'গোলাপ গ্রাম' (Golap Gram): যেন গোলাপের এক স্বর্গ রাজ্য

গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ। পুরো গ্রামজুড়েই ফুলের সৌরভ। দৃশ্যগুলো দেখার সময় ফুলের বাগানে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে! সবমিলিয়ে মুগ্ধ হবার মতো একটি জায়গা।এটি ছিল আমাদের আজকের গন্তব্য গোলাপ গ্রাম এবং তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা।


আমরা এখন আছি সাভার বাসস্ট্যান্ডে। সাভার বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার পূর্বে অন্ধ সংস্থা মার্কেট ও চৌরঙ্গী মার্কেটের মাঝে একটি রাস্তা রয়েছে,এই রাস্তা দিয়েই সরাসরি গোলাপ গ্রাম যাওয়া যায়।এখান থেকে গোলাপ গ্রাম যাওয়ার জন্য কয়েক ধরনের গাড়ি পাওয়া যায়,এর মধ্যে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, এই অটোরিকশা দিয়েই আমার আজকে গোলাপ গ্রাম যাচ্ছি।


ঢাকার কাছে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে সাদুল্লাপুর গ্রাম অবস্থিত। তুরাগ নদীর তীরের সাদুল্লাপুর গ্রামটিই বর্তমানে গোলাপ গ্রাম হিসাবে পরিচিত। নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা পুরো সাদুল্লাহপুর গ্রামটিকে একটি বাগান মনে হয়।সাদুল্লাহপুরকে এখন পর্যটকরা 'গোলাপ গ্রাম' হিসেবেই বেশি চেনেন।

রাস্তা ধরে একটু সামনে হাটলেই চোখে পড়বে অসংখ্য গোলাপ বাগান। আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনি যখন দেখতে পাবেন আপনার দুপাশে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপের বাগান, যেখানে ফুটে আছে লাল টুকটুকে অগুনিত গোলাপ ফুল,এই দৃশ্য দেখে আপনার মনে হতেই পারে আপনি কোন গোলাপের স্বর্গ রাজ্যে চলে এসেছেন। 

আপনি চাইলে বাগানে ভিতরে গিয়ে বসতে পারেন বা ছবি তুলতে পারেন।তবে বাগানের ভিতরে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে সেই বাগান থেকে ফুল কিনতে হবে,না হলে ভেতরে যেতে পারবেন না, এমনকি অনেক সময় পাশ হেটেও যেতে পারবেন না।


সকালে গোলাপের বাগান গুলোতে কাউকে কোনো কাজ করতে দেখা যায় না। তবে দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল কাটা, ফুল বাছাই, ফুল ভেজানো, ফুল বাঁধা সবই কিছু কৃষক শেষ করেন সন্ধ্যার আগে। কারণ সন্ধ্যোর পর পরই বসে মোস্তাপাড়া ও শ্যামপুর ফুল বাজার। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ী এসে ভিড় জমান সেখানে। জমতে থাকে বেচাকেনা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। 

এখানে সাধারণত মিরান্ডা জাতের গোলাপে চাষ বেশী হয়।এখান থেকে চাইলে পছন্দমতো গোলাপ কিনে নিতে পারেন। তবে এরা সাধারণত খুচরা গোলাপ বিক্রি করতে চায় না।এখানকার গোলাপ ফুল ঢাকার তুলনায় অনেক স্বতা। ১০০ শত গোলাপ কিনতে আপনার খরচ হতে পারে ৩-৪ শত টাকা।


এখানে যে শুধু গোলাপ ফুলেই চাষ হয় তা কিন্তু না।গোলাপ গ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেলেও সাদুল্লাহপুর গ্রামে জারভারা, গ্লাডিওলাস এবং রজনীগন্ধা সহ আরো কয়েকধরেন ফুলের চাষ হয়। তবে গোলাপ ফুল চাষের তুলনায় অন্য ফুলের চাষ হয় অনেক কম। ঢাকার শাহবাগসহ অন্যান্য ফুলের বাজারের চাহিদা মেটানোর প্রধান যোগানদাতা হচ্ছে সাদুল্লাহপুর গোলাপ গ্রাম। 

কখন আসবেন এখানে,

গোলাপ ফুল দেখার জন্য শীতের সময়টা হচ্ছে এখানে আসার উপযুক্ত সময়।তবে এই এলাকার খোলামেলা এবং নীরব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আমার মনে হয়েছে গ্রীস্মের সময়ে এখানে আসলে আলাদা একটা সৌন্দর্য দেখা যাবে।


কোথায় খাবেন:

এখানে ভালো মানের কোন রেস্টুরেন্ট‌ আমার চোখে পড়েনি। সবচেয়ে ভালো হয় আসার সময় সাথে খাবার নিয়ে আসলে, আপনি চাইলে যেকোন গাছের ছায়ার নিচে বসে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে খেতে পারেন, ভালো লাগবে।


কিভাবে যাবেন:

ঢাকা ও তার আশপাশ থেকে যেতে পারবেন অনেক ভাবেই। মিরপুর ১, মিরপুর ১০ কিংবা গাবতলী থেকে রিকশা বা সিএনজি করে দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট আসতে পারবেন। দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনের বিভিন্ন নৌকা ১০ মিনিট পরপর সাদুল্লাপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লোকাল ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ২৫ টাকা করে, সময় লাগতে পারে ৩৫-৪০ মিনিটের মতো।


গোলাপ গ্রাম নিয়ে আমার ভিডিও:

গোলাপ গ্রাম (Golap Gram):যেন গোলাপের এক স্বর্গ রাজ্যQRA





No comments:

Post a Comment

পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...