পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। সব ধরনের পাপ কর্ম শহরটিতে হরহামেশাই হয়ে থাকে। জুয়ার ক্যাসিনো, পতিতাবৃত্তি ও অর্থ-পাচারের জন্য এটাকে পাপের শহর বলা হয়। জুয়া খেলার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় ক্যাসিনোসহ সারা বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল হোটেলের অধিকাংশই এখানে অবস্থিত। অর্থ-পাচারের রাজধানী হিসেবেও খ্যাতির চূড়ায় রয়েছে শহরটি।

                                              Image Source: Free Stock Photo (pexels.com)


জুয়া, পতিতাবৃত্তি বা অর্থ পাচারের মত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়ারা আমেরিকার মোহাভি মরুভূমিতে গড়ে তোলে এই পাপের শহর।

মোহাভি মরুভূমির অন্তর্গত লাস ভেগাস কী ভাবে জনশূন্য মরু অঞ্চল থেকে পৃথিবীর বিনোদনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হল,সেটাই জানবো আমাদের আজকের এই পর্বে।

১৮২৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে যাওয়ার সময় তৃষ্ণার্ত স্পেনীয় পর্যটক আন্তোনিও আর্মিজো ও তাঁর দল এই মরু অঞ্চলে থমকে দাঁড়ান। ওই দলের এক সদস্য তখন এই স্থানের নাম দেন লাস ভেগাস। যার অর্থ উর্বর জমি।লস অ্যাঞ্জলসে ব্যবসায়িক রাস্তা খোঁজাই ছিল এই দলের উদ্দেশ্য।

তারও অনেক বছর পরে ১৯০৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলস এবং সল্টলেক সিটির মধ্যে রেল লাইন তৈরি হয়। রেল লাইন লাস ভেগাসের উপর দিয়ে গিয়ে দুই শহরকে সংযুক্ত করে। তার পরই এখানে বসতি স্থাপন শুরু হয়।


                                            Image Source: Free Stock Photo (pexels.com)

ক্রমশ আশপাশ থেকে লোকজন আসতে শুরু করে এখনে। ১৯৩১ সালে যখন নদীর উপর হুভার বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন এই অঞ্চল শহুরের রূপ পেয়েছিল

কাজের সন্ধানে সে সময় প্রচুর মানুষ লাস ভেগাসে আসতে শুরু করে। এখানেই তাঁরা থাকতেন আর বাঁধের কাজ করতেন। ক্রমে শহরায়ন ঘটতে থাকে লাস ভেগাসের। কাজের জন্য প্রচুর কম বয়সি যুবকের ভিড় বাড়তে থাকে এই শহরে।

এই সুযোগটা কাজে লাগায় সে সময়ের মাফিয়ারা। কালো টাকা সাদা করার উদ্দেশে তারা লাস ভেগাসে প্রচুর পরিমাণে টাকা বিনিয়োগ করতে শুরু করে। যুবক শ্রমিকদের বিলাসিতার জন্য থিয়েটার, ক্যাসিনো গড়ে তুলা হয়।দিনভর বাঁধের কাজ করার পর রাতে বিলাসিতা, এটাই হয়ে উঠেছিল তাঁদের জীবন। আর সেই থেকেই ক্রমে রাত জাগা শহর হয়ে ওঠে লাস ভেগাস।

বাঁধ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলে বিদ্যুতের চলে আসে শহরে। এরপর প্রচুর হোটেল তৈরি হয়। ক্রমেই পর্যটকদের বড় আকর্ষণের জায়গায় পরিণত হয় এই ভেগাস।

শহরে তখন জুয়া ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু ব্যবসার জন্য জুয়া খুব লাভের হবে অনুমান করে শহরে জুয়াকে বৈধ করে দেওয়া হয়।

১৯৩১ সালে নর্দার্ন ক্লাবকে প্রথম জুয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়। তার পর একে একে আরও কিছু ক্লাব এবং হোটেলে ক্যাসিনো চালানোর লাইসেন্স দেয়া হয়।

বর্তমানে লাস ভেগাস আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি অব লাস ভেগাস এবং অনেকসময় শুধু মাত্র ভেগাস নামে পরিচিত, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম জনবহুল শহর।

পাপের এই নগরীর সৌন্দর্য  চোখ ধাঁধানো। চোখ মেললেই দেখা মিলে পাহাড়ের, আর শীতকালে বরফ। ৩৬৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরটির বর্তমান লোকসংখ্যা 6 লক্ষ ৪১ হাজার। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ২৫টি হোটেলের ১৮টিই এই শহরে অবস্থিত। এখানকার একেকটা হোটেল একেকটা শহরের আদলে তৈরি। প্যারিস, ভেনাস থেকে শুরু করে মিশরের পিরামিড, আর আইফেল টাওয়ার থেকে নিউইয়র্ক শহর, এইসব শহরের আদলে তৈরি এখানকার একেকটা হোটেল।

শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এই শহরের ক্যাসিনোগুলোতে কোনো ঘড়ি থাকে না। ক্যাসিনোর ভিতরে আলো যাতে না আসতে পারে সেটা নিশ্চিত করা হয়। জুয়ার টেবিলে বসে দিন-রাতের হিসাব যেন না থাকে তার জন্যই এতো আয়োজন।

এই শহরের মানুষ এতটাই জুয়া আসক্ত যে, অতীতে একবার এক হাসপাতালের বেশ কিছু কর্মীকে কাজ থেকে ছাঁটাই করতে হয়েছিল, কারণ তারা জুয়া খেলার জন্য রোগীদের জীবনের ওপর বাজি ধরেছিলো। কোন রোগে কখন মারা যাবে, এটাই ছিল তাদের বাজি।এমনকি এই জুয়া জিতার জন্য তারা এক রোগীকে হত্যা করে।


YouTube Link: পাপের শহর লাস ভেগাস

ভ্যাটিকান সিটি: পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ

ভ্যাটিকান সিটি ইতালির রোম শহরের ভিতরে অবস্থিত স্বাধীন রাষ্ট্র। আর পোপ হচ্ছেন এখানকার রাষ্ট্রনেতা। এটি রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিশ্ব সদর দফতর হিসেবে কাজ করে। সম্পূর্ণভাবে রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র, যার আয়তন ০.৪৯ বর্গ কিলোমিটার ।রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্মকাণ্ড, আইন প্রণয়ন ও বিচার ব্যবস্থা সমস্ত কিছু পোপের অধীনে। 

                                             https://mamalovesrome.com/vatican-city-facts/

উত্তর-পশ্চিম রোমের ভ্যাটিকান পাহাড়ের উপর একটি ত্রিভুজাকৃতি এলাকায়, তিবের নদীর ঠিক পশ্চিমে, এই ভ্যাটিকান শহর অবস্থিত। দক্ষিণ-পশ্চিমের সেন্ট পিটার চত্বর বাদে বাকি সবদিকে ভ্যাটিকান শহর মধ্যযুগ ও রেনেসাঁর সময়ে নির্মিত প্রাচীর দিয়ে রোম শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রাচীরের ভেতরে আছে উদ্যান, বাহারী দালান ও চত্বরের সমাবেশ। সবচেয়ে বড় দালানটি হলো সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা, যা রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান গির্জা। ভ্যাটিকান সিটিতে রয়েছে একটি মহাকাশ অবজারভেটরি ও লাইব্রেরী ভ্যাটিকানা।

ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব সংবিধান, ডাকব্যবস্থা, সীলমোহর, পতাকা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতীক রয়েছে। ভ্যাটিকানের নিজস্ব সেনাবাহিনীও আছে, যার নাম সুইস গার্ড; এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ১৩৫ জন।৫০০-এর বেশি বছর ধরে এই বাহিনী পোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।

 ভ্যাটিকান রেডিও নামের সরকারি বেতার স্টেশন রয়েছে,যা সারা বিশ্বে পোপের কণ্ঠ ছড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালে ভ্যাটিকান শহরে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮০১ জন।নিজস্ব ইউরো ব্যবস্থা চালু রয়েছে দেশটিতে।

ভ্যাটিকান সিটি শেষ পোপীয় রাষ্ট্র। ক্যাথলিক গির্জা বহু শতাব্দী ধরে মধ্য ইতালির বেশ কিছু এলাকাতে এই রাষ্ট্রগুলি স্থাপন করেছিল, যার শাসনকর্তা ছিলেন পোপ। ইতালীয় সরকার ও পোপ সম্প্রদায়ের মধ্যে বহু বছর ধরে বিতর্কের পর ১৯২৯ সালে লাতেরান চুক্তির অধীনে ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চুক্তির অধীনে ক্যাথলিক গির্জা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে অন্য সব পোপীয় রাষ্ট্র থেকে দাবী প্রত্যাহার করে নেয়, এবং স্বাধীন ভ্যাটিকান সিটি হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করে। এর বর্তমান প্রধান পোপ ফ্রান্সিস, ২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ তিনি দায়িত্বগ্রহণ করেন ।

নগরীর প্রবেশমুখে দাঁড়ালে একটি বিশাল আকৃতির অট্টালিকা চোখে পড়ে। এটি হলো সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থস্থান। কোনো পোপ মারা গেলে অথবা অবসরে চলে গেলে এই অট্টালিকার ব্যালকনি থেকেই নতুন নির্বাচিত পোপ দেখা দেন। এই দৃশ্য দেখার জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ টেলিভিশনে চোখ রাখেন। আর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতারা এ দেশে এসে জড়ো হন।

১৬২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশাল ও প্রাচীন অট্টালিকা বিশ্ব ঐতিহ্যগুলোর একটি। প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হতে পারে এ দালানে। অট্টালিকাটির সামনে যে বিশাল মাঠ, তাকে বলা হয় সেন্ট পিটার্স স্কয়ার।

এক পাশে রয়েছে মিউজিয়াম, আরেক পাশে রয়েছে ভ্রমণকারীদের জন্য তথ্যকেন্দ্র এবং স্কয়ারের দুপাশে দুটি বিশাল আকৃতির পানির ফোয়ারা। এই দেশে রয়েছে মাত্র ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র রেলপথ, যার নাম সিটাডেল ভ্যাটিকানো। তবে এই রেল কোনো যাত্রী বহন করে না, মালামাল বহন করে শুধু। প্রতিবছর এই দেশে ভ্রমণ করেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন মানুষ।

ভ্যাটিকান সিটি নগররাষ্ট্রটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়, কিন্তু সেনজেনভুক্ত। এ ধরনের আরও চারটি রাষ্ট্র রয়েছে—আন্দোরা, মোনাকো, সান মেরিনো ও লিচেনস্টেইন। এসব দেশে প্রবেশ করতে নতুন করে কোনো ভিসা লাগবে না। তবে এই দেশ ২০০৪ সাল থেকে ইউরোকে মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করেছে আর এর অফিশিয়াল ভাষা হচ্ছে লাতিন।

ভ্যাটিকান সিটির কোন সরকারি ভাষা নেই, তবে ইতালীয় ভাষা সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। রোমান ক্যাথলিক গির্জার দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে লাতিন ভাষার বিশেষ মর্যাদা আছে। যারা উচ্চপদে কাজ করে তারা নিয়মিত ইতালীয় ভাষায় কথা বলে। এছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লাতিন ভাষা ব্যবহার করে।

অপরাধের দেশ বলে থাকেন অনেকে ভ্যাটিকান সিটিকে। জনসংখ্যার তুলনায় এখানে অপরাধ অনেক বেশি সংঘটিত হয়, তাই। ২০০৬ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৪৯২। আর একই সঙ্গে রেজিস্ট্রীকৃত অপরাধকর্মের সংখ্যা ৮২৭টি। মানে প্রত্যেক নাগরিক ১.৬৮টি অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে হিসাব বলছে।

 শীর্ষ পাঁচটি ওয়াইন আসক্ত দেশের একটি বলা হয় দেশটিকে। বাকি চারটি হলো অ্যান্ডোরা, ক্রয়োশয়া, স্লোভেনিয়া ও ফ্রান্স। প্রতি বছর একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দেশটিতে কমপক্ষে ৫৪.২৬ লিটার ওয়াইন পান করেন।

YouTube Link :

ভ্যাটিকান সিটি | পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ | Vatican City: World’s Smallest Country।

পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...