সেন্ট মার্টিন :ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে এই দ্বীপটি এখন ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। 


                                                         Image Source: Myself 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার,এই দ্বীপটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ রয়েছ।  যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে।  এগুলোকে ধরলে এর আয়তন হবে প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। 


সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা ছেঁড়াদ্বীপ নামে অভিহিত করা হয়। ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই।  


মূল দ্বীপের সঙ্গে ছেঁড়া দ্বীপের সংযোগস্থল  সামান্য নিচু হওয়ায় জোয়ারের সময় এটি তলিয়ে যায়। তাই ভাটার সময় হেঁটে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় নৌকা নিয়ে যেতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় উত্তর প্রান্ত থেকে পশ্চিম বিচ ধরে সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে গেলে। নির্জন এই পথটা অসম্ভব সুন্দর। 

                                                          Image Source: Myself 

সেন্টমার্টিনে সামুদ্রিক শৈবাল একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ। স্থানীয়ভাবে ‘পেজালা’ নামে পরিচিত এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল সেন্টমার্টিনে প্রচুর পাওয়া যায়। সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।


অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে- স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্ন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে- পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল, রাঙ্গা কই, রূপচাঁদা, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি। সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে সেন্টমার্টিন খ্যাত।


 অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- কেয়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন গাছ ইত্যাদি। বৃক্ষ জাতীয় গাছের মধ্যে অন্যতম হলো নারিকেল গাছ। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী উদ্ভিদ হলো কেয়া গাছ। দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বোঝায় তা নেই।তবে সৈকতের প্রান্তজুড়ে বেশ কিছু ঝাউ গাছ দেখা যায়।  


দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এখানে জীবন-জীবিকা মাছ ধরা, শুটকি প্রকৃয়াকরণ, সামান্য চাষাবাদ ও পর্যটন সেবার ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে যেটা অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত,তখন দ্বীপটি কর্মচঞ্চল থাকে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল, তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। 


কবে প্রথম এই দ্বীপটিকে মানুষ শনাক্ত করেছিল তা জানা যায় না। প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। উল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো। কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপে বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবী। 


যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরিপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এর মতে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে। 


কীভাবে যাবেন:তবে ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফও যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ১০-১২ ঘণ্টার এই ভ্রমণে বাস অনুযায়ী ভাড়া  সাধারণত ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। অথবা ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া যাবে।


কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, সিএনজি বা মাইক্রোবাস/জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে অবস্থা ভেদে প্রায় ১-২ ঘণ্টা। ভাড়া যানবাহন ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।


টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি শিপ সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে  ছাড়ে যায়। যা দ্বীপে পৌছায় ১২ টার মধ্যে। এগুলো আবার সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরে আসে বিকেল ৩ টার দিকে। শিপ ও ক্লাস ভেদে এগুলোর ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অফ সিজন যেটা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত,এই সময়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে, তখন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার একমাত্র উপায় হল ট্রলার।তবে ট্রলারে যাওয়াটা খুবই ঝুকি পৃর্ন।


কোথায় থাকবেন: সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। অনেক বাড়িতেও আছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। এছাড়া তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। নিজের সাধ্যমতো যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই ভাড়া আগে মিটিয়ে নিতে হবে।


YouTube Link: সেন্ট মার্টিন :ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড


বঙ্গোপসাগর : বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপসাগর

বঙ্গোপসাগর হল ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত প্রায় ত্রিভূজাকৃতি উপসাগর, যার পশ্চিমে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা, উত্তর দিকে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মায়ানমার ও থাইল্যান্ড।

নামকরণ

বঙ্গোপসাগর নামের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ইতিহাস না থাকলেও প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে একে বলা হয়েছে ‘মহোদধি, (অর্থাৎ, বিরাট জলাধার)। আর প্রাচীন মানচিত্রগুলিতে এই উপসাগরটি সাইনাস গ্যাঞ্জেটিকাস বা গ্যাঞ্জেটিকাস সাইনাস নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ গঙ্গা উপসাগর। 

আয়তন

২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপসাগর বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর হিসেবে পরিচিত। যার সর্বাধিক প্রস্থ ১,৬১০ কিমি, আর গড় গভীরতা প্রায় ২,৬০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,২৫৮ মিটার।

তাপমাত্রা

বঙ্গোপসাগরের পানিরাশির ঊর্ধ্বপৃষ্ঠের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা প্রায় ২৮° সে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে মে মাসে ৩০°সে এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫°সে। তবে তাপমাত্রার বার্ষিক পার্থক্য খুব একটা বেশি নয়, উপসাগরের দক্ষিণাংশে মাত্র ২°সে এবং উত্তরাংশে ৫°সে।

লবণাক্ততা ও বর্ণ

বঙ্গোপসাগরের পানিরাশির উপরের অংশে লবণাক্ততা ৩২% হতে ৩৪.৫% পর্যন্ত ওঠানামা করে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে এর ব্যাপ্তি ১০% থেকে ২৫% পর্যন্ত। কিন্তু নদীর মোহনায় পানিরাশির ঊর্ধ্বপৃষ্ঠের লবণাক্ততা থাকে মাত্র ৫% কিংবা তার চেয়েও কম।

পানির বর্ণ ও স্বচ্ছতা  

বঙ্গোপসাগরের উন্মুক্ত অংশের পানির বর্ণ গাঢ় নীল এবং উপকূলের দিকে পানির বর্ণ ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয়ে হাল্কা নীল থেকে সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। পানির স্বচ্ছতা যথেষ্ট, কোন কোন স্থানে ৪০ থেকে ৫০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত দেখা যায়। তবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মোহনায় কম স্বচ্ছ এবং অত্যন্ত ঘোলা পানি পরিলক্ষিত হয়

দ্বীপপুঞ্জ

বঙ্গোপসাগরের অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে,যার মধ্যে - আন্দামান, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম। গ্রেট আন্দামান হচ্ছে আন্দামান দ্বীপমালার প্রধান দ্বীপ; অন্যদিকে রিচি'র দ্বীপটি ক্ষুদ্রতম দ্বীপপুঞ্জের আওতাধীন। এছাড়া, আন্দামান, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এর ৫৭২টি দ্বীপের মধ্যে ৩৭টিতে অধিবাসী রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে আবস্থিত ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেই বেশীরভাগ মানুষ বাস করে, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬.৫%।বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বিপ সেন্ট মার্টিন এই বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত,যার দৈঘ্য ৮ বর্গ কিলোমিটার।

                                                        Image Source : Myself

সমুদ্র বন্দর

ভারতের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর বিশাখাপত্মম এবং বাংলাদেশের প্রধান দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর এই উপসাগরে অবস্থিত। মায়ানমারের পূর্ববর্তী রাজধানী ও সর্ববৃহৎ নগরী ইয়াংগুন, এই বঙ্গোপসাগরের একটি উল্লেখযোগ্য সমুদ্রবন্দর।

নদী ও নদীবন্দর

বেশ কিছু  বৃহত্তম নদী এই উপসাগরে এসে মিশেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গা যার প্রধান দুই শাখানদী পদ্মা ও হুগলি, ব্রহ্মপুত্র যার শাখা নদী যমুনা ও মেঘনা, এছাড়া ইরাবতী, গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, সুবর্ণরেখা, কাবেরী  নদীসমূহ বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।

বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি হল চেন্নাই, চট্টগ্রাম, কলকাতা, হলদিয়া, মঙ্গলা, পারাদীপ, বিশাখাপত্তনম ও ইয়াঙ্গন। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এই উপসাগরের তীরে বাংলাদেশে অবস্থিত। উল্লেখ্য যে, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর ব-দ্বীপকে ঘিরে গঠিত হয়েছিল।এমনকি, মায়ানমারের ইরাবতী নদীও  এ  উপসাগরে মিলিত হয়ে একসময় গভীর ও ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সৃষ্টি করেছিল।

মৎস্যক্ষেত্র

বঙ্গোপসাগরের অসংখ্য প্রজাতির চিংড়ি ও মাছের আবাসস্থল। যদিও উপসাগরের সর্বত্রই জলজ প্রাণী বিশেষ করে কাঁকড়া, শামুক জাতীয় ছোট ছোট সামুদ্রিক প্রাণী, ঝিনুক, শেল, হাঙ্গর ও মৎস্য সম্পদ রয়েছ, তবে কিছু কিছু বিশেষ স্থানে মৎস্য ঘনত্ব অধিক হারে বজায় থাকে, যে স্থানগুলি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত চারটি মৎস্যক্ষেত্র শনাক্ত করা গিয়েছে। এগুলি হচ্ছে দক্ষিণের মৎস্যক্ষেত্র , দক্ষিণের দক্ষিণ মৎস্যক্ষেত্র , মধ্যভূমি  এবং সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড মৎস্যক্ষেত্র।

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত মানুষরা মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। জেলেরা 26 থেকে 44 প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধরে এই উপসাগর থেকে।  বছরে, গড়ে বঙ্গোপসাগর থেকে দুই মিলিয়ন টন মাছ ধরা হয়। বিশ্বের উপকূলীয় জেলেদের প্রায় 31% এই উপসাগরে বাস করে।

জোয়ারভাটা

বঙ্গোপসাগরে অর্ধ-আহ্নিক ধরনের জোয়ারভাটা সংঘটিত হয়ে থাকে, অর্থাৎ প্রতি ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট সময়কালে দুবার জোয়ার এবং দুবার ভাটা পর্যায়ক্রমে সংঘটিত হয়। অগভীর এলাকা, উপসাগরীয় এলাকা এবং মোহনা এলাকায় জোয়ারভাটা সর্বোচ্চ পরিলক্ষিত হয়। জোয়ার তরঙ্গের গড় উচ্চতা শ্রীলংকা উপকূলে ০.৭ মি এবং গাঙ্গার বদ্বীপ উপকূলে ৪.৭১ মি। বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি নদীর মুখে জোয়ারভাটা স্রোত সৃষ্টি হয়, যেমন হুগলী এবং মেঘনা নদী।

বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রসীমা হবার কারণে দেশের উন্নয়নে বঙ্গোপসাগরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের বাৎসরিক মহড়া এই সাগরেই করে থাকে এবং আন্তর্জাতিক মহড়াও এখানেই হয়ে থাকে।বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাওয়ার সস্মবনা রয়েছ।

এছাড়া, কৌশলগত দিক দিয়ে বঙ্গোপসারগর ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন, কারণ বঙ্গোপসারগরের উপকূল দিয়ে তাদের দুরবর্তী দ্বীপ আন্দামান  ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে, এছাড়া ভারতের কলকাতা, চেন্নাই, ও বিশাখাপত্মম এর মত ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর এই উপসারেই অবস্থিত।

ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিবাত্যা

বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। যখন বঙ্গোপসাগরে উৎপত্তি হয়ে ৭৪ মাইল (১১৯ কিলোমিটার) গতিবেগে বাতাস ঘূর্ণায়মান অবস্থায় মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় তখন তা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যা নামে আখ্যায়িত হয়। এ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যাই আটলান্টিক মহাসাগরে হারিকেন নামে পরিচিত।১৯৭০ সালে  এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে  বাংলাদেশের ভোলায় কয়েক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান, যা স্মরণ করে আজো অনেক লোক শিউরে উঠেন।

নৌ ভূতত্ত্ব

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড হচ্ছে একটি ১৪ কিলোমিটার ব্যাপী বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রের গভীর খাদ। গভীরতম এই উপত্যকা রেকর্ড আয়তন প্রায় ১৩৪০ মিটার। এখানকার ডুবো গিরিখাত  বিশ্বের বৃহত্তম ডুবো গিরিখাত।

দূষণ

প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ বা তার কাছাকাছি মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগর থেকে আসা বায়ু দূষণ মেঘ বঙ্গোপসাগরের উপর জমা হয়। যার মধ্যে যানবাহনের ধোঁয়া, রান্নাবান্নায় নির্গত ধোঁয়া এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য অন্যতম।

বিভিন্ন ধরনের দূষক পদার্থের দ্বারা বাংলাদেশের সামুদ্রিক পরিবেশ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে দূষণের শিকার হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায়, সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন এবং কুতুবদিয়া উপকূলীয় গ্যাসক্ষেত্রের আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে সমুদ্রবক্ষে খনিজ নিষ্কাশন ও বৃহৎ মাত্রার খননকাজ পরিচালনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহে সঞ্চিত সৈকত বালি আহরণ প্রভৃতি কর্মকান্ডের ফলে বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।


YouTube Link: বঙ্গোপসাগর : বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপসাগর

আদম পাহাড়, শ্রীলঙ্কা

 আল্লাহতায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠানোর পর তিনি ফেরেশতাদের সাহায্যে বর্তমান শ্রীলঙ্কার ‘সেরেনদ্বীপে’ আসেন। বঙ্গোপসাগর ও ভারত সাগরের মাঝামাঝি স্থানে দ্বীপটি অবস্থিত। ২৫/৩০ মাইল দূর থেকে পাহাড়টি দেখা যায়। এ পাহাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর সবচেয়ে উঁচু স্থানটিকে অবস্থিত পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) এর পদচিহ্ন।পাহাড়টি এ্যাডামস পিক নামে এখন পরিচিত। 


এই জায়গাটি খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম এই চার ধর্মের অনুসারীদের কাছে অতি পবিত্র স্থান। এই পায়ের ছাপ  এর দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি গৌতম বুদ্ধের, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি তাদের দেবতা শিবের, এবং মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন এটি পৃথিবীর প্রথম মানব আদম -এর।

মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাস পৃথিবীর প্রথম মানুষ মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের কারণে আল্লাহ কর্তৃক স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন এবং এখানে প্রথম পৃথিবীতে নামেন। মুসলমানদের মতে আদম ৯০ ফুট লম্বা ছিলেন। আদম পৃথিবীতে এসে চরম অণুতপ্ত হয়ে পড়েন এবং তার ভুলের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থণা করতে থাকেন। তখন তিনি ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ এক পায়ে হাজার বৎসর দাড়িয়ে থাকেন এবং কান্না-কাটি করতে থাকেন। তার ফলস্বরূপ এখানে তার পবিত্র পায়ের পদচিহ্ন এর দাগ পড়ে যায়।থিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর নাম জানো, তাঁর নামেই নামকরণ হয়েছিল এই পাহাড়ের। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, হজরত আদম (আ.)-এর ডান পায়ের চিহ্নটা কেবলামুখী অর্থাৎ পবিত্র কাবার দিকে ফেরানো।  

বৌদ্ধ ধর্মমতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পায়ের ছাপটি আবিষ্কার হয়। আবিষ্কৃত হবার পর পদচিহ্নের চারপাশে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এই চূড়ার উচ্চতা ৭৩৫৯ ফুট বা ২২৪৩ মিটার। চূড়াটির চারপাশে সবুজের বিপুল সমারোহ ও আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট নদী ও ঝরণা।

এই স্থানে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো পড়ে না আবার মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টিও সেখানে পড়ে না।এই পায়ের চিহ্নটি সংরক্ষণের জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার একটি চার কোণা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছে। সেখানে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি শক্ত লোহার গেট।

পাহাড়টি সুউচ্চ হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছানো খুবই কষ্ট সাধ্য। সেখানে পৌছাতে হলে প্রথমে নৌকায় চড়ে কিছু পথ যেতে হয়, তারপর পায়ে হেঁটে উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য পাহাড়ের গা বেয়ে তিনটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়টির অনেকাংশ সবুজ গাছে ঢাকা থাকার কারণে এই পাহাড়ে রয়েছে অনেক বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়।এ পাহাড়ে আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছার পথ গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪ হাজার ধাপ। এখানে পৌঁছতে সময় লাগে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা।  

বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব। কারণ, এ পাহাড় তখন লুকিয়ে যায় মেঘের ভেতর। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে অদৃশ করে ফেলে পাহাড়টাকে।

বিশ্বের যেসব নামকরা পর্যটক এই চূড়াটি ভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলো। ১৫০৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। সেই থেকে এই পাহাড়ের নাম আদম পাহাড়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই পায়ের ছাপটি  অবিকল রয়ে গেছে।


YouTube Link: দম আঃ এর পায়ের চিহ্ন। আদম পাহাড় শ্রীলঙ্কা । আদম পাহাড়ের ইতিহাস।

পবিত্র কাবা শরিফের ইতিহাস

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান  মসজিদুল হারাম।এই মসজিদের কেন্দ্রেই রয়েছে পবিত্র কাবা শরিফ। কাবা শরিফ মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যেদিকে মুখ করে মুসলিমরা সালাত আদায় করে। হজ বা উমরা পালনের সময় মুসলমানরা কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ করে।

মসজিদুল হারাম, মক্কার হারাম এলাকায় কাবাঘরকে কেন্দ্র করে নির্মিত মসজিদ। এই এলাকাকে হারাম বলার কারণ হচ্ছে, ইসলাম আগমনের অনেক বছর আগে থেকেই এই এলাকায় হত্যাসহ যেকোন অপকর্ম নিষিদ্ধ ছিল।


হারাম এলাকার প্রাণকেন্দ্র হলো মসজিদুল হারাম, আর এই মসজিদের কেন্দ্রস্থলে কালো বর্ণের ঘরটিই হলো কাবা শরীফ শরিফ বা মহান আল্লাহর সম্মানিত কাবাঘর।


পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৬ নাম্বার আয়াতে বলেন, “নিশ্চই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত”।

এরপর হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার আদেশে কাবা শরীফ পুনঃনির্মাণ করেন।

হজরত নূহ (আ.)-এর সময় সংঘটিত মহাপ্লাবনের পর হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে পুনরায় কাবাঘর সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেন। ইবরাহিম (আ) কাবার পূর্ব কোণে হাজরে আসওয়াদ পাথর স্থাপন করেছিলেন, যা হাদিস অনুযায়ী বেহেশত থেকে আগত। এই পাথর একসময় দুধের মত সাদা ছিল কিন্তু মানুষের গুনাহ শোষণ করার কারণে এটি কালো হয়ে গিয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবিত অবস্থায় ৬ হিজরীতে আব্দুলাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। এরপর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন।

৪১৬ হিজরিতে বাদশাহ ফাহদ কাবার বাইরের দেয়াল সংস্কার করেন। ১৪১৭ হিজরিতে তিনি কাবাগৃহের ছাদ, খুঁটি, দেয়ালসহ সব কিছু সংস্কার করে নতুন ধাঁচে ঢেলে সাজান। 

এর পর থেকে নির্মাণের পরিবর্তে কাবা শরিফের সংস্কারকাজ অব্যাহত রয়েছে। ৯১ হিজরিতে উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক কাবাগৃহে ব্যাপক সংস্কার করেন।তাঁর এ নির্মাণকাজকে কাবার সর্বশেষ নির্মাণ বা সর্বশেষ সংস্কার হিসেবে অভিহিত করা হয়। এযাৎ কাবা শরিফ ১২ বার সংস্কার করা হয়েছে। 

সৌদি গেজেট মতে, কাবাগৃহের উচ্চতা পূর্ব দিক থেকে ১৪ মিটার।  পশ্চিম দিক থেকে ১২.১১ মিটার। উত্তর দিক থেকে ১১.২৮ মিটার। দক্ষিণ দিক থেকেও ১২.১১ মিটার।

ভূমি থেকে কাবার দরজার উচ্চতা ২.৫ মিটার। দরজার দৈর্ঘ্য ৩.০৬ ও প্রস্থ ১.৬৮ মিটার। বর্তমান দরজা বাদশা খালেদের উপহার, যা নির্মাণে প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। 

কাবা শরীফের সিলিংকে তিনটি কাঠের পিলার ধরে রেখেছে। প্রতিটি পিলারের ব্যাস ৪৪ সে.মি.। 

পিলারের কাঠগুলো এতই শক্ত প্রকৃতির যে, এর মতো বিকল্প কাঠ পাওয়া যায় না। এগুলো প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রা:) স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এ কাঠনির্মিত খুটির বয়স ১ হাজার ৩৫০ বছর।

কাবা শরিফের ভেতরের দেয়ালগুলো সবুজ ভেলভেটের পর্দা দিয়ে আবৃত। এই পর্দাগুলো প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা হয়।

কাবা ঘরের গিলাফের রঙ কখনোই কালো ছিল না। বর্তমানে কাবা ঘরের গিলাফের রঙ কালো ব্যবহার করা হয়। আব্বাসীয় খলিফাদের পরিবারের প্রিয় রঙ ছিল কালো। তাদের সময় থেকে কাবা ঘরে কালো গিলাফ পরানো হয়। এর আগে কাবা ঘরে সবুজ, লাল ও সাদা রঙের গিলাফ ব্যবহার করা হতো।

কাবা ঘরের ভেতরে যে কোনো দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করা যায়। তাতে কোনো বিধি-নিষেধ নেই।আবার কাবা ঘরের বাইরে যে কোনো পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যায়।

দেয়ালের ওপরের অংশে রয়েছে সাঁটানো সবুজ রেশমি কাপড়। তাতে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত স্বর্ণখচিত করে অঙ্কিত। বছরে দুইবার কাবাঘর পরিষ্কার করা হয়। পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয় জমজমের পানি, খাঁটি গোলাপ জল এবং উন্নত মানের সুগন্ধি উদ। কাবার গিলাফ তৈরি করা হয় ৬৭০ কেজি রেশম দিয়ে। গিলাফের ওপর দিকে সোনার প্রলেপকৃত রুপার চিকন তার দিয়ে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফিখচিত করা।

 মোট পাঁচ টুকরা গিলাফ বানানো হয়। চার টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি কাবার দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো মজবুতভাবে সেলাইযুক্ত। 

মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা ঘরের চাবি বনি শায়বাহ গোত্রের ওসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে হস্তান্তর করেন। বংশ পরম্পরায় এখনো তারাই কাবা ঘরের চাবির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

কাবাঘরের ৪টি কোণের আলাদা নাম আছে

(১) হাজরে আসওয়াদ (২) রুকনে ইরাকী (৩) রুকনে শামী ও (৪) রুকনে ইয়ামেনী।


১৯৪১ সালে সপ্তাহব্যাপী প্রবল বৃষ্টির কারণে কাবা চত্বরসহ মক্কার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। আর সে সময় কাবা ঘর জিয়ারতকারীদের কেউ কেউ সাঁতার কেটে কাবা ঘর তাওয়াফ করেন। সেসময় সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির কারণে কাবা চত্বরে প্রায় ৬ ফট পানি জমে যায়।

কাবা ঘরের পাশেই আছে মাকামে ইব্রাহিম নামের একটি অলৌকিক পাথর। কাবা শরিফের পূর্ব-উত্তর পাশে সোনালি বেষ্টনীতে পায়ের ছাপযুক্ত যে পাথরখণ্ডটি সংরক্ষিত রয়েছে তা হলো মাকামে ইব্রাহিম। মাকাম অর্থ স্থান বা দাঁড়ানোর জায়গা। এ পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘরের প্রাচীর গাঁথতেন

বেহেশতি একটি পাথর হলো হাজরে আসওয়াদ। আসওয়াদ মানে কালো, হাজর মানে পাথর। এই কালো পাথরটি হজরত আদম (আ.) জান্নাত থেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এই পবিত্র পাথরের দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি। বর্তমানে এটি ছোট ছোট ১২টি খণ্ডে বিভক্ত, এর ৮ টুকরা দৃশ্যমান। বর্ণিত আছে, এটি কিয়ামতের দিন তাকে স্পর্শকারী বা চুম্বনকারীর পক্ষে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। 

অনেকদিন ধরেই কাবা ঘরের বিভিন্ন ধরনের বিশেষ তালা ও চাবির ব্যবহার হয়ে আসছে। দীর্ঘ দিন পরপর পরিবর্তন করা এসব তালা কিংবা চাবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত কাবা শরিফে ৫৮টি তালা-চাবির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়।যার মধ্যে তুরস্কের সাবেক রাজধানী ও প্রাচীন শহর ইস্তাম্বুলে তোপকাপি জাদুঘরেই রয়েছে ৫৪টি চাবি।

প্রথমে কাবা শরিফ কিবলা ছিল না। বরং প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। মদীনায় হিজরতের ষোল মাস পর কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী কিবলা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের কিবলা অর্থাৎ কাবা শরীফ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়।

কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতায়াল্লির দায়িত্বে থাকেন


YouTube Video Link

পবিত্র কাবা : ইতিহাস ও অজানা তথ্য |

তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার এর পরিচয়

তালেবানের কাবুলে প্রবেশের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে তাজিকিস্তানে চলে গেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর মধ্য দিয়ে অবশেষে পতন হলো আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। বিনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। মাত্র ৪৫ মিনিটের বৈঠক, তার পরেই ক্ষমতার হস্তান্তর হল।


আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই তালেবানের পক্ষ থেকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নাম শোনা যাচ্ছে। অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি সংগঠনটি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, মোল্লা আবদুল গনিই তালেবান সরকারের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক জীবন এবং তালেবান ক্যারিয়ার:

মোল্লা আবদুল গনি বা মোল্লা ভাই ১৯৬৮ সালে আফগানিস্তানের ওরুজগান প্রদেশের উইটমাক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ এবং সোভিয়েত সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদিনে কাজ করা এই নেতা কান্দাহার প্রদেশের একটি মাদ্রাসাও পরিচালনা করতেন। যেখানে তার সাথে ছিল সাবেক কমান্ডার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকারী মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যমের মতে, ওমর এবং বড়দার মূলত ভায়রা-ভাই।পরবর্তিতে তালেবান প্রতিস্ঠা করতে   মোল্লা মোহাম্মদ ওমর সহোযোগিতা করেছিল মোল্লা আবদুল গনি।

বারাদারকে ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবান শাসনের সময় বিভিন্ন পদে দেখা যায়।যার মধ্যে- হেরাত এবং নিমরুজ প্রদেশের গভর্নর, এবং পশ্চিম আফগানিস্তানের কর্পস কমান্ডার উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি নথিতে তাকে সাবেক সেনাপ্রধান এবং কাবুলের সেন্ট্রাল আর্মি কোরের কমান্ডার হিসেবে তালিকাভুক্ত দেখায়, যদিও ইন্টারপোলের ভাষ্যমতে তিনি হলেন তালেবানদের ডেপুটি মন্ত্রী।

আবদুল গনি বারাদার ১৯৯৪ সাল থেকে তালেবান আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন, তবে তার কয়েক বছর পরেই ২০০১ সালে আমেরিকা আফগানিস্তান দখল নেয় । তারপর থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই শুরু করে তালেবানরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন এই মোল্লা আবদুল গনি। তিনি একইসাথে ছিলেন আফগানিস্তানে তালেবানের সামরিক কর্মকাণ্ডের অধিনায়ক।

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন তালেবান সরকার পতনের পর তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের করাচী শহরের কাছে একটি অভিযানে পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও যুক্তরাষ্ট্রের (সিএআই) এর একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেফতার করে। সে সময় গ্রেপ্তারের পর শিকল পরিয়ে তাকে কারাগারে নেয়ার ছবিটি নানান আলোচনা- সমালোচনার জম্ম দেয়।

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রই তার মুক্তির জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ জানায় এবং তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে পাকিস্তান তাকে মুক্তি দেয়।

তথ্যমতে, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল গনি এ সময় ইসলামাবাদ সফর করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরবর্তীতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেন যে সত্যিকার অর্থে আবদুল গনি বরাদারকে এই "উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পর" মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এমনকি ২০১৮ সালের ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কাতার সরকারের অনুরোধে আবদুল গনি বরাদারকে মুক্তি দেয়।

পাকিস্তান ভিত্তিক বিশ্লেষক জাহিন হুসেইন আল জাজিরাকে বলেন, "এই মুক্তি এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সাথে সরাসরি কথা বলা শুরু করেছে, মনে হচ্ছে এই মুক্তির জন্য সময়টা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।"

মূলত, এই কারামুক্তির পরপরই আবদুল গনিকে তালেবানের রাজনৈতিক বিষয়ক নেতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসাথে তাকে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের কূটনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালেবানের যে চুক্তি হয় তাতেও স্বাক্ষর করেন আবদুল গনি বারাদার। 


YouTube Video Link:

তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার এর পরিচয়

স্টাচু অব লিবার্টি

আমেরিকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শনগুলো একটি স্টাচু অব লিবার্টি। শত বছর ধরে আটলান্টিক সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। আমাদের আজকের এই পর্ব স্টাচু অব লিবার্টি নিয়ে।

যলিও আমরা এই স্থাপনাটিকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি জানি, কিন্তু এর আসল নাম কিন্তু স্ট্যাচু অব লিবার্টি না। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত একে 'লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে এর নাম হয়স্ট্যাচু অব লিবার্টি “


রোমান দেবী লিবার্টাসের আদলে এক নারীর অবয়ব মূর্তিটি হচ্ছে স্ট্যাচু অব লিবাটি। এই ভাষ্কর্যটির বাইরের নকশা করেছেন ফরাসি স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি এবং এর ভেতরের নকশা করেছেন আরেক ফরাসি স্থপতি গুস্তাভ আইফেল,যাকে আমরা আইফেল টাওয়ারের নকশাকারী হিসেবে জানি।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি আসলে ছিল ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে মার্কিনীদের জন্য একটি উপহার। ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলা আমেরিকান বিপ্লবের সময়ে ব্রিটেনের কাছ থেকে আমেরিকার স্বাধীনতার সংগ্রামে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। সেই সহযোগিতার স্মৃতি হিসেবে আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে ১৮৮৬  ফ্রান্স এই ভাস্কর্যটি আমেরিকাকে উহার দেয়।

আমেরিকার নিউইয়র্ক লিবার্টি দ্বীপে স্টাচু অব লিবার্টি স্থাপন করা হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বহু ইউরোপীয় অভিবাসী নিউইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রবেশ করছিল। এই ভাষ্কর্যটি সেইসব অভিবাসীদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাত।

বর্তমানে লিবার্টি আইল্যান্ড নামে পরিচিত এই দ্বিসটির পূর্ব নাম ছিল “বেডলে আইল্যান্ড”,১৯৫৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করা হয়।।প্রতিবছর প্রায় ৩০-৪০ লাখ মানুষ এই ভাস্কর্য দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসেন।

একহাতে একটি মশাল এবং অপরহাতে একটি বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে “স্ট্যাচু অব লিবার্টি” নামের এই স্থাপনাটি। স্ট্যাচু অব লিবার্টি একহাত দিয়ে যে বইটি ধরে রেখেছে সেই বইয়ের ওপরে লেখা আছে একটি তারিখ, আর তা হল “৪ জুলাই, ১৭৭৬”। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার তারিখ।এই তারিখেই ব্রিটিশ শাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছিল।তার পায়ের পায়ে একটি ভাঙ্গা শিকল দেখা যায়, যেটা তৎকালীন সময়ের দাসপ্রথা বিলুপ্তির প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

শুরু থেকেই স্ট্যাচু অব লিবাটি কে নিউইয়কের হাডসন নদীতে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। ভাষ্কর্যটির স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি মূর্তিটি নকশা করেছিল মিশরের সুয়েজ খালের পাড়ে স্থাপনের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মিশর এই ভাষ্কর্য নির্মানের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, পরবর্তীতে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় স্থাপন করা হয়।

স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রায় সম্পূর্ণ মূর্তিটিই তৈরী করা হয়েছে ফ্রান্সে। লোহাড় ফ্রেমের উপর তামার পাত দিয়ে, ৩০০ টি খন্ডে তৈরী হয়েছে ভাস্কর্যটি। ১৮৮৫ সালে ২১৪ টি বাক্সে ভরে জাহাজে করে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় পাঠানো হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর, তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ভাষ্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

 স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রথম দিকে দেখতে সবুজ রঙের ছিল না, এমনকি বর্তমানের এই সবুজ রংও করা হয়নি। ভাস্কর্যটি তামার তৈরী হওয়ায়, শুরুতে এর রং ছিল তামাটে। দীর্ঘকাল ধরে, এর চারদিকে থাকা সমুদ্রের জলীয়বাষ্পের সাথে তামার বিক্রিয়ার কারণে মূর্তিটি সবুজ রং ধারন করছে। এটি এক বিশেষ ধরনের মরিচা।

৯৩ মিটার লম্বা এই ভাস্কর্যটির ওজন হল প্রায় ২০৪ মেট্রিক টন।এই ভাস্কর্যের ভিতরে একটি সিঁড়ি রয়েছে, এই ৩৫৪টি সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে মাটি থেকে একদম ওপরের মশাল পর্যন্ত যাওয়া যায়। এই ভাস্কর্যের উচ্চতা বাইশ তলা উঁচু বিল্ডিং এর সমান, বেদি থেকে ভাস্কর্যের মশালের শিখর পর্যন্ত উচ্চতা ৯৩ মিটার বা ৩০৬ ফুট, এর মোট ওজন ২২৫ টন। ভাস্কর্যের মুকটের কাছে রয়েছে ২৫ টি জানালা, যা অনেকটা ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে কাজ করে।

এই ভাস্কর্যের গায়ে যখন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস আছড়ে পড়ে তখন ভাস্কর্য ্য্ ইঞ ও ভাস্কর্যটি ৩ইনঙি ও টর্চটি ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত নড়তে থাকে।

সেসময়ে এই ভাস্কর্যটি তৈরি করতে প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ খরচ হয়েছিল, যার বর্তমান মূল্য দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বানাতে ফ্রান্সের খরচ হয়েছিল আড়াই লাখ মার্কিন ডলার।

এই ভাস্কর্যটি যে স্থাপনার ওপর বসানো হয়েছে সেটা তৈরি করতে আমেরিকার খরচ হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ডলার

স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ঘিরে দু’টি দুঃখজনক ঘটনা রয়েছে, আর সেটা হল এপর্যন্ত দুইজন মানুষ স্ট্যাচু অফ লিবার্টি থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রথম ঘটনাটি ১৯২৯ সালে ও দ্বিতীয় আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৩২ সালে। বর্তমানে এই ভাস্কর্যের সিঁড়িটি জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বন্ধ রাখা হয়েছে।


YouTube Video Link

আইফেল টাওয়ার

  শিল্প সাহিত্য ও ঐতিহ্যের নগরী হিসেবে খ্যাত ফ্রান্স। ফ্রান্সের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হচ্ছে প্যারিস।

প্যারিসের কথা শুনলেই সবার আগে মাথায় আসে আইফেল টাওয়ারের নাম। বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা হচ্ছে বুর্জ খলিফা। আচ্ছা বলুন তো উনিশ শতকে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা কোনটি ছিল। উত্তর হচ্ছে আইফেল টাওয়ার।প্যারিসের ঐতিহ্যবাহী শেন নদীর পাড়ঘেষা চ্যাম্প ডি মার্সে তে অবস্থিত এই স্থাপনাটি।

আমাদের আজকের এই পর্ব আইফেল টাওয়ারকে নিয়ে। আজকে আপনাদের বলবো আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস ও এর অজানা তথ্য,হতে পারে যা আপনি আগে কখনো শুনেননি।


১৮৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার যখন ফরাসী বিপ্লবের স্মৃতিকে একটি নিদর্শনে ধরে রাখার জন্যই আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 

এই টাওয়ার নির্মাণ কাজের জন্য বিখ্যাত সেতু প্রকৌশলী আলেকজান্ডার গুস্তাভ আইফেলকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি পেটা লোহার দিয়ে ৩০০ মিটার বা ৯৮৪ ফুট উঁচু এই মিনারটি নির্মাণ করেন। তার নামানুসারেই এই মিনারটির নাম রাখা হয় ‘আইফেল টাওয়ার’।এটি বানানোর জন্য মোট ৭৮ লাখ ফ্রাঙ্ক খরচ হয়েছিল,যার বড় অংশটা তিনি নিজের পকেট থেকে দিয়েছিলেন৷ এমনকি সময়মত কাজ শেষ করার জন্য নিজের সম্পত্তি বন্ধকও রেখেছিলেন তিনি।

আইফেল টাওয়ার তৈরির কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি, আর সবমিলিয়ে কাজ শেষ হয় ১৮৮৯ সালের ৩১ মার্চ। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছে সর্বমোট ২ বছর ২ মাস ৫ দিন, এই টাওয়ার তৈরিতে করতে কাজ করেছেন ৩০০ জন শ্রমিক। তারা ১৮,০৩৮ টুকরো রড আয়রন ও ২৫ লাখ নাটবোল্ট সংযোজন করেন। নির্মাণ শেষে এর ওজন দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার টন এবং উচ্চতা ৯৮৪.২৫ ফুট। 

আইফেল টাওয়ার দু’একর জমি জুড়ে স্থাপিত। টাওয়ারটির চৃড়া থেকে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যায়। অন্যভাবে বলতে গেলে ৭৫ কিলোমিটার দূর থেকে আইফেল টাওয়ারের চূড়া দেখা যায়। অবশ্য এতো উচূতে উঠতে হলে আপনাকে ১৬৬৫টি সিঁড়ি পার করতে হবে।  উদ্বোধনের ২০ বছর পর্যন্ত এই আইফেল টাওয়ারই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা৷

শুরুতে আইফেল টাওয়ারকে মনে করা হতো শহরের সবচেয়ে খারাপ স্থাপনা। এবং এই টাউয়ার নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলনো হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে এই আইফেল টাওয়ারটাই শহরের প্রতীক হিসেবে জায়গা করে নেয়।

 মোট ২০ হাজারটি বাল্ব,৩৩৬টি প্রজেক্টর আলোকিত করে রাখে এই টাওয়ারকে। আইফেল টাওয়ার সবচাইতে সুন্দর দেখায় রাতের বেলায়। তবে সারাত আয়ফেল টাওয়ার  আলোকিত হয়ে থাকে না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রতি ঘণ্টায় ১ বার ৫ মিনিটের জন্য ঝলমল আইফেল টাওয়ার যা চলে রাত ১ টা পর্যন্ত।

 প্রতি ৭ বছর পর পর আইফেল টাওয়ারে রঙ করা হয়।এই রঙের কাজ চলে প্রায় আঠারো মাস ধরে, তবে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, এই ১৮ মাসে একদিনের জন্যও জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকে না আইফেল টাওয়ার।‌‌ ৬০ টন রং লাগে আইফেল টাওয়ারের জন্য। এ পর্যন্ত ১৮ বার আইফেল টাওয়ার রং করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আইফেল টাওয়ার রং করতে ব্যয় হয় প্রায় ৪ মিলিয়ন ইউরো। 

১৯০৯ সালে এর চুড়ায় বসানো হয় একটি বেতার এন্টেনা। এতে টাওয়ারের উচ্চতা আরও ২০.৭৫ মিটার বা ৬৬ ফুট বেড়ে যায়। সেই থেকে আইফেল টাওয়ারকে‌  Radio Transmision‌ জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। পরে আইফেল টাওয়ারে একটি টিভি এন্টেনাও বসানো হয়েছে। বর্তমানে এই টাওয়ারে ১২০টি আ্যন্টেনা রয়েছে।

রড আয়রন দিয়ে নির্মিত হওয়ার কারণে টাওয়ারটির ধাতব পদার্থ বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড়-ছোট হয়। উষ্ণতার কারণে গ্রীষ্মকালে এর দৈর্ঘ্য বৃ্দ্ধি পায়। গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়লে এর আকার বেড়ে যায় প্রায় ৬.৭৫ ইঞ্চি। ঝড়ো হাওয়ায় এটি সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাঁপতে পারে!

টাওয়ারটির ভেতরে অবস্থিত দুটি রেস্তোঁরা হলো লা 58 ট্যুর আইফেল এবং লা জুল ভার্ন।এখানে একটি সংবাদপত্র অফিস আছে। এছাড়াও এতে রয়েছে পোস্ট অফিস, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার ও একটা থিয়েটার।

প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ টাওয়ারটি বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্যারিসে নাৎসি বাহিনীর আগমনের আগে এর লিফটের তার কেটে দিয়েছিল মিত্র বাহিনী। নাৎসিরা যেন টাওয়ারটি ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

যে আইফেল টাওয়ার নির্মান করা হয়েছিল মাত্র ২০ বছরের জন্য,যে আইফেল টাওয়ার নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ আন্দোলন হয়েছিল,সেই আইফেল টাওয়ার আজকে বিশ্ব সেরা স্থানগুলোর একটি।প্রতিবছর এই টাওয়ার দেখতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ আসে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ১৮৮৯ সাল থেকে এখন অবধি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন পর্যটক আইফেল টাওয়ারে এসেছেন। ১৯৯১ইউনাস্কো আয়ফেল টাউয়ারকে  বিশ্ব ঐতৈহ্যের স্থান হিসেবে সিক্রৃতি দেয়।

বর্তমান বিশ্বে আইফেল টাওয়ারের থেকে উঁচু টাওয়ার বা স্থাপনা অনেক রয়েছে। তবে আইফেল টাওয়ার এখনো পৃথিবীর সেরা স্হাপনা হিসেবে ধরা হয় এর নিজস্ব ইতিহাস ও বৈচিত্র্যে কারণে। আর তাই বিশ্ব মানচিত্রে আইফেল টাওয়ার এখনও অনন্য।

YouTube Video Link: 

মেসির ছোট থেকে বার্সেলোনা এবং পিএসজিতে আসার গল্প।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।যাকে আমরা মেসি নামে সবচেয়ে বেশি চিনি।

মেসি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে ২৪ জুন ১৯৮৭  সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া একজন খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন।তার পরিবারের আদি নিবাস ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৮৮৩ সালে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন।পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন, যার কোচ ছিলেন তার পিতা নিজেই। ১৯৯৫ সালে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন।


১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে।স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখায়, তবে সেসময় তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতিমাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার।বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন।আর বার্সেলোনা মেসির চিকিত্সার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় চলে আসেন। সেখানে মেসি বার্সেলোনার যুব একাডেমিতে খেলতে শুরু করেন।

বার্সেলোনার যুব প্রকল্পে তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেখাতে শুরু করেন এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার মূল দলে তাঁর অভিষেক হয়।২০০৮-০৯ মৌসুমে তিনি বার্সেলোনার মূল দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। সে মৌসুমেই তিনি বার্সেলোনাকে প্রথমবারের মত এবং প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন।

গত সপ্তাহে বার্সেলোনার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্কচ্ছেদ করে অনেকটা বধ্য হয়ে মেসি যোগ দেন পিএসজিতে।

বার্সেলোনার হয়ে এই ২১ বছরে মেসি ১০টি লা লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ এবং ৬টি কোপা দেল রেসহ মোট ৩৩টি শিরোপা জয় করেছেন, যা বার্সেলোনার ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ। একজন অসাধারণ গোলদাতা হিসেবে মেসির দখলে রয়েছে লা লিগায় সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল দেয়ার রেকর্ড। তিনি ৫২০টি ম্যাচ খেলে  ৪৭৪ গোল করেছেন ,লা লিগার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক গোলের মালিক ক্রিস্টিয়ানো  রোনালদো। তার গোলসংখ্যা ৩১১ টি।

লা লিগা ও ইউরোপের যেকোনো লীগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করেছেন মেসি ৫০টি,৭৩ টি গোল করে ইউরোপে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হচ্ছেন মেসি, এছাড়া ৯১টি গোল করে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটিও মেসির দখলে সর্বোচ্চ, এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল করেছেন মেসি, ২৬ টি।

লা লিগায় সর্বোচ্চ হ্যাট্রিক করেছেন মেসি, ৩৬। আর ৮টি হ্যাট্রিক করে চ্যাম্পিয়নস লীগের (৮) সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকের রেকর্ডটিও মেসির দখলে। পাশাপাশি মেসি একজন সৃষ্টিশীল প্লেমেকার হিসেবেও পরিচিত।

তিনি লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল সহায়তাকারীর কৃতিত্বেরও মালিক। তিনি ১৮৩টি গোল করতে সহায়তা করেছেন। ক্লাবের হয়ে তিনি ৭০০ এর অধিক পেশাদার গোল করেছেন।লিওনেল মেসি টানা চারবারসহ মোট ছয়বার ব্যালন ডি'অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। 

বার্সেলোনার হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও সর্বাধিক গোলের মালিক লিওনেল মেসি। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার জার্সিতে মেসির গোলসংখ্যা ১২০ টি। চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসি হয়তো আরও গোল করবেন। তবে তা আর বার্সেলোনার জার্সিতে করতে পারবেন না।.

গেল সপ্তাহে বছরে ৩৫ মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা বেতনে দুই বছরের চুক্তিতে পিএসজিতে যোগ দিয়েছেন মেসি।এর বাইরে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে চুক্তিপত্রে।পিএসজির সঙ্গে সব মিলিয়ে চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হবে।

পিএসজিরতে মেসি ৩০ নম্বর জার্সি পরে খেলবেন। কারণ বার্সেলোনায় প্রথম দুই মৌসুমে তিনি ঐ নম্বরের জার্সিই পরেই খেলেছেন। এরপর তিনি ১৯ নম্বরের জার্সি এবং পরে সম্মানজনক ১০ নম্বর জার্সি পরেন।

বর্তমানে অনেকেই মেসির সমালোচনা করে বলছেন, এতই যদি তিনি বার্সাকে ভালোবাসেন, তাহলে বিনা বেতনে বা আরও কম বেতনে কেন বার্সায় খেললেন না তিনি?

 ব্যাখ্যা খুঁজে বের করেছে স্প্যানিশ ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ফুটবল এসপানা। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, মেসি চাইলেই বিনা বেতনে বা অস্বাভাবিক কম বেতনে বার্সেলোনায় খেলতে পারতেন না!

‘বার্সেলোনায় মেসির বিনা বেতনে খেলা আইনত অবৈধ হতো। স্প্যানিশ আইন অনুসারে, যেকোনো নতুন চুক্তিতে খেলোয়াড়ের বেতন তাঁর আগের চুক্তির বেতনের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হয়"

বার্সার সঙ্গে মেসির আগের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে ৩০ জুন, ১ জুলাই থেকেই কাগজে–কলমে বার্সার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক ছিল না।

বার্সার ঋণের বোঝা গত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে, অন্যদিকে বার্সার বেতনের বিলও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, গত মৌসুম শেষেও বার্সার বেতনের বিল ছিল ক্লাবের আয়ের ১১০ শতাংশ! অর্থাৎ প্রতি মৌসুমে শুধু বেতন দিতেই আয়ের পুরোটা খরচ করতে হয়, এর পাশাপাশি ক্লাবের পরিচালন ব্যয় তো আছেই! অনেক কাটছাঁটের পরও মেসিকে ছাড়াই বার্সার বেতনের বিল তাদের আয়ের ৯৫ শতাংশ! যেখানে এই আয়ের ৭০ শতাংশের নিচে খরচ করার নিয়ম বেঁধে দিয়েছে স্প্যানিশ লিগ।

বিবিসি স্পোর্টসের মতে, মেসি যদি বিনা বেতনেও খেলতে চাইত, বার্সা তাঁকে নিবন্ধন করাতে পারত না।তাই দেখা যাচ্ছে অনেকটা নিয়মের বেড়াজালে কারণেই মেসিকে বার্সেলোনা ছাড়তে হয়েছে। এখানে মেসি বা বার্সেলোনা কতৃপক্ষ অপারগ ছিল।

৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলারের আগমনের খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পিএসজির অনুসারীর সংখ্যা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ছবি শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে।ইনস্টাগ্রামে পিএসজির অনুসারী এখন ৪ কোটি ৩৪ লাখ। অথচ এক সপ্তাহ আগেও সংখ্যাটি ছিল ৩ কোটি ৭৬ লাখ। এ কদিনেই ৫৮ লাখ বেড়েছে এবং সেটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মেও একই ধরনের অবস্থা।এদিকে ইনস্টাগ্রামে পিএসজিও পড়ে আছে মেসিকে নিয়ে। টানা ১৭টি পোস্টে মেসি ছাড়া আর কেউ ঠাঁই পাননি।অন্যদিকে মেসির ৩০ নম্বর জার্সিটি পিএসজির অনলাইন স্টোরে আসার ৩০ মিনিটের মধ্যে সব বিক্রি হয়ে গেছে। যেখানে একেকটি জার্সির মূল্য ছিল বাংলাদেশী টাকায় পনের হাজার টাকারও বেশি।

যাইহোক,আশা করি মেসির যে জাদুকরী ফুটবল নৈপুণ্য আমরা বার্সেলোনাতে দেখেছি, তার ধারাবাহিকতা পিএসজিতেও অখিন্না থাকবে।


YouTube Video Link

মেসির ছোট থেকে বার্সেলোনা এবং পিএসজিতে আসার গল্প।

নীল নদ | পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদ | Nile River: The Longest River on Earth.

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম একটি হলো মিশরীয় সভ্যতা। এই সভ্যতার উৎপত্তি নীলনদকে কেন্দ্র করেই।  

আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত পৃথিবীর বৃহত্তম নদের নাম নাইল, যাকে আমরা নীল নদ নামে চিনি। প্রাচীনকাল থেকেই মিসরের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীল নদকে কেন্দ্র করে।পৃথিবীর বৃহত্তম এই নদের আয়তন ৬৬৫০ কিলোমিটার। এর সর্বোচ্চ প্রশস্ততা ২.৮ কিলোমিটার। গড় গভীরতা ২৬-৩৬ ফুট (৮-১১ মিটার)। এই নদটি আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় ১০টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে সুদান, দক্ষিণ সুদান, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, কঙ্গো, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, উগান্ডা ও মিসর।  নদীটা উগান্ডার ভিক্টোরিয়া লেক থেকে উত্পন্ন হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে।


এর দুইটি উপনদ রয়েছে, শ্বেত নীল নদ ও নীলাভ নীল নদ। এর মধ্যে শ্বেত নীল নদ দীর্ঘতর। শ্বেত নীল নদ আফ্রিকার মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়েছে। নীলাভ নীল নদ ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সুদানে প্রবেশ করেছে। দুইটি উপনদী সুদানের রাজধানী খার্তুমের নিকটে মিলিত হয়েছে।

এই নদের নামকরণ নিয়েও বহু বিবাদ রয়েছে। যেমন এক ধারণা অনুযায়ী নীল শব্দটি সেমেটিক শব্দ নাহাল থেকে এসেছে,যার অর্থ নদী। আবার অন্য ধারণা অনুযায়ী নীল শব্দটি গ্রিক শব্দ নেলস থেকে এসেছে, যার অর্থ উপত্যকা।

মিশরের প্রায় ৮ কোটি মানুষ বসবাস করে নীলনদের উপকূলে, যা মিশরের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার সমান। মিশরের সব চেয়ে বড় শহর আলেকজান্দ্রিয়া নীল নদীর মোহনায় অবস্থিত যেখানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাসস্থান। 

প্রাচীন মিশর সভ্যতা প্রায় পুরোটাই নীলনদের পানির উপর নির্ভর ছিল। এই নদের পানি মানুষ পানীয় বা কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করত। যেহেতু মিশরে বৃষ্টিপাত খুব কম হয় তাই ইথিওপিয়াতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে তার ফলে মিশরে বন্যা সৃষ্টি এবং সে বন্যার কাদামাটি কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো। 

এছাড়াও পিরামিড তৈরিতে নীলনদ এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পিরামিডের পাথর নিয়ে আসার জন্য নীল নদকে মিশরীয়রা পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। নীলনদের দক্ষিণ প্রবাহটি ভয়ংকর নীল কুমিরের জন্য বিখ্যাত।প্রতি বছর প্রায় ২০০ জনেরও বেশি মানুষ ভয়ংকর নীল কুমিরের শিকার হয়। তাদের বেশিরভাগই মৎসজীবী অথবা স্থানীয় মানুষ। আর এভাবেই নীলনদ মিশরীয় সভ্যতাকে দিয়েছে এক অনন্য তথা ঐতিহাসিক রূপ। তাই বলা যায় এই নীল নদ মিশরীয় সভ্যতার একমাত্র ধারক ও বাহক।

দেড়শ বছর আগেও আফ্রিকার অনেক অঞ্চলই ছিল ইউরোপীয়দের কাছে অনাবিষ্কৃত। ভূগোলবিদ আর পর্যটকদের কাছে তাই বরাবরই আফ্রিকা ছিল আকর্ষণীয়। বিশেষ করে নীল নদের উৎস ছিল এক মহারহস্য। সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে বিফলও হয়েছেন অনেকেই। ১৮৫৬ সালে লন্ডনের রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি নীলের উৎস খুঁজে বের করতে এক অভিযানের বন্দোবস্ত করে। এরপর অনেক প্রচেষ্টার পর ১৯৬২ সালে হ্যানিঙ স্পেক নীল নদের উৎস খুঁজে বের করেন।

‘নীল নদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা পৃথিবীর অন্য কোনো নদ-নদীর নেই।’ কথাটি বলেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সেরা চিকিৎসক, গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক ইবনে সিনা।

উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ প্রান্তের মাঝে এর দূরত্ব সর্বাধিক। এই নদ প্রবাহিত হয় বড় বড় পাথর ও বালুময় প্রান্তরের উপর দিয়ে, যাতে কোন শ্যাওলা ও ময়লা-আবর্জনা নেই

নীল নদের পানিতে কোন পাথর বা কংকর সবুজ হয় না। বলাবাহুল্য যে, নীল নদের পানির স্বচ্ছতার কারণেই এই রকম হয়ে থাকে।  আর সব নদ-নদীর পানি যখন কমে যায়, এর নদের পানি তখন বৃদ্ধি পায়, আর অন্যসব নদীর পানি যখন বৃদ্ধি পায়, নীল নদের পানি তখন কমে যায়।

প্রচলিত মিথ অনুযায়ী, এক সময় নীল নদের পানি প্রবাহের জন্য এখানে সুন্দরী নারীকে উৎসর্গ করা হতো। ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত মিশরীয়রা খ্রিস্টান ছিল। এ সময়ে মিশরের এই নীল নদ প্রতি বছর শুকিয়ে যেত। সেসময় মিশরীয়রা একটি কুসংস্কার মেনে চলত। সেটি ছিল শুকিয়ে যাওয়া নদীতে কোনো পিতামাতাকে রাজি করিয়ে তাদের সুন্দরী, ষোড়শী এবং কুমারী মেয়েকে অলংকার ও সুন্দর পোশাক পরিয়ে নীল নদের শেষ সীমানায় যেখানে ডুবন্ত পানি থাকত সেখানে ভাসিয়ে দেয়া হতো। 

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুখ (রাঃ) খেলাফতের সময় বিখ্যাত সাহাবি হজরত আমর ইবনে আছা (রাঃ) নেতৃত্বে ইসলাম কায়েমের জন্য ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে মিশর বিজয়ী হয়।

এরপর তিনি মিশরের মানুষকে জানান যে ইসলাম কখনো এ ধরণের কুসংস্কার সমর্থন করে না। অন্যায়ভাবে কোনো মানুষের জীবন এভাবে জলাঞ্জলি দেয়া ইসলামে কখনোই বৈধ হবে না। কোথাও এভাবে নারী বলি দেয়ার নিয়মের বৈধতা নেই। এরপর হয়রত ওমর ফারুক র প্রচেষ্টায় এই কুসংস্কার বন্ধু হয়।


YouTube Video Link 

নীল নদ | পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদ | Nile River: The Longest River on Earth.

আমাজনের ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণী

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও রহস্যময় বন হচ্ছে আমাজন বন। ব্রাজিলে অবস্থিত এ বন অত্যন্ত দুর্গম। এত দুর্গম যে, এ বনের অনেক জায়গায় আজও মানুষ পৌঁছাতে পারেনি। এখানে ঘন লতাপাতা ও গাছপালা থাকায় দিনের বেলায়ও অনেক স্থান অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। নাম না জানা অসংখ্য গাছপালাসহ বিচিত্র প্রাণী রয়েছে এখানে। এসব প্রাণী দেখতে যেমন বিস্ময়কর, তেমনি ভয়ংকরও বটে। আজকে আপনাদের জানাবো এই গহিন জঙ্গলে বসবাসকারী কিছু ভয়ংকর প্রানী সম্পর্কে 



পয়জন ডার্ট ফগ

ছোট সাইজ এবং রঙ-বেরঙের চমকানো শরীর দেখে অনেকেই নিরীহ বলে মনে করেন ব্যঙকে। এইগুলো দেখতে এতো সুন্দর যে ইচ্ছে হবে হাতে নিয়ে একটু এর শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে। যদি আপনি এমনটা করেন তাহলে যেনে নিন আপনার মৃত্যু অবধারিত।কারণ আমাজনে বসবাসকারী এ ক্ষুদ্র ব্যাঙগুলো পৃথিবীর বিষাক্ত প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম।এর বিষ রয়েছে শরীরের চামড়ার উপরে।এই ক্ষুদ্রাকৃতির উজ্জ্বল রঙের ব্যাঙকে শিকারিদের দূরে রাখার এক সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত।পয়জন ডার্ট ফগ মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, কিন্তু এর বিষ দশজন শক্ত-সমর্থ মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম।


গ্রিন অ্যানাকোন্ডা

আমাজন বলতেই অ্যানাকোন্ডা সাপের কথা চোখে ভাসে। এই অ্যানাকোন্ডারই অরেক জাত হচ্ছে গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। একে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ। আমাজন নদীতেই এদের দেখা মেলে। এদের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়। আর ওজন ২৫০ কেজিরও বেশি।


পিরারুকু

বিশ্বের সুস্বাদু জলের বৃহত্তম মাছ এটি। পিরারুকু নামেও পরিচিত এরা। এদের দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ ফুট হয়। এরা মাংসাশী হয়।


ক্যান্ডিরু 

এটি একটি ছোট প্রজাতির রক্তপিপাসু মাছ। এদের ভ্যাম্পায়ার ফিশ-ও বলা হয়ে থাকে। বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরুতে এদের পাওয়া যায়।


পিরানহা

এই মাছের মধ্যে রেড বেলি পিরানহা খুবই ভয়ানক। আমাজন নদীর ত্রাস বলা হয় এই মাছকে। এরা ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। শিকার করে দলবদ্ধ ভাবে। এদের দাঁতে এত ধার যে নিমেষে বড় কোনো পশুকে সাবড়ে দিতে পারে।এদের কামড় ভীষণ শক্তিশালী। এতটাই শক্তিশালী যে মানুষের মাংস পর্যন্ত ছিঁড়ে খেতে ফেলতে পারবে। এদের নরখাদকও বলা হয়। তবে সাধারণত এরা মরা প্রাণীর মাংসই বেশি খেয়ে থাকে। খুব ক্ষুধার্ত থাকলে এরা একক বা দলবদ্ধভাবে মানুষকে আক্রমণ করে। এজন্যই এরা এত ভয়ংকর।


বুল শার্ক

সাধারণত হাঙরদের দেখা মেলে সমুদ্রে। কিন্তু আমাজন নদীতেও এক ধরনের হাঙ্গর দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম বুল শার্ক। বিশাল দেহী এই প্রাণিটি লম্বায় ১১ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।আর ওজন ৩০০ কেজিও হতে পারে।


ইলেকট্রিক ইল

এরা ক্যাটফিশ প্রজাতির। দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে আট ফুটের মত হয়। এদের শরীরে ৬০০ ভোল্টের মত বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়। 


ব্ল্যাক কেমান

আমাজনে এক ধরনের বিশালদেহী কুমির দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম ব্ল্যাক কেমান। এদের আমাজন নদীর রাজা বলা হয়। এই প্রাণিটি প্রায় ২০ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে।কুমিরের বড় প্রজাতির মধ্যে অন্যতম হলো ব্ল্যাক কেইমেন। 

এদের আমাজনের হ্রদ এবং ধীরে প্রবাহিত হয় এমন নদী ও ঋতুভিত্তিক বন্যায় ভেসে থাকতে দেখা যায়। এদের গায়ে ছোপ ছোপ কালো রং থাকায় খুব সহজে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। 


জাগুয়ার

জাগুয়ার বিরল প্রজাতির মধ্যে অন্যতম একটি প্রানি। সিংহ ও বাঘের পরে সবচেয়ে বড় প্রাণী হলো এই প্রাণী। আমাজনের বন্য প্রাণীদের মধ্যে জাগুয়ার সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক ও হিংস্র

মাংসাশি প্রাণী। এদের খাদ্যতালিকা বেশ বিস্তৃত। এরা বনের নানা প্রাণী খেয়ে থাকে। যদিও এরা মানুষ খায় না, কিন্তু সহজেই মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। জাগুয়ার পানি থেকে শুরু করে গাছের মগডাল পর্যন্ত উঠে শিকার করতে পারে। এরা ব্ল্যাক কেইমেন থেকে শুরু করে হরিণ, কুমিরসহ আমাজনে প্রাপ্ত প্রায় সব প্রাণীই খায়।


ফুটন্ত পানি নদী,

আমাজনের এক বিষ্ময়কর জায়গা হচ্ছে এই ফুটন্ত গরম পানির নদী। অবিশ্বাস্য হলেও এমন নদী আমাজনে রয়েছে। নদীটির পানির তাপমাত্রা  ২৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দৈনন্দিন উদাহারণ দিয়ে বোঝাতে গেলে বলতে হয়, কফি তৈরির গড় তাপমাত্রা ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তাই এই নদীর পানি কতটা গরম তা শারীরিকভাবে কল্পনা করাটাও কঠিন।এই নদীটি পেরুর  ৮২ ফুট (২৫ মিটার) লম্বা এবং প্রায় ২০ ফুট (ছয় মিটার) গভীর।


YouTube Video Link

আমাজনের ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণী,যা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন!!The Most Dangerous Animals in the Amazon

আমাজন বন

আমরা যতই চাঁদ, মহাকাশ জয় করিনা কেন, পৃথিবীর অনেক রহস্যই আজো আমাদের অজানা রয়ে গেছে। আমাজন জঙ্গল এমনই একটি রহস্য। আমাজন জঙ্গল নিয়ে আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর আগ্রহ থাকবেই বা না কেন! এই পুরো জঙ্গলটাই তো একটা রহস্য আর বিষ্ময়ে ভরপুর।

আমাজনকে রেইনফরেস্ট  বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই না যে এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়। বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারনে। প্রচন্ড গরমের কারনে এখানে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি যা আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার অন্যতম কারন।

আমাজান বন আমাজন নদীর অববাহিকায় পৃথিবীর সবচে বড় নিরক্ষীয় বন,যার আয়তন সাড়ে ৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার বা ৩.৪ মিলিয়ন বর্গ মাইল,পৃথিবী জুড়ে যে রেইনফরেস্ট রয়েছে তার অর্ধেকটাই হচ্ছে এই আমাজন বন

যদি এই রেইন ফরেস্টটি একটি দেশ হতো, তাহলে বিশালতার দিক থেকে এটি হতো বিশ্বের নবম বৃহত্তর দেশ। এই বন বাংলাদেশর তুলনায় ৩৮ গুন বড়। বৃটেন ও আয়ারল্যান্ডকে ১৭ বার এই ফরেস্টে রাখা যাবে।দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মোট আয়তনের ৪০% এই বনের দখলে। 

আমাজন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগের ৯টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। এর ৬০ ভাগ ব্রাজিলে, ১৩ ভাগ পেরুতে এবং বাকি অংশ কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গুয়ানা, সুরিনাম এবং এবং ফরাসি গায়ানাতে অবস্থিত।

এ বনে রয়েছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট–পতঙ্গ, ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ,আমাজনে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড় ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব–অণুজীব।

পাশাপাশি আমাজন নদীতে ৩০০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী আছে।আমাজন জঙ্গলের পেরুর অংশে একটি মাত্র গাছে ৪৩ হাজার প্রজাতির পিপড়া পাওয়া গিয়েছে।বিশ্বে খাবারের যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তার  ৮০ শতাংশই আসে আমাজন জঙ্গল থেকে। এছাড়া বর্তমানে যেসব ওষুধ তৈরি হয়, তার প্রায় ২৫ শতাংশ উপাদান আসে আমাজন থেকে।নানা রকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ এই আমাজন।এই বনে প্রায় ১৬০০০ হাজার প্রজাতির ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে।

পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করত, বিশাল এ বনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে এলডোরাডো নামের এক গুপ্ত শহর। ধারণা করা হতো এই শহরটি পুরোটা স্বর্ণের। এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক গল্প থেকে।

সে গল্পে বলা হয়েছে, ‘এলডোরাডো’ নামক সোনায় মোড়ানো শহরটি পাহারা দেয় এক শ্রেণির বিশেষ নারী যোদ্ধারা। যাদের গল্পে ‘আমাজন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে এই ‘এলডোরাডো’ শহর আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু কেউ এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ পায়নি। শহরের সন্ধান না পেলেও স্থায়ী হয়ে যায় সেই নারী যোদ্ধাদের নাম। তাদের নামানুসারেই এই জঙ্গলের নাম হয় আমাজন জঙ্গল।


সম্প্র্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন  অ্যামাজনের গাছের প্রজাতির সংখ্যার তালিকা তৈরি করতে তিনশ বছর লেগে যাবে। এরই মধ্যে জাদুঘরে রাখা ৫ লাখেরও বেশি উদ্ভিদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির গাছের সংখ্যা আবিষ্কৃত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও প্রায় চার হাজার বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মিলতে পারে পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত বনে। ।

অ্যামাজনে আছে মাংসখেকো গাছ। এই গাছের আঠায় প্রজাপতি, ফড়িংয়ের  মতো ছোট প্রাণীরা আটকে যায়। তখন গাছের পাতা ঢেকে গিলে নিতে শুরু করে।আমাজনে আছে ‘লবস্টার ফ্লাওয়ার’। এই ফুলটি লম্বায় দেড় থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।এর একেকটি পাতা ৬ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এ ছাড়া অ্যামাজনে ৩ হাজারেরও বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। আছে রাবার গাছ। অ্যামাজন জঙ্গলের রাবার গাছগুলো একেকটা ১০ তলা বিল্ডিং এর সমান উঁচু হয়ে থাকে। চকো-বীন বা চকলেট উৎপাদনকারী গাছেরও ঠিকানা বনে।

 অ্যামাজনের গভীরে আছে কফি গাছ। দৈত্যাকার পদ্মফুলের দেখা মিলবে এখানে। ভিক্টোরিয়া অ্যামাজোনিকা অ্যামাজনের আরেক বিস্ময়। প্রায় ৩ ডায়ামিটারের এই পদ্মফুল শুধু এই বনেই গহিনেই দেখা মেলে।আছে ফুটন্ত গরম পানির নদী, বিষাক্ত ব্যাগ যার বিষ ১০ জন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে।আছে ভয়ংকর মানুষখেকো পিরানহা,

এই আমাজন বনের ভেতরেই আছে আয়তনে পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম আমাজন নদী। এর প্রায় ১,১০০টি উপনদী আছে যার মধ্যে ১৭টির দৈর্ঘ্য ১০০০ মাইলের বেশি। এ নদ আমাজন অঞ্চলের প্রাণিবৈচিত্র্যের প্রধান উৎস 

বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ মিঠাপানির যোগান দেয় এই নদী। যা মোট পরিমানের ২৫ শতাংশ প্রায়। দীর্ঘতম নদীর দিক থেকে দ্বিতীয় হলেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশী পানি বহন করে এই নদী। বলা হয়ে থাকে, যেখানে আমাজন নদীর পানি সাগরে মিলিত হয় সেখানে সাগরের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরের লবনাক্ত পানিও মিঠা পানি হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে এ নদের মুখ  প্রায় ৩০০ মাইল চওড়া থাকে।

এই বনে ৩০০শ এর বেশি উপজাতি বাস করে। মোট ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০লাখেরও বেশি। তারা বেশির ভাগ ব্রাজিলীয়। এছাড়া তারা পর্তুগীজ, স্প্যানিস ভাষায়ও কথা বলে। এছাড়াও এদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু যাযাবর। এদের বহিঃবিশ্বের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই।

গবেষকদের মতে, এই বন প্রতি বছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। সে কারণে একে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে ডাকা হয়। তবে স্থানীয় অনেক সংস্থার অভিযোগ, সরকারি আইন অমান্য করে ব্রাজিলে  বন উজাড়ের হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির স্পেস এজেন্সির তথ্য মতে, ২০১৯ সালের এপ্রিলের তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে বন উজাড়ের হার ৬৪ ভাগ বেশি। 

ফলাফল স্বরূপ এ বছরের প্রথমার্ধে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে অ্যামাজনের বন উজাড়ের হার ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এদিকে ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট স্পেস রিসার্চের তথ্য মতে, গেল এপ্রিল মাসে প্রায় ৪০৫ বর্গকিলোমিটার বন নিঃশেষ হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে যার পরিমাণ ছিল ২৪৮ বর্গকিলোমিটার। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে উজাড় হয়েছে ১ হাজার ২০২ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল।


YouTube Video Link 

রহস্যময় আমাজন বন | কি আছে এই আমাজনের গহীনে? Amazon: Largest Rainforest In The World |

রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

পৃথিবীতে যতগুলো রহস্যময় স্থান আছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল।সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কথা। আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কোন জাহাজ বা প্লেন গেলে নাকি আর ফিরে আসেনা, এখানে গেলে সবকিছু উধাও হয়ে যায় অথবা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।


বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কোথায়;

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বা শয়তানের ত্রিভুজ একদম ঠিকঠাক আটলান্টিক মহাসাগরের কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। একদল মানুষের মতে, এই ত্রিভুজ এলাকাটির এক প্রান্ত হলো পুয়ের্তো রিকোয়, আরেক প্রান্তে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বাহমা ও ফ্লোরিডার দক্ষিণাংশে, আর অন্য প্রান্তে হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ। কেউ কেউ আবার এসব জায়গার সাথে মেক্সিকো উপসাগরকেও যুক্ত করেন।তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডার দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা।


কেমন করে আবিষ্কৃত হলো এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ? :

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম ১৪৯২ সালে এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন তার জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন।

১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ই. ভি. ডব্লিউ. জোন্স সর্বপ্রথম এ ত্রিভুজ নিয়ে খবরের কাগজে লিখেন। এর দু বছর পর ফেইট ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড “সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর” শিরোনামে একটি ছোট প্রবন্ধ লিখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভূজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন।

১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যগাজিনে লিখা হয়। বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলপতি কে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে- "আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই"। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস The Deadly Bermuda Triangle নামে আর এক কাহিনী লিখেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে।এই কাহিনীতে তিনিই প্রথম বারমুডা-ট্রায়াঙ্গেল শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লিখেন "ইনভিজিবল হরাইজন" (Invisible Horizons) নামের বই। এছাড়া আরও অনেকেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে এই এলাকায় যে অতি প্রাকৃতিক কোন কিছু অস্তিত্ব রয়েছে সেটাই উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।


কেন এত রহস্যে মোরা এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ? :

যখনই কোন বিমান বা জাহাজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এ গিয়েছে , তখনই সে গুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যায় কিংবা সেখান থেকে যদি ফিরেও আসে, তবুও মুখোমুখি হয় অদ্ভুত সব ঘটনার। কিছু ঘটনার কারনে এই রহস্য যেন আরো গভীর হয়ে উঠেছে।

মারি সেলেস্ত নামের একটি মালবাহী জাহাজ, ১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর, নিউইয়র্ক বন্দর থেকে রওনা হয়। অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরও জাহাজটি যখন গন্তব্যে পৌঁছায়নি, তখন শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অনেক চেষ্টার পর জাহাজটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় খুঁজে পাওয়া গেল ভাসমান অবস্থায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো জাহাজে সব মালপত্র, খাবার দাবার সবকিছু একদম অক্ষত ছিল, শুধুমাত্র ১১ জন কর্মী উধাও!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, মার্কিন সরকার ব্রিটিশদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএস সাইক্লোপস নামক একটি জাহাজ পাঠায়। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জাহাজটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছে এসে কোন চিহ্ন না রেখেই উধাও হয়ে যায় এর সাথে থাকা ৩০৬ জন ক্রু নিয়ে।ঠিক একই ভাবে একই জায়গা থেকে ১৯৪১ সালে গায়েব হয়ে যায় ইউএসএস প্রটিয়াস ও ইউএসএস নিরিয়াস নামের দুটি জাহাজ।

তবে জাহাজের ঘটনা গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো, মেরিন সালফার কুইন নামক জাহাজটির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি। ১৫ হাজার টন গলিত সালফার আর ৩৯ জন ক্রু নিয়ে ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে রওনা হয় জাহাজটি। ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখে জাহাজটি যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থান করছিল তখন হঠাৎ রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হয়ে যায়, অথচ অফ হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেও কমান্ডার বলছিলেন “কত সুন্দর আবহাওয়া ! কী চমৎকারভাবে নেভিগেশন চলছে !” এর পরপরই হঠাৎ করেই ৬০০ ফুটের বিশাল আকৃতির জাহাজটি একেবারে গায়েব হয়ে যায়।

এ তো গেল জাহাজের কথা, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে আজ পর্যন্ত যা কিছু হারিয়ে গিয়েছে তার মাঝে সবচেয়ে বিস্ময়কর ও আলোচিত হল “ফ্লাইট নাইনটিন” নামক পাঁচটি বিমানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে, ইউএস নেভির সেরা ৫ জন অ্যাভেঞ্জার বম্বার একটি প্রশিক্ষণ মিশনের জন্য রওনা হয়। রেডিওতে পাইলট বেজের সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলছিলেন লেফটেন্যান্ট চার্লস টেলর। কিন্তু বিমান গুলো যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলএ অবস্থান করছিল তখন কথা বলার একপর্যায়ে, পুরো বাক্য শেষ করার আগেই হঠাৎ চুপ হয়ে যায় সবকিছু, হঠাৎ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সব! সেই ৫ বিমানের সন্ধান আজও মেলেনি।


অবশেষে সমাধান হলো রহস্যের :

বারমুডা রহস্য উদঘাটন করার জন্য বিজ্ঞানীরা কম চেষ্টা করেননি বরং এখনও চলছে গবেষণা। প্রচুর গবেষণার পর ২০১৬ সালের ৪ মার্চ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে, যার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩০০ টির মত জাহাজ আর ৭৫ টির মত বিমান নিখোঁজ হয়েছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে।

তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, এই সব ঘটনার পেছনে অতিপ্রাকৃতিক কোন কারণ নেই। বরং বৈরী আবহাওয়া, মানবঘটিত ভুল আর দুর্ভাগ্যের কারণে আসলে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। তারা যুক্তি দেখান যে, এই অঞ্চল আর দশটা সাধারণ দুর্ঘটনা প্রবণ অঞ্চলের থেকে আলাদা কিছু না।

সত্যি বলতে ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চলাচলের জন্য, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পথেই পড়ে। তাই প্রতিদিনই অনেক জাহাজ আর বিমান কে ওই পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বেশি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার খবর গুলো একটু বেশিই শোনা যায়।

১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয় Larry kusche এর “The Bermuda Triangle Mystery : Solved “ বইটি। যুক্তিতে ভরপুর এই বইটিতে দেখানো হয়েছে যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বেশিরভাগ গল্পই ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত। প্রমাণ সহকারে ল্যারি দেখান যে, বারমুডার বেশিরভাগ প্রচলিত দুর্ঘটনাই আসলে সেখানে নয় বরং অন্য কোথাও ঘটেছে। আর ট্রপিক্যাল সাইক্লোন প্রবণ অঞ্চলে জাহাজডুবি তো স্বাভাবিক ঘটনা।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের অনেকখানি কিনারা করা গেলেও, একে নিয়ে এখনও নতুন নতুন গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়নি। হবেই বা কেন? সাহিত্য আর মিডিয়ার অর্থোপার্জনের অনেক বড় একটা পুঁজি এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। যেহেতু কিছু রহস্যের আজও সমাধান হয়নি, তাই এখনো একে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।


YouTube Video Link 

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের আসল রহস্য !! বাস্তবে কি আছে এখানে? Mystery Behind The Bermuda Triangle.

আমাজন নদী , বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট আমাজন বনের ভেতরেই আছে আয়তনে পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম আমাজন নদী। একটা নদীর দৈর্ঘ্য কতই বা হতে পারে, ১০০০ বা ২০০০ কিলোমিটার? কিন্তু নদীটির দৈর্ঘ্য তার চেয়েও অনেক বেশি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার।এই নদীর প্রস্থ ১৯০ কিলোমিটার বা ১২০ মাইল পর্যন্তও হয়ে যায় কখনও কখনও।এর প্রায় ১,১০০টি উপনদী রয়েছে, যার মধ্যে ১৭টির দৈর্ঘ্য ১০০০ মাইলের বেশি। এ নদী আমাজন অঞ্চলের প্রাণিবৈচিত্র্যের প্রধান উৎস।


 স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজরা নদীটিকে এখন রিও আমাজনাস নামে ডাকে আর ইংরেজি অর্থ হলো আমাজন। এ নদী এতোই দীর্ঘ যে এটি গায়ানা, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া এবং পেরুতেও প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীর মুল উৎস হলো পেরুর অ্যান্ডিস পর্বতমালা। এটি নীলনদের (এটি প্রায় ৬৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ) পরে  বিশ্বের ২য় বৃহত্তম নদী।



আমাজন নদী দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৩০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে তিনটি দেশ বি পাড়ি দিয়ে হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই নদী যে পরিমাণ জল ধারণ করে তা বিশ্বের যেকোন নদীর তুলনায় বেশি। আমাজন নদী যেখানে সাগরে গিয়ে মিশেছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘন ফুট পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে এই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭ মিলিয়ন ঘন ফুট।


এটি গড়ে প্রায় ২,০৯,০০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ড (৭৪,০০,০০০ ঘনফুট/সে) বহন করে সাগররে দিকে নিয়ে যায়, যা এর পরবর্তী সাতটি সম্পূর্ণ ভিন্ন নদীর পানির সমান। আমাজন নদী মোট বৈশ্বিক জলের প্রায় ২০ ভাগ জল সমুদ্রে বহন করে। আমাজনের অববাহিকা হল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পানি নিষ্কাষনকারী অববাহিকা।

বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ মিঠাপানির যোগান দেয় এই নদী। যা মোট পরিমানের ২৫ শতাংশ প্রায়। দীর্ঘতম নদীর দিক থেকে দ্বিতীয় হলেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশী পানি বহন করে এই নদী। বলা হয়ে থাকে, যেখানে আমাজন নদীর পানি সাগরে মিলিত হয় সেখানে সাগরের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরের লবনাক্ত পানিও মিঠা পানি হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে এ নদের মুখ  প্রায় ৩০০ মাইল চওড়া থাকে।

 এ নদের আয়তন আমেরিকার সবচেয়ে বড় নদী মিসিসিপির আয়তনের ১১ গুণ।বর্ষা মৌসুমে এ নদের মুখ আটলান্টিকের সঙ্গে যেখানে মিলিত হয় প্রায় ৩০০ মাইল চওড়া থাকে।এ নদের পানি প্রবাহের গতি এত বেশি যে, আটলান্টিকে প্রবেশের পর তা লোনা পানির সঙ্গে মেশার আগেই সমুদ্রের বুকে ১২৫ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে।৫। প্রতিদিন ১০৬ মিলিয়ন ঘনফুট পলিমাটি আমাজনের পানির সঙ্গে আটলান্টিকে গিয়ে পড়ছে।

নদী মানেই সেখানে মাছের বসবাস। সেই নদী যদি হয় পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম নদী, তাহলে তো মাছের রাজত্ব থাকার কথা। আমাজন নদীতে সত্যিকার অর্থেই মাছের রাজত্ব আছে। এই আমাজন নদীতেই আছে পৃথিবীর ২০ শতাংশ মাছ।

এখন পর্যন্ত এখানে প্রায় ৩০০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই আরও নতুন নতুন প্রজাতির মাছ আবিষ্কার করে চলেছে। আমাজনের অগভীর জলের মাঝে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ অ্যানাকোন্ডা।

শুধু অ্যানাকোন্ডাই নয়, আমাজনে লুকিয়ে থাকা আরেকটি মাংসাশী মাছের নাম পিরানহা। পিরানহা বেশ ভয়ঙ্কর। নদীতে নামা শিকারকে এরা একইসাথে দলবেঁধে আক্রমণ করে। বলা হয় কোনো জীবিত প্রাণী পিরানহার ঝাঁকের আক্রমণের শিকার হলে কিছুক্ষণ পরে সেখানে শুধু ঝকঝকে নতুন কংকাল পাওয়া যায়।

YouTube Video Link:




Dead Sea । মৃত সাগর কি? এখানে কেন মানুষ ভেসে থাকে ?


‘ডেড সি’ নাম শুনলেই গা কেমন ছমছম করে ওঠে! মনে হয়, মৃত লোকদের এক সাগর,যেখানে ভাস লাশ! আসলে বিষয়টি কিন্তু মোটেও ভয়ংকর নয়; বরং ‘ডেড সি’ ভীষণ সুন্দর, ভ্রমণে যাওয়ার জন্য চমৎকার এক জায়গা। এই ‘ডেড সি’র পানি এতটাই ঘন যে ওই পানিতে কেউ চাইলে শুয়েও থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, চাইলে  ওই পানি শুয়ে বইও পড়া যায়। কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে নেট ব্রাউজও করা যাবে।সব কিছু যদি নরমাল হয় তাহলে এর নাম  ‘ডেড সি’ হলো‌ খেন?"

বাংলায় ‘মৃত সাগর’কে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডেড সি’ ।ডেড সির পশ্চিমে পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েল, পূর্বে জর্ডান অবস্থিত।এই সাগরের পানির প্রধান উৎস জর্ডান নদী। মৃত সাগরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার আর গভীরতা ১.২৪০ ফুট। এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে নীচু স্থান বা স্থলভূমি। মৃত সাগর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার বা ১ হাজার ৩৭৮ ফুট নিচে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ২০ লাখ বছর আগে এ সাগরের উৎপত্তি। জর্দান নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হলেও ডেডসি মূলত একটি হ্রদ।


কেন এই সাগরে মানুষ ভেসে থাকে বা ডোবেনা?

জিবুতির আসাল হ্রদের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত হ্রদ।

এর লবণাক্ততা শতকরা ৩০% এবং এটি সমুদ্রের পানির চাইতে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত।উচ্চ লবনাক্ততার দরুন যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে । এই আচরণ যুক্তরাষ্ট্র-এর ইউটাতে অবস্থিত গ্রেট সল্ট লেক এর মত।


স্বাস্থ্যগত প্রভাব

উচ্চ বায়ুমন্ডলীয় চাপ , শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য বেশ উপকারী ডেড সির পরিবেশ।চর্মরোগ সোরিয়াসিস( psoriasis) এর জন্য দীর্ঘসময় সূর্যস্নান বেশ উপকারী । এই অঞ্চলের অতি বেগুনি রশ্মির স্বল্পতা সূর্যস্নানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে । এছাড়া রোগটি নিরাময়ে জন্য মৃত সাগরের লবণও বেশ উপকারী বলে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণায় দাবী করা হয়েছে।


জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহাসাগরের পানির তুলনায় ডেড সির পানিতে মিশে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর পার্থক্য রয়েছে। মৃত সাগরের পানিতে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে।মৃত সাগরের পানির ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। এই সকল উপাদানের কারণে ডেড সি’র পানির প্লবতা শক্তি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের পানির চেয়ে অনেক বেশি। 


প্লবতা শক্তির কারণে এই সাগরে কোনো কিছু ডুবে না। যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে এই হ্রদটি মিশরের মমি তৈরির জন্য, সার উৎপাদনের জন্য পটাশসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই হ্রদ থেকে প্রাপ্ত লবণ ও খনিজ পদার্থ বিভিন্ন প্রসাধনী ও সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


ডেড সি’তে কোনো মাছ নেই, কারণ এই সাগরের পানিতে কোনো মাছ বাস করতে পারে না। তেমনিভাবে এর পাশে জর্ডান নদীতেও কোনো মাছ নেই। এই সাগরের পানিতে কোন উদ্ভিদ বা মাছ বাচতে পারে না বলেই মূলত এই সাগরকে ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। এই সাগরের পানিতে শুধুমাত্র সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায়। ডেড সি তীরবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে উট, খরগোশ, খেঁকশিয়াল এমনকি চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। অতীতে জর্ডান নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে প্যাপিরাস এবং পাম গাছে সমৃদ্ধ বনভূমি ছিল।


মৃত সাগর দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং সত্যি সত্যিই মারা যাচ্ছে।

তিরিশ বছর আগে যখন ইজরায়েলের এনগেডি রিজর্টটি তৈরি হয়েছিল তখন ডেড সির পানি ছিল তার দেয়ালের গা ঘেঁষে.

কিন্তু এখন এই সমুদ্র এত দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে যে তার পানি দেখতে হলে পর্যটকদের জন্য তৈরি ট্রেনে করে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২ কিলোমিটার পথ।কিন্তু কেনো মৃত্যু ঘটছে ডেড সির?কারণটা হলো যে জর্ডান নদী থেকে এখানে পানি আসে, সেই নদীর পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


যদিও ডেডসির সমস্যা সমাধানের একটি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।সেটা হলো, লোহিত সাগর থেকে মরুভূমির ওপর দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করে ডেডসিতে পানি আনা।যেই প্রকল্পটি হবে অনেক ব্যয়বহুল। তবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ডেডসি হয়তো তার প্রান কিছুটা ফিরে পাবে।

YouTube Video Link :

Dead Sea । মৃত সাগর কি? এখানে কেন মানুষ ভেসে থাকে ? Why Does Everyone Float In Dead Sea?

ঘূর্ণিঝড়ের নাম কিভাবে রাখা হয়?

প্রতিবছর বঙ্গপসাগরে বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।এর মধ্যে কিছু ঝড় নিম্নচাপ হয়ে আশপাশের দেশ যেমন ভারত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভূখণ্ডে আঘাত এনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, কিছু ঝড় আবার লঘুচাপ হয়ে সামান্য বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে কেটে যায়।যে নিম্নচাপ গুলো ভূখন্ডে আঘাত আনার সম্ভবনা থাকে তাদেরকে বিভিন্ন নাম দেয়া হয়।এই নাম গুলোর দেখে আমাদের মনে কৌতুহল জাগে কে কিভাবে এই নামগুলো দেয়। আমাদের আজকের এই পর্বে জানবো বঙ্গপসাগরে তৈরি হওয়া ঝড়ের নাম কিভাবে দেয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড় (Cyclone)  ঘূর্ণিঝড় হলো গ্রীষ্মমন্ডলী ঝড় বা বায়ুমন্ডলীয় একটি উত্তাল অবস্থা যা বাতাসের প্রচন্ড ঘূর্ণায়মান গতির ফলে সংঘটিত হয়। এটি সাধারণ  প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের একটি। পৃথিবীর ৩০º উত্তর এবং ৩০º দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। 

দক্ষিণ আটলান্টিক এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর ব্যতীত পৃথিবীর বাদবাকি গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাগরাঞ্চল যে মারাত্মক বায়ুমন্ডলীয় দুর্যোগসমূহ জন্ম দেয় তা সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে গড়ে ৮০টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।   



ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকা আবশ্যক এবং কমপক্ষে ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত এ তাপমাত্রা থাকতে হয়।এজন্য আমরা দেখি সাধারণত কর্কট ও মকর ক্রান্তিরেখার কাছাকাছি সমুদ্র গুলিতে গ্রীষ্মকালে বা গ্রীষ্মের শেষে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। অন্য কোথাও হয় না। 

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটিই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডকে নিয়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্যানেল বা কমেটি আছে যার নাম হচ্ছে 'স্কেপে'।উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করা হয় এই ৮ টি দেশের আগে থেকেই প্রস্তাব করা নামগুলো থেকে।

২০০০ সালে স্কেপের প্রস্তাবানুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা নেওয়া হয়, এবং এখান থেকেই পরবর্তীতে সব ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা শুরু হয়।উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের সকল তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষন এবং পূর্বাভাসের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগকে।তারাই ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওই ৮টি দেশের প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে সবার সাথে সম্বন্বয় করে ঘূর্ণিঝড়ের একটি নাম বেছে নেয়।

একের পর এক সৃষ্ট ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের পাঠানো নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয়। বেশ কিছুদিন আগের ঘূর্ণিঝড় 'তিতলি' নামটি পাকিস্তানের প্রস্তাব করা ছিল।ঘূর্ণিঝড় তিতলির একই সময়ে আরেকটি ঘূণিঝড় হয়েছে ওমানের দিকে, যার নাম লুবান। এই নামটি ওমান নিজেই প্রস্তাব করেছিল। এরপূর্বে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং আইলার নাম রেখেছিল যথাক্রমে ওমান এবং মালদ্বীপ।

অনেক সময় আমাদের মনে হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন মেয়েদের নামে করা হয়। আসলে সব সময় যে মেয়েদের নামে ঝড়ের নাম রাখা হয় তা কিন্তু না। নারী.পুরুষ এবং বস্তুগত নাম মিলিয়েই ঝড়ের নাম রাখা হয়।যেমন-সিডর,মহাসেন,কোমেন, মুরা,রুয়ানো, হুদহুদ ইত্যাদি।

বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব করা নামগুলো হলো - অনিল, অগ্নি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, ফণী। মেয়েদের নামের সাথে মিলাতে গেলে এখানে ৩ টি নাম আছে মেয়েদের।পাকিস্তানের প্রস্তাব করা ৮টি নামের মধ্যে ৭টিই মেয়েদের নাম। যেমন নিলুফার, তিতলী, নার্গিস, লায়লা, কেইলা, ভারদা, নিলাম।এখন বুঝেন মেয়েদের নামে কেন ঝড়ের নাম বেশি হয়। 

ঝড় বা ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে তিনটি তিনটি তথ্য! 

⛔সাইক্লোন:মূলত দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর হতে উৎপন্ন ঝড়কে সাইক্লোন বলা হয়। 

⛔হ্যারিকেন: উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর এবং অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড় সমূহকে বলা হয় হ্যারিকেন।

⛔টাইফুন: চীন ও জাপান সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপন্ন ঝড়কে টাইফুন বলা হয়। চীনা টাই-ফেং শব্দের অর্থ হলো ‘প্রচণ্ড বাতাস’।


পাপের শহর লাস ভেগাস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হচ্ছে লাস ভেগাস। সারা বিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। এই শহরকে মনোরঞ্জনের রাজধানীও...