। ডেড সি তীরবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে উট, খরগোশ, খেঁকশিয়াল এমনকি চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। অতীতে জর্ডান নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে প্যাপিরাস এবং পাম গাছে সমৃদ্ধ বনভূমি ছিল।
মৃত সাগর দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং সত্যি সত্যিই মারা যাচ্ছে।
তিরিশ বছর আগে যখন ইজরায়েলের এনগেডি রিজর্টটি তৈরি হয়েছিল তখন ডেড সির পানি ছিল তার দেয়ালের গা ঘেঁষে.
কিন্তু এখন এই সমুদ্র এত দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে যে তার পানি দেখতে হলে পর্যটকদের জন্য তৈরি ট্রেনে করে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২ কিলোমিটার পথ।কিন্তু কেনো মৃত্যু ঘটছে ডেড সির?কারণটা হলো যে জর্ডান নদী থেকে এখানে পানি আসে, সেই নদীর পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যদিও ডেডসির সমস্যা সমাধানের একটি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।সেটা হলো, লোহিত সাগর থেকে মরুভূমির ওপর দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করে ডেডসিতে পানি আনা।যেই প্রকল্পটি হবে অনেক ব্যয়বহুল। তবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ডেডসি হয়তো তার প্রান কিছুটা ফিরে পাবে।
YouTube Video Link :
Dead Sea । মৃত সাগর কি? এখানে কেন মানুষ ভেসে থাকে ? Why Does Everyone Float In Dead Sea?
No comments:
Post a Comment