সেন্ট মার্টিন :ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে এই দ্বীপটি এখন ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। 


                                                         Image Source: Myself 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার,এই দ্বীপটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ রয়েছ।  যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে।  এগুলোকে ধরলে এর আয়তন হবে প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। 


সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা ছেঁড়াদ্বীপ নামে অভিহিত করা হয়। ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই।  


মূল দ্বীপের সঙ্গে ছেঁড়া দ্বীপের সংযোগস্থল  সামান্য নিচু হওয়ায় জোয়ারের সময় এটি তলিয়ে যায়। তাই ভাটার সময় হেঁটে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় নৌকা নিয়ে যেতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় উত্তর প্রান্ত থেকে পশ্চিম বিচ ধরে সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে গেলে। নির্জন এই পথটা অসম্ভব সুন্দর। 

                                                          Image Source: Myself 

সেন্টমার্টিনে সামুদ্রিক শৈবাল একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ। স্থানীয়ভাবে ‘পেজালা’ নামে পরিচিত এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল সেন্টমার্টিনে প্রচুর পাওয়া যায়। সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।


অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে- স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্ন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে- পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল, রাঙ্গা কই, রূপচাঁদা, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি। সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে সেন্টমার্টিন খ্যাত।


 অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- কেয়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন গাছ ইত্যাদি। বৃক্ষ জাতীয় গাছের মধ্যে অন্যতম হলো নারিকেল গাছ। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী উদ্ভিদ হলো কেয়া গাছ। দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বোঝায় তা নেই।তবে সৈকতের প্রান্তজুড়ে বেশ কিছু ঝাউ গাছ দেখা যায়।  


দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এখানে জীবন-জীবিকা মাছ ধরা, শুটকি প্রকৃয়াকরণ, সামান্য চাষাবাদ ও পর্যটন সেবার ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে যেটা অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত,তখন দ্বীপটি কর্মচঞ্চল থাকে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল, তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। 


কবে প্রথম এই দ্বীপটিকে মানুষ শনাক্ত করেছিল তা জানা যায় না। প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। উল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো। কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপে বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবী। 


যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরিপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এর মতে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে। 


কীভাবে যাবেন:তবে ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফও যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ১০-১২ ঘণ্টার এই ভ্রমণে বাস অনুযায়ী ভাড়া  সাধারণত ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। অথবা ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া যাবে।


কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, সিএনজি বা মাইক্রোবাস/জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে অবস্থা ভেদে প্রায় ১-২ ঘণ্টা। ভাড়া যানবাহন ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।


টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি শিপ সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে  ছাড়ে যায়। যা দ্বীপে পৌছায় ১২ টার মধ্যে। এগুলো আবার সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরে আসে বিকেল ৩ টার দিকে। শিপ ও ক্লাস ভেদে এগুলোর ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অফ সিজন যেটা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত,এই সময়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে, তখন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার একমাত্র উপায় হল ট্রলার।তবে ট্রলারে যাওয়াটা খুবই ঝুকি পৃর্ন।


কোথায় থাকবেন: সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। অনেক বাড়িতেও আছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। এছাড়া তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। নিজের সাধ্যমতো যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই ভাড়া আগে মিটিয়ে নিতে হবে।


YouTube Link: সেন্ট মার্টিন :ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড


বঙ্গোপসাগর : বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপসাগর

বঙ্গোপসাগর হল ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত প্রায় ত্রিভূজাকৃতি উপসাগর, যার পশ্চিমে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা, উত্তর দিকে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মায়ানমার ও থাইল্যান্ড।

নামকরণ

বঙ্গোপসাগর নামের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ইতিহাস না থাকলেও প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে একে বলা হয়েছে ‘মহোদধি, (অর্থাৎ, বিরাট জলাধার)। আর প্রাচীন মানচিত্রগুলিতে এই উপসাগরটি সাইনাস গ্যাঞ্জেটিকাস বা গ্যাঞ্জেটিকাস সাইনাস নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ গঙ্গা উপসাগর। 

আয়তন

২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপসাগর বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর হিসেবে পরিচিত। যার সর্বাধিক প্রস্থ ১,৬১০ কিমি, আর গড় গভীরতা প্রায় ২,৬০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,২৫৮ মিটার।

তাপমাত্রা

বঙ্গোপসাগরের পানিরাশির ঊর্ধ্বপৃষ্ঠের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা প্রায় ২৮° সে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে মে মাসে ৩০°সে এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫°সে। তবে তাপমাত্রার বার্ষিক পার্থক্য খুব একটা বেশি নয়, উপসাগরের দক্ষিণাংশে মাত্র ২°সে এবং উত্তরাংশে ৫°সে।

লবণাক্ততা ও বর্ণ

বঙ্গোপসাগরের পানিরাশির উপরের অংশে লবণাক্ততা ৩২% হতে ৩৪.৫% পর্যন্ত ওঠানামা করে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে এর ব্যাপ্তি ১০% থেকে ২৫% পর্যন্ত। কিন্তু নদীর মোহনায় পানিরাশির ঊর্ধ্বপৃষ্ঠের লবণাক্ততা থাকে মাত্র ৫% কিংবা তার চেয়েও কম।

পানির বর্ণ ও স্বচ্ছতা  

বঙ্গোপসাগরের উন্মুক্ত অংশের পানির বর্ণ গাঢ় নীল এবং উপকূলের দিকে পানির বর্ণ ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয়ে হাল্কা নীল থেকে সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। পানির স্বচ্ছতা যথেষ্ট, কোন কোন স্থানে ৪০ থেকে ৫০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত দেখা যায়। তবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মোহনায় কম স্বচ্ছ এবং অত্যন্ত ঘোলা পানি পরিলক্ষিত হয়

দ্বীপপুঞ্জ

বঙ্গোপসাগরের অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে,যার মধ্যে - আন্দামান, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম। গ্রেট আন্দামান হচ্ছে আন্দামান দ্বীপমালার প্রধান দ্বীপ; অন্যদিকে রিচি'র দ্বীপটি ক্ষুদ্রতম দ্বীপপুঞ্জের আওতাধীন। এছাড়া, আন্দামান, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এর ৫৭২টি দ্বীপের মধ্যে ৩৭টিতে অধিবাসী রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে আবস্থিত ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেই বেশীরভাগ মানুষ বাস করে, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬.৫%।বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বিপ সেন্ট মার্টিন এই বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত,যার দৈঘ্য ৮ বর্গ কিলোমিটার।

                                                        Image Source : Myself

সমুদ্র বন্দর

ভারতের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর বিশাখাপত্মম এবং বাংলাদেশের প্রধান দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর এই উপসাগরে অবস্থিত। মায়ানমারের পূর্ববর্তী রাজধানী ও সর্ববৃহৎ নগরী ইয়াংগুন, এই বঙ্গোপসাগরের একটি উল্লেখযোগ্য সমুদ্রবন্দর।

নদী ও নদীবন্দর

বেশ কিছু  বৃহত্তম নদী এই উপসাগরে এসে মিশেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গা যার প্রধান দুই শাখানদী পদ্মা ও হুগলি, ব্রহ্মপুত্র যার শাখা নদী যমুনা ও মেঘনা, এছাড়া ইরাবতী, গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, সুবর্ণরেখা, কাবেরী  নদীসমূহ বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।

বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি হল চেন্নাই, চট্টগ্রাম, কলকাতা, হলদিয়া, মঙ্গলা, পারাদীপ, বিশাখাপত্তনম ও ইয়াঙ্গন। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এই উপসাগরের তীরে বাংলাদেশে অবস্থিত। উল্লেখ্য যে, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর ব-দ্বীপকে ঘিরে গঠিত হয়েছিল।এমনকি, মায়ানমারের ইরাবতী নদীও  এ  উপসাগরে মিলিত হয়ে একসময় গভীর ও ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সৃষ্টি করেছিল।

মৎস্যক্ষেত্র

বঙ্গোপসাগরের অসংখ্য প্রজাতির চিংড়ি ও মাছের আবাসস্থল। যদিও উপসাগরের সর্বত্রই জলজ প্রাণী বিশেষ করে কাঁকড়া, শামুক জাতীয় ছোট ছোট সামুদ্রিক প্রাণী, ঝিনুক, শেল, হাঙ্গর ও মৎস্য সম্পদ রয়েছ, তবে কিছু কিছু বিশেষ স্থানে মৎস্য ঘনত্ব অধিক হারে বজায় থাকে, যে স্থানগুলি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত চারটি মৎস্যক্ষেত্র শনাক্ত করা গিয়েছে। এগুলি হচ্ছে দক্ষিণের মৎস্যক্ষেত্র , দক্ষিণের দক্ষিণ মৎস্যক্ষেত্র , মধ্যভূমি  এবং সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড মৎস্যক্ষেত্র।

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত মানুষরা মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। জেলেরা 26 থেকে 44 প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধরে এই উপসাগর থেকে।  বছরে, গড়ে বঙ্গোপসাগর থেকে দুই মিলিয়ন টন মাছ ধরা হয়। বিশ্বের উপকূলীয় জেলেদের প্রায় 31% এই উপসাগরে বাস করে।

জোয়ারভাটা

বঙ্গোপসাগরে অর্ধ-আহ্নিক ধরনের জোয়ারভাটা সংঘটিত হয়ে থাকে, অর্থাৎ প্রতি ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট সময়কালে দুবার জোয়ার এবং দুবার ভাটা পর্যায়ক্রমে সংঘটিত হয়। অগভীর এলাকা, উপসাগরীয় এলাকা এবং মোহনা এলাকায় জোয়ারভাটা সর্বোচ্চ পরিলক্ষিত হয়। জোয়ার তরঙ্গের গড় উচ্চতা শ্রীলংকা উপকূলে ০.৭ মি এবং গাঙ্গার বদ্বীপ উপকূলে ৪.৭১ মি। বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি নদীর মুখে জোয়ারভাটা স্রোত সৃষ্টি হয়, যেমন হুগলী এবং মেঘনা নদী।

বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রসীমা হবার কারণে দেশের উন্নয়নে বঙ্গোপসাগরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের বাৎসরিক মহড়া এই সাগরেই করে থাকে এবং আন্তর্জাতিক মহড়াও এখানেই হয়ে থাকে।বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাওয়ার সস্মবনা রয়েছ।

এছাড়া, কৌশলগত দিক দিয়ে বঙ্গোপসারগর ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন, কারণ বঙ্গোপসারগরের উপকূল দিয়ে তাদের দুরবর্তী দ্বীপ আন্দামান  ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে, এছাড়া ভারতের কলকাতা, চেন্নাই, ও বিশাখাপত্মম এর মত ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর এই উপসারেই অবস্থিত।

ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিবাত্যা

বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। যখন বঙ্গোপসাগরে উৎপত্তি হয়ে ৭৪ মাইল (১১৯ কিলোমিটার) গতিবেগে বাতাস ঘূর্ণায়মান অবস্থায় মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় তখন তা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যা নামে আখ্যায়িত হয়। এ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যাই আটলান্টিক মহাসাগরে হারিকেন নামে পরিচিত।১৯৭০ সালে  এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে  বাংলাদেশের ভোলায় কয়েক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান, যা স্মরণ করে আজো অনেক লোক শিউরে উঠেন।

নৌ ভূতত্ত্ব

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড হচ্ছে একটি ১৪ কিলোমিটার ব্যাপী বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রের গভীর খাদ। গভীরতম এই উপত্যকা রেকর্ড আয়তন প্রায় ১৩৪০ মিটার। এখানকার ডুবো গিরিখাত  বিশ্বের বৃহত্তম ডুবো গিরিখাত।

দূষণ

প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ বা তার কাছাকাছি মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগর থেকে আসা বায়ু দূষণ মেঘ বঙ্গোপসাগরের উপর জমা হয়। যার মধ্যে যানবাহনের ধোঁয়া, রান্নাবান্নায় নির্গত ধোঁয়া এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য অন্যতম।

বিভিন্ন ধরনের দূষক পদার্থের দ্বারা বাংলাদেশের সামুদ্রিক পরিবেশ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে দূষণের শিকার হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায়, সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন এবং কুতুবদিয়া উপকূলীয় গ্যাসক্ষেত্রের আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে সমুদ্রবক্ষে খনিজ নিষ্কাশন ও বৃহৎ মাত্রার খননকাজ পরিচালনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহে সঞ্চিত সৈকত বালি আহরণ প্রভৃতি কর্মকান্ডের ফলে বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।


YouTube Link: বঙ্গোপসাগর : বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপসাগর

পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...