আমেরিকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শনগুলো একটি স্টাচু অব লিবার্টি। শত বছর ধরে আটলান্টিক সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। আমাদের আজকের এই পর্ব স্টাচু অব লিবার্টি নিয়ে।
যলিও আমরা এই স্থাপনাটিকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি জানি, কিন্তু এর আসল নাম কিন্তু স্ট্যাচু অব লিবার্টি না। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত একে 'লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে এর নাম হয়স্ট্যাচু অব লিবার্টি “
রোমান দেবী লিবার্টাসের আদলে এক নারীর অবয়ব মূর্তিটি হচ্ছে স্ট্যাচু অব লিবাটি। এই ভাষ্কর্যটির বাইরের নকশা করেছেন ফরাসি স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি এবং এর ভেতরের নকশা করেছেন আরেক ফরাসি স্থপতি গুস্তাভ আইফেল,যাকে আমরা আইফেল টাওয়ারের নকশাকারী হিসেবে জানি।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি আসলে ছিল ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে মার্কিনীদের জন্য একটি উপহার। ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলা আমেরিকান বিপ্লবের সময়ে ব্রিটেনের কাছ থেকে আমেরিকার স্বাধীনতার সংগ্রামে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। সেই সহযোগিতার স্মৃতি হিসেবে আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে ১৮৮৬ ফ্রান্স এই ভাস্কর্যটি আমেরিকাকে উহার দেয়।
আমেরিকার নিউইয়র্ক লিবার্টি দ্বীপে স্টাচু অব লিবার্টি স্থাপন করা হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বহু ইউরোপীয় অভিবাসী নিউইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রবেশ করছিল। এই ভাষ্কর্যটি সেইসব অভিবাসীদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাত।
বর্তমানে লিবার্টি আইল্যান্ড নামে পরিচিত এই দ্বিসটির পূর্ব নাম ছিল “বেডলে আইল্যান্ড”,১৯৫৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করা হয়।।প্রতিবছর প্রায় ৩০-৪০ লাখ মানুষ এই ভাস্কর্য দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসেন।
একহাতে একটি মশাল এবং অপরহাতে একটি বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে “স্ট্যাচু অব লিবার্টি” নামের এই স্থাপনাটি। স্ট্যাচু অব লিবার্টি একহাত দিয়ে যে বইটি ধরে রেখেছে সেই বইয়ের ওপরে লেখা আছে একটি তারিখ, আর তা হল “৪ জুলাই, ১৭৭৬”। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার তারিখ।এই তারিখেই ব্রিটিশ শাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছিল।তার পায়ের পায়ে একটি ভাঙ্গা শিকল দেখা যায়, যেটা তৎকালীন সময়ের দাসপ্রথা বিলুপ্তির প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে।
শুরু থেকেই স্ট্যাচু অব লিবাটি কে নিউইয়কের হাডসন নদীতে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। ভাষ্কর্যটির স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি মূর্তিটি নকশা করেছিল মিশরের সুয়েজ খালের পাড়ে স্থাপনের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মিশর এই ভাষ্কর্য নির্মানের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, পরবর্তীতে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় স্থাপন করা হয়।
স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রায় সম্পূর্ণ মূর্তিটিই তৈরী করা হয়েছে ফ্রান্সে। লোহাড় ফ্রেমের উপর তামার পাত দিয়ে, ৩০০ টি খন্ডে তৈরী হয়েছে ভাস্কর্যটি। ১৮৮৫ সালে ২১৪ টি বাক্সে ভরে জাহাজে করে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় পাঠানো হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর, তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ভাষ্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রথম দিকে দেখতে সবুজ রঙের ছিল না, এমনকি বর্তমানের এই সবুজ রংও করা হয়নি। ভাস্কর্যটি তামার তৈরী হওয়ায়, শুরুতে এর রং ছিল তামাটে। দীর্ঘকাল ধরে, এর চারদিকে থাকা সমুদ্রের জলীয়বাষ্পের সাথে তামার বিক্রিয়ার কারণে মূর্তিটি সবুজ রং ধারন করছে। এটি এক বিশেষ ধরনের মরিচা।
৯৩ মিটার লম্বা এই ভাস্কর্যটির ওজন হল প্রায় ২০৪ মেট্রিক টন।এই ভাস্কর্যের ভিতরে একটি সিঁড়ি রয়েছে, এই ৩৫৪টি সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে মাটি থেকে একদম ওপরের মশাল পর্যন্ত যাওয়া যায়। এই ভাস্কর্যের উচ্চতা বাইশ তলা উঁচু বিল্ডিং এর সমান, বেদি থেকে ভাস্কর্যের মশালের শিখর পর্যন্ত উচ্চতা ৯৩ মিটার বা ৩০৬ ফুট, এর মোট ওজন ২২৫ টন। ভাস্কর্যের মুকটের কাছে রয়েছে ২৫ টি জানালা, যা অনেকটা ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে কাজ করে।
এই ভাস্কর্যের গায়ে যখন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস আছড়ে পড়ে তখন ভাস্কর্য ্য্ ইঞ ও ভাস্কর্যটি ৩ইনঙি ও টর্চটি ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত নড়তে থাকে।
সেসময়ে এই ভাস্কর্যটি তৈরি করতে প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ খরচ হয়েছিল, যার বর্তমান মূল্য দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বানাতে ফ্রান্সের খরচ হয়েছিল আড়াই লাখ মার্কিন ডলার।
এই ভাস্কর্যটি যে স্থাপনার ওপর বসানো হয়েছে সেটা তৈরি করতে আমেরিকার খরচ হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ডলার
স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ঘিরে দু’টি দুঃখজনক ঘটনা রয়েছে, আর সেটা হল এপর্যন্ত দুইজন মানুষ স্ট্যাচু অফ লিবার্টি থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রথম ঘটনাটি ১৯২৯ সালে ও দ্বিতীয় আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৩২ সালে। বর্তমানে এই ভাস্কর্যের সিঁড়িটি জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বন্ধ রাখা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment