আমার দেখা সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়িরগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি অন্যতম একটি।অন্যান্য অনেক জমিদার বাড়ির থেকে পাকুটিয়া জমিদার বাড়িকে আলাদা করা যায় এর দৃষ্টিনন্দন ও অনন্য স্থাপত্য শৈলীর কারণে।
আজকে আপনাদের এই জমিদার বাড়িটি ঘুরিয়ে দেখাবো এবং জানাবো এর ইতিহাস।
টাঙ্গাইল সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নাগরপুর উপজেলার লৌহজং নদীর তীরে ১৫ একর জায়গাজুড়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি।
পশ্চিম বঙ্গের কলকাতা থেকে নাগরপুরে আসেন রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল।ঊনবিংশ শতাব্দীর ঠিক শুরুতে তিনি ইংরেজদের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে তার জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডলের ছিল দুই ছেলে, বৃন্দাবন ও রাধা গোবিন্দ। রাধা গোবিন্দ ছিল নিঃসন্তান কিন্তু বৃন্দাবন চন্দ্রের ছিল তিন ছেলে ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন এবং যোগেন্দ্র মোহন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারি তিনটি তরফে বিভক্ত ছিল।
১৯১৫ সালের ১৫ এপ্রিল এই তিন ভাইয়ের নামে উদ্বোধন করা হয় একই নকশার পরপর তিনটি প্যালেস।তখন জমিদার বাড়িটি তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। ১৯১৬ খ্রিঃ তাঁরা তাঁদের পিতা বৃন্দাবন এবং কাকা রাধা গোবিন্দের নামে বৃন্দবন চন্দ্র রাধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় (বিসিআরজি) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এখানে আছে অপূর্ব কারুকার্যখচিত বিশাল চারটি ভবন এবং একটি নাট মন্দির।প্রতিটি ভবনের দেয়ালের পরতে পরতে রয়েছে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা অন্য জমিদার বাড়ির থেকে একটু হলেও বাড়তি সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় এই পাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে। অসংখ্য গাছ পালার ছায়ায় আচ্ছাদিত সুন্দর মনোরম পরিবেশ এই জমিদার বাড়ির সুন্দরযকে অনেক খানি বাড়িয়ে দিয়েছে।
জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠের এক কোণে রয়েছে এই নাট মন্দির। এক সময় নাচে-গানে মুখর থাকত এই নাট মন্দির।
আর এই ভবনটি ব্যবহার করা হতো মন্দির হিসেবে।মন্দির ঘুরে দেখা গেল, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে, সেই পুরনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য।
অন্য তিনটি ভবন দুতলা করে এবং এদের চারপাশে রয়েছে বারান্দা।প্রতিটি বাড়ীর মাঝ বরাবর মুকুট হিসাবে লতা ও ফুলের অলংকরণে কারুকার্য মন্ডিত পূর্ণাঙ্গ দুই সুন্দরী নারী মূর্তি রয়েছে।
একদম পূর্ববের সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমানে পাকুটিয়া বিসিআরজি ডিগ্রী কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।বর্তমানে এই কলেজের মাধ্যমেই জমিদারদের রেখে যাওয়া সম্পদের দেখা শুনা করা হয়। দ্বিতল বিশিষ্ট এই ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করার মতো।তবে সংস্কারের অভাবে এই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
তারপাশেই আছে অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় রয়েছে ময়ূরের মূর্তি, এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তির দেখা মিলে। লতাপতায় আছন্ন ভবনটির একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেক অংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা পরিচালিত হচ্ছে।
সবশেষে দ্বিতল বিশিষ্ট এই মহলটির সামনে রয়েছে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি।এই মহল ঘুরে দেখা গেছে এখানে এখন কিছু সাধারণ মানুষ বসবাস করে এবং অন্য দুটি ভবনের তুলনায় এই ভবন অনেক বেশি জরাজীর্ণ।
জমিদার বাড়ির ভবনগুলো সংস্কার না হওয়াতে একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে,অন্য দিকে এটি দিন দিন ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে এর ইতিহাস।
যেহেতু এই জমিদার বাড়িটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও উন্মুক্ত, তাই বছরের যে কোন দিন যে কোন সময় এখানে আসা যাবে। এখানে আসার রাস্তাটিও খুব সহজ,ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে এসবি লিংক পরিবহনের বাসে করে সরাসরি এই জমিদার বাড়ির সামনে এসে নামতে পারেন,বাড়া নিবে কম বেশি ১২০ টাকা।
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি নিয়ে আমার তৈরি ভিডিও লিংক:
মাত্র ২৫০ টাকায় ঘুরে আসুন পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি,টাঙ্গাইল থেকে