পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। সব ধরনের পাপ কর্ম শহরটিতে হরহামেশাই হয়ে থাকে। জুয়ার ক্যাসিনো, পতিতাবৃত্তি ও অর্থ-পাচারের জন্য এটাকে পাপের শহর বলা হয়। জুয়া খেলার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় ক্যাসিনোসহ সারা বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল হোটেলের অধিকাংশই এখানে অবস্থিত। অর্থ-পাচারের রাজধানী হিসেবেও খ্যাতির চূড়ায় রয়েছে শহরটি।

                                              Image Source: Free Stock Photo (pexels.com)


জুয়া, পতিতাবৃত্তি বা অর্থ পাচারের মত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়ারা আমেরিকার মোহাভি মরুভূমিতে গড়ে তোলে এই পাপের শহর।

মোহাভি মরুভূমির অন্তর্গত লাস ভেগাস কী ভাবে জনশূন্য মরু অঞ্চল থেকে পৃথিবীর বিনোদনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হল,সেটাই জানবো আমাদের আজকের এই পর্বে।

১৮২৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে যাওয়ার সময় তৃষ্ণার্ত স্পেনীয় পর্যটক আন্তোনিও আর্মিজো ও তাঁর দল এই মরু অঞ্চলে থমকে দাঁড়ান। ওই দলের এক সদস্য তখন এই স্থানের নাম দেন লাস ভেগাস। যার অর্থ উর্বর জমি।লস অ্যাঞ্জলসে ব্যবসায়িক রাস্তা খোঁজাই ছিল এই দলের উদ্দেশ্য।

তারও অনেক বছর পরে ১৯০৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলস এবং সল্টলেক সিটির মধ্যে রেল লাইন তৈরি হয়। রেল লাইন লাস ভেগাসের উপর দিয়ে গিয়ে দুই শহরকে সংযুক্ত করে। তার পরই এখানে বসতি স্থাপন শুরু হয়।


                                            Image Source: Free Stock Photo (pexels.com)

ক্রমশ আশপাশ থেকে লোকজন আসতে শুরু করে এখনে। ১৯৩১ সালে যখন নদীর উপর হুভার বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন এই অঞ্চল শহুরের রূপ পেয়েছিল

কাজের সন্ধানে সে সময় প্রচুর মানুষ লাস ভেগাসে আসতে শুরু করে। এখানেই তাঁরা থাকতেন আর বাঁধের কাজ করতেন। ক্রমে শহরায়ন ঘটতে থাকে লাস ভেগাসের। কাজের জন্য প্রচুর কম বয়সি যুবকের ভিড় বাড়তে থাকে এই শহরে।

এই সুযোগটা কাজে লাগায় সে সময়ের মাফিয়ারা। কালো টাকা সাদা করার উদ্দেশে তারা লাস ভেগাসে প্রচুর পরিমাণে টাকা বিনিয়োগ করতে শুরু করে। যুবক শ্রমিকদের বিলাসিতার জন্য থিয়েটার, ক্যাসিনো গড়ে তুলা হয়।দিনভর বাঁধের কাজ করার পর রাতে বিলাসিতা, এটাই হয়ে উঠেছিল তাঁদের জীবন। আর সেই থেকেই ক্রমে রাত জাগা শহর হয়ে ওঠে লাস ভেগাস।

বাঁধ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলে বিদ্যুতের চলে আসে শহরে। এরপর প্রচুর হোটেল তৈরি হয়। ক্রমেই পর্যটকদের বড় আকর্ষণের জায়গায় পরিণত হয় এই ভেগাস।

শহরে তখন জুয়া ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু ব্যবসার জন্য জুয়া খুব লাভের হবে অনুমান করে শহরে জুয়াকে বৈধ করে দেওয়া হয়।

১৯৩১ সালে নর্দার্ন ক্লাবকে প্রথম জুয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়। তার পর একে একে আরও কিছু ক্লাব এবং হোটেলে ক্যাসিনো চালানোর লাইসেন্স দেয়া হয়।

বর্তমানে লাস ভেগাস আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি অব লাস ভেগাস এবং অনেকসময় শুধু মাত্র ভেগাস নামে পরিচিত, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম জনবহুল শহর।

পাপের এই নগরীর সৌন্দর্য  চোখ ধাঁধানো। চোখ মেললেই দেখা মিলে পাহাড়ের, আর শীতকালে বরফ। ৩৬৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরটির বর্তমান লোকসংখ্যা 6 লক্ষ ৪১ হাজার। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ২৫টি হোটেলের ১৮টিই এই শহরে অবস্থিত। এখানকার একেকটা হোটেল একেকটা শহরের আদলে তৈরি। প্যারিস, ভেনাস থেকে শুরু করে মিশরের পিরামিড, আর আইফেল টাওয়ার থেকে নিউইয়র্ক শহর, এইসব শহরের আদলে তৈরি এখানকার একেকটা হোটেল।

শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এই শহরের ক্যাসিনোগুলোতে কোনো ঘড়ি থাকে না। ক্যাসিনোর ভিতরে আলো যাতে না আসতে পারে সেটা নিশ্চিত করা হয়। জুয়ার টেবিলে বসে দিন-রাতের হিসাব যেন না থাকে তার জন্যই এতো আয়োজন।

এই শহরের মানুষ এতটাই জুয়া আসক্ত যে, অতীতে একবার এক হাসপাতালের বেশ কিছু কর্মীকে কাজ থেকে ছাঁটাই করতে হয়েছিল, কারণ তারা জুয়া খেলার জন্য রোগীদের জীবনের ওপর বাজি ধরেছিলো। কোন রোগে কখন মারা যাবে, এটাই ছিল তাদের বাজি।এমনকি এই জুয়া জিতার জন্য তারা এক রোগীকে হত্যা করে।


YouTube Link: পাপের শহর লাস ভেগাস

ভ্যাটিকান সিটি: পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ

ভ্যাটিকান সিটি ইতালির রোম শহরের ভিতরে অবস্থিত স্বাধীন রাষ্ট্র। আর পোপ হচ্ছেন এখানকার রাষ্ট্রনেতা। এটি রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিশ্ব সদর দফতর হিসেবে কাজ করে। সম্পূর্ণভাবে রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র, যার আয়তন ০.৪৯ বর্গ কিলোমিটার ।রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্মকাণ্ড, আইন প্রণয়ন ও বিচার ব্যবস্থা সমস্ত কিছু পোপের অধীনে। 

                                             https://mamalovesrome.com/vatican-city-facts/

উত্তর-পশ্চিম রোমের ভ্যাটিকান পাহাড়ের উপর একটি ত্রিভুজাকৃতি এলাকায়, তিবের নদীর ঠিক পশ্চিমে, এই ভ্যাটিকান শহর অবস্থিত। দক্ষিণ-পশ্চিমের সেন্ট পিটার চত্বর বাদে বাকি সবদিকে ভ্যাটিকান শহর মধ্যযুগ ও রেনেসাঁর সময়ে নির্মিত প্রাচীর দিয়ে রোম শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রাচীরের ভেতরে আছে উদ্যান, বাহারী দালান ও চত্বরের সমাবেশ। সবচেয়ে বড় দালানটি হলো সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা, যা রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান গির্জা। ভ্যাটিকান সিটিতে রয়েছে একটি মহাকাশ অবজারভেটরি ও লাইব্রেরী ভ্যাটিকানা।

ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব সংবিধান, ডাকব্যবস্থা, সীলমোহর, পতাকা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতীক রয়েছে। ভ্যাটিকানের নিজস্ব সেনাবাহিনীও আছে, যার নাম সুইস গার্ড; এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ১৩৫ জন।৫০০-এর বেশি বছর ধরে এই বাহিনী পোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।

 ভ্যাটিকান রেডিও নামের সরকারি বেতার স্টেশন রয়েছে,যা সারা বিশ্বে পোপের কণ্ঠ ছড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালে ভ্যাটিকান শহরে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮০১ জন।নিজস্ব ইউরো ব্যবস্থা চালু রয়েছে দেশটিতে।

ভ্যাটিকান সিটি শেষ পোপীয় রাষ্ট্র। ক্যাথলিক গির্জা বহু শতাব্দী ধরে মধ্য ইতালির বেশ কিছু এলাকাতে এই রাষ্ট্রগুলি স্থাপন করেছিল, যার শাসনকর্তা ছিলেন পোপ। ইতালীয় সরকার ও পোপ সম্প্রদায়ের মধ্যে বহু বছর ধরে বিতর্কের পর ১৯২৯ সালে লাতেরান চুক্তির অধীনে ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চুক্তির অধীনে ক্যাথলিক গির্জা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে অন্য সব পোপীয় রাষ্ট্র থেকে দাবী প্রত্যাহার করে নেয়, এবং স্বাধীন ভ্যাটিকান সিটি হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করে। এর বর্তমান প্রধান পোপ ফ্রান্সিস, ২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ তিনি দায়িত্বগ্রহণ করেন ।

নগরীর প্রবেশমুখে দাঁড়ালে একটি বিশাল আকৃতির অট্টালিকা চোখে পড়ে। এটি হলো সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থস্থান। কোনো পোপ মারা গেলে অথবা অবসরে চলে গেলে এই অট্টালিকার ব্যালকনি থেকেই নতুন নির্বাচিত পোপ দেখা দেন। এই দৃশ্য দেখার জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ টেলিভিশনে চোখ রাখেন। আর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতারা এ দেশে এসে জড়ো হন।

১৬২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশাল ও প্রাচীন অট্টালিকা বিশ্ব ঐতিহ্যগুলোর একটি। প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হতে পারে এ দালানে। অট্টালিকাটির সামনে যে বিশাল মাঠ, তাকে বলা হয় সেন্ট পিটার্স স্কয়ার।

এক পাশে রয়েছে মিউজিয়াম, আরেক পাশে রয়েছে ভ্রমণকারীদের জন্য তথ্যকেন্দ্র এবং স্কয়ারের দুপাশে দুটি বিশাল আকৃতির পানির ফোয়ারা। এই দেশে রয়েছে মাত্র ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র রেলপথ, যার নাম সিটাডেল ভ্যাটিকানো। তবে এই রেল কোনো যাত্রী বহন করে না, মালামাল বহন করে শুধু। প্রতিবছর এই দেশে ভ্রমণ করেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন মানুষ।

ভ্যাটিকান সিটি নগররাষ্ট্রটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়, কিন্তু সেনজেনভুক্ত। এ ধরনের আরও চারটি রাষ্ট্র রয়েছে—আন্দোরা, মোনাকো, সান মেরিনো ও লিচেনস্টেইন। এসব দেশে প্রবেশ করতে নতুন করে কোনো ভিসা লাগবে না। তবে এই দেশ ২০০৪ সাল থেকে ইউরোকে মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করেছে আর এর অফিশিয়াল ভাষা হচ্ছে লাতিন।

ভ্যাটিকান সিটির কোন সরকারি ভাষা নেই, তবে ইতালীয় ভাষা সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। রোমান ক্যাথলিক গির্জার দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে লাতিন ভাষার বিশেষ মর্যাদা আছে। যারা উচ্চপদে কাজ করে তারা নিয়মিত ইতালীয় ভাষায় কথা বলে। এছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লাতিন ভাষা ব্যবহার করে।

অপরাধের দেশ বলে থাকেন অনেকে ভ্যাটিকান সিটিকে। জনসংখ্যার তুলনায় এখানে অপরাধ অনেক বেশি সংঘটিত হয়, তাই। ২০০৬ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৪৯২। আর একই সঙ্গে রেজিস্ট্রীকৃত অপরাধকর্মের সংখ্যা ৮২৭টি। মানে প্রত্যেক নাগরিক ১.৬৮টি অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে হিসাব বলছে।

 শীর্ষ পাঁচটি ওয়াইন আসক্ত দেশের একটি বলা হয় দেশটিকে। বাকি চারটি হলো অ্যান্ডোরা, ক্রয়োশয়া, স্লোভেনিয়া ও ফ্রান্স। প্রতি বছর একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দেশটিতে কমপক্ষে ৫৪.২৬ লিটার ওয়াইন পান করেন।

YouTube Link :

ভ্যাটিকান সিটি | পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ | Vatican City: World’s Smallest Country।

সেন্ট মার্টিন :ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে এই দ্বীপটি এখন ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। 


                                                         Image Source: Myself 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার,এই দ্বীপটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ রয়েছ।  যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে।  এগুলোকে ধরলে এর আয়তন হবে প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। 


সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা ছেঁড়াদ্বীপ নামে অভিহিত করা হয়। ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই।  


মূল দ্বীপের সঙ্গে ছেঁড়া দ্বীপের সংযোগস্থল  সামান্য নিচু হওয়ায় জোয়ারের সময় এটি তলিয়ে যায়। তাই ভাটার সময় হেঁটে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় নৌকা নিয়ে যেতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় উত্তর প্রান্ত থেকে পশ্চিম বিচ ধরে সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে গেলে। নির্জন এই পথটা অসম্ভব সুন্দর। 

                                                          Image Source: Myself 

সেন্টমার্টিনে সামুদ্রিক শৈবাল একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ। স্থানীয়ভাবে ‘পেজালা’ নামে পরিচিত এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল সেন্টমার্টিনে প্রচুর পাওয়া যায়। সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।


অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে- স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্ন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে- পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল, রাঙ্গা কই, রূপচাঁদা, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি। সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে সেন্টমার্টিন খ্যাত।


 অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- কেয়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন গাছ ইত্যাদি। বৃক্ষ জাতীয় গাছের মধ্যে অন্যতম হলো নারিকেল গাছ। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী উদ্ভিদ হলো কেয়া গাছ। দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বোঝায় তা নেই।তবে সৈকতের প্রান্তজুড়ে বেশ কিছু ঝাউ গাছ দেখা যায়।  


দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এখানে জীবন-জীবিকা মাছ ধরা, শুটকি প্রকৃয়াকরণ, সামান্য চাষাবাদ ও পর্যটন সেবার ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে যেটা অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত,তখন দ্বীপটি কর্মচঞ্চল থাকে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল, তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। 


কবে প্রথম এই দ্বীপটিকে মানুষ শনাক্ত করেছিল তা জানা যায় না। প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। উল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো। কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপে বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবী। 


যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরিপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এর মতে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে। 


কীভাবে যাবেন:তবে ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফও যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ১০-১২ ঘণ্টার এই ভ্রমণে বাস অনুযায়ী ভাড়া  সাধারণত ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। অথবা ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া যাবে।


কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, সিএনজি বা মাইক্রোবাস/জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে অবস্থা ভেদে প্রায় ১-২ ঘণ্টা। ভাড়া যানবাহন ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।


টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি শিপ সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে  ছাড়ে যায়। যা দ্বীপে পৌছায় ১২ টার মধ্যে। এগুলো আবার সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরে আসে বিকেল ৩ টার দিকে। শিপ ও ক্লাস ভেদে এগুলোর ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অফ সিজন যেটা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত,এই সময়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে, তখন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার একমাত্র উপায় হল ট্রলার।তবে ট্রলারে যাওয়াটা খুবই ঝুকি পৃর্ন।


কোথায় থাকবেন: সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। অনেক বাড়িতেও আছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। এছাড়া তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। নিজের সাধ্যমতো যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই ভাড়া আগে মিটিয়ে নিতে হবে।


YouTube Link: সেন্ট মার্টিন :ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড


পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...